—ফাইল চিত্র
রবীন্দ্র সরোবরের মতো জাতীয় জলাশয়ে পলি মাটি তোলা নিয়ে অনেক দিন আগেই বিতর্ক দানা বেঁধেছিল।
কারণ, জলাশয়ের নীচ থেকে সব পলিমাটি তুললে পরবর্তী কালে জল ধারণের সমস্যা হতে পারে বলে আশঙ্কা করেছেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের একাংশ। এমনকি, পরিবেশ আদালত মনোনীত বিশেষজ্ঞ কমিটির রিপোর্টেও উল্লেখ রয়েছে মেশিনের মাধ্যমে ‘ড্রেজিং’ করে সরোবরের পলি তোলা যাবে না। শুধু পলিমাটির উপরের অংশ তুলে ফেলা যেতে পারে। সেই কারণেই কেএমডিএ কর্তৃপক্ষ পলি তোলার পরিকল্পনা থেকে হাত গুটিয়ে নিয়েছিল।
কর্তৃপক্ষের দাবি, সরোবরে আবর্জনা বেশি হওয়ায় রিপোর্টের নির্দেশিকা মেনেই সম্প্রতি জলাশয়ের সব পলিমাটি না তুলে, সরোবরের পাড় বরাবর মাত্র তিন মিটার পর্যন্ত এলাকায় যেখানে আবর্জনা বেশি জমা হয়, সেই অংশটুকুর উপরিভাগের মাটি তুলে ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তার জন্য দরপত্রও ঘোষণা করেছেন কেএমডিএ কর্তৃপক্ষ।
আধিকারিকদের মতে, বর্তমানে সরোবরে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ভাসমান বর্জ্য তো বটেই, এমনকি জলের নীচে মাটির ঠিক উপরের আস্তরণে থাকা কঠিন বর্জ্যও জাল ব্যবহার করে তা তুলে ফেলা হচ্ছে। শীতকালে বা গ্রীষ্মকালে জল কমে গেলে অনেক বর্জ্য পাড়ের ঠিক মুখে বা কিছু দূরত্বে মাটির উপরে আটকে থাকে। ফলে, মাটি না
তুললে সেগুলি সরানোর ক্ষেত্রে সমস্যা হয়। জলে দূষণ হতে পারে বলেও কর্তৃপক্ষের দাবি।
সরোবরের তলদেশের পলি সরানোর ক্ষেত্রে সমস্যা কোথায়? পরিবেশকর্মী ও বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি, শহরের জলতল অনেক নীচে নেমে গিয়েছে। বহু বছর ধরে সরোবরের তলদেশে পলি জমে আস্তরণ তৈরি করেছে। তার ফলে জলাশয়ের জল মাটির তলায় প্রবেশ করতে পারবে না। কিন্তু এই পলি (পাঁক) তুলে ফেলা হলে সরোবরের জল তলদেশের ছিদ্র দিয়ে ভূগর্ভের ফাঁকা অংশে প্রবেশ করবে। সে ক্ষেত্রে জলাশয়ে জলের সমস্যা হতে পারে। শহরের বিভিন্ন এলাকায়, বিশেষত দক্ষিণ কলকাতায় কয়েকটি পুকুরের তলদেশে পলি সংক্রান্ত সমস্যা হওয়ায় সেখানে জল থাকছে না বলে বিশেষজ্ঞদের প্রাথমিক অনুমান।
কলকাতা পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, গল্ফ গার্ডেন ও বাঁশদ্রোণীর দু’টি বড় জলাশয়ে জল নেই। একই রকম ঘটনা ঘটেছে খিদিরপুর এলাকার একটি জলাশয়েও। পুর কর্তৃপক্ষের ব্যাখ্যা, জলাশয়ের নীচে পলি বা পাঁকের (বায়োমাস) যে আস্তরণ থাকে তা জল ধরে রাখতে সাহায্য করে। জল না থাকার জন্য পলির অভাবকেই প্রাথমিক ভাবে দায়ী করছে পুরসভাও।
কলকাতা পুরসভার জল দফতরের প্রাক্তন ডিরেক্টর জেনারেল তথা ভূগর্ভস্থ জল বিশেষজ্ঞ বিভাস মাইতি বলেন, ‘‘এখন শহরের ভূগর্ভস্থ জলের আস্তরণ প্রায় ৩৫ ফুট নীচে নেমে গিয়েছে। জলাশয়ে বায়োমাস যে আস্তরণ তৈরি করে তা মাটির ছিদ্রকে আটকে রাখার ফলে জল নীচে চলে যায় না। কিন্তু কোনও কারণে ওই আস্তরণ না থাকলে বা পাতলা হয়ে গেলে সমস্যা হতে পারে। জল চুঁইয়ে চুঁইয়ে নীচে নেমে যেতে পারে। শহরের অনেক জায়গাতেই তা হয়েছে। রবীন্দ্র সরোবরের পলি তোলার ক্ষেত্রেও একই যুক্তি মানা উচিত।’’ তিনি জানান, জলাশয়ে ‘বায়োমাস’ না থাকলে শালুক বা পদ্মের মতো ফুলও ফুটবে না।