(বাঁ দিকে) কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে জরুরি বিভাগের সামনে মোবাইলে ব্যস্ত পুলিশ ও রক্ষীরা। এসএসকেএমের ট্রমা কেয়ারের সামনে রয়েছেন দুই পুলিশকর্মী (ডান দিকে)। শনিবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী।
কোনও হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে নিরাপত্তার দায়িত্বে এক জন কনস্টেবল। সঙ্গে বেসরকারি সংস্থার দুই নিরাপত্তারক্ষী। কোনও হাসপাতালে আবার এক জন এএসআই এবং এক জন কনস্টেবলের সঙ্গে রয়েছেন দু’জন সিভিক ভলান্টিয়ার। কোনও হাসপাতালে সেটুকুও চোখে পড়ছে না। কোথাও ক্যামেরা দেখে তড়িঘড়ি কয়েক জন জরুরি বিভাগের সামনে এসে দাঁড়াচ্ছেন। জানাচ্ছেন, ‘‘দুপুর তো, ভিড় কম। তাই একটু বাইরে জিরিয়ে নিচ্ছিলাম।’’
আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ভিতরেই কর্তব্যরত অবস্থায় এক চিকিৎসক-ছাত্রীকে খুন এবং ধর্ষণের ঘটনার পরে হাসপাতালগুলির নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়া জুনিয়র চিকিৎসকেরা ঘটনার সুবিচার-সহ একাধিক দাবির সঙ্গে হাসপাতালের নিরাপত্তা বাড়ানোর দাবিও তুলেছেন। ইতিমধ্যেই সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ঘটনাস্থল আর জি করে নিরাপত্তার জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি, শহরের বাকি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলিতেও নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে, এমনই দাবি করা হয়েছে প্রশাসনের তরফে। যদিও ঘটনার তিন সপ্তাহ পরে শহরের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ঘুরে উঠে এল ঢিলেঢালা নিরাপত্তার দিকটিই।
শনিবার বেলার দিকে এসএসকেএম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেল, জরুরি বিভাগের সামনে রয়েছেন এক জন পুলিশকর্মী। আউটপোস্টে দরজা বন্ধ করে রয়েছেন আরও কয়েক জন। জরুরি বিভাগের সামনে কর্তব্যরত, মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত পুলিশকর্মীর পাশে বসে বেসরকারি সংস্থার তিন নিরাপত্তারক্ষী। তাঁদের সামনে দিয়েই ইচ্ছে মতো চলছে যাতায়াত। কে রোগী বা কে পরিজন, আর কে বিনা কারণে ঢুকছেন, তা জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে না কাউকেই। একই অবস্থা ওই হাসপাতালের ট্রমা কেয়ারের সামনেও। সেখানে দু’-তিন জন পুলিশকর্মী থাকলেও চোখে পড়ে তাঁদের ঢিলেঢালা মেজাজই।
এন আর এস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ঘুরেও চোখে পড়েছে কয়েক জন মাত্র পুলিশকর্মী ও নিরাপত্তারক্ষীকে। শনিবার দুপুরে এন আর এসের জরুরি বিভাগের সামনে পৌঁছতে প্রথমে কোনও পুলিশকর্মীকে দেখা যায়নি। কিছু পরে দু’জন এসে বেসরকারি নিরাপত্তারক্ষীর সঙ্গে দাঁড়ালেন। তবে ওই হাসপাতালের অন্যত্র পুলিশকর্মীদের দেখা গিয়েছে। তাঁদের কেউ পার্কিং সামলাচ্ছিলেন, কেউ চেয়ারে বসে ছিলেন। ন্যাশনাল মেডিক্যালে জরুরি বিভাগের সামনে পুলিশ থাকলেও বহির্বিভাগ ছিল ফাঁকা। এমনকি, রোগী ভর্তি থাকা ওয়ার্ডগুলিতেও পুলিশকর্মী থাকে না বলে দাবি করেন এক নিরাপত্তারক্ষী।
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে দুই পুলিশকর্মীর সঙ্গে দু’জন সিভিক ভলান্টিয়ারকে দেখা গিয়েছে। যদিও হাসপাতালের বাকি অংশ কার্যত ছিল অরক্ষিত। ওই বিভাগের ভিতরে বসে থাকা বেসরকারি সংস্থার এক নিরাপত্তারক্ষীরও তেমন হেলদোল ছিল না। এই হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে কয়েক পা দূরেই আন্দোলনরত চিকিৎসকদের এক জন বললেন, ‘‘বার বার বলা হচ্ছে, নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু কোথায় কী? এটাকে কি আদৌ নিরাপত্তা বাড়ানো বলে?’’
লালবাজারের যদিও দাবি, শহরের প্রতিটি হাসপাতালে নিরাপত্তায় জোর দেওয়া হয়েছে। ডিভিশনগুলি থেকে সব হাসপাতালে প্রতি শিফটে অতিরিক্ত বাহিনী পাঠানো হচ্ছে। রোগীর চাপ অনুযায়ী প্রতি শিফটে কোথাও দশ জন, কোথাও তারও বেশি পুলিশকর্মী পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া, পুলিশের টহলদারি অফিসারও হাসপাতালে ঘুরছেন। লালবাজারের এক কর্তা জানান, ইতিমধ্যেই তাঁরা বৈঠক করে নিরাপত্তা বাড়াতে কোন কোন জায়গায় সিসি ক্যামেরা ও নিরাপত্তাকর্মী দরকার, তা খতিয়ে দেখেছেন। সেই মতো কাজও শুরু হয়েছে। ওই কর্তার কথায়, ‘‘২৪ ঘণ্টা প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজে অতিরিক্ত বাহিনী থাকছে। সিসি ক্যামেরার নজরদারিতেও জোর দেওয়া হয়েছে। আরও কী করা যায়, দেখা হচ্ছে।’’