আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। —ফাইল চিত্র।
নিহত চিকিৎসক, সেই রাতে কর্তব্যরত এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগে উপস্থিতদের মোবাইল ফোন— আর জি কর হাসপাতালে খুন ও ধর্ষণের ঘটনায় সিবিআইয়ের তদন্তকারীদের কাছে অন্যতম হাতিয়ার এগুলি। তদন্তকারীদের সূত্রে খবর, ৮ অগস্ট রাত থেকে ৯ অগস্ট সন্ধ্যা পর্যন্ত হাসপাতালে চেস্ট ডিপার্টমেন্টে যাতায়াতকারী সকলের মোবাইলের ‘কল ডিটেলস’ এবং ‘টাওয়ার লোকেশন’ পরীক্ষা করা হচ্ছে। বিশেষ প্রযুক্তির মাধ্যমে ওই রাতে কর্তব্যরত জুনিয়র-সিনিয়র চিকিৎসক, নিরাপত্তা কর্মী এবং নার্সদের অবস্থান মোবাইল থেকে নিশ্চিত ভাবে জানার চেষ্টা চলছে।
তদন্তকারীদের কথায়, মোবাইল ফোনগুলির অবস্থান কোথায়, কখন ছিল, তা নির্দিষ্ট ভাবে ওই প্রযুক্তির মাধ্যমে উঠে আসছে। তদন্তকারীদের দাবি, ‘টাওয়ার লোকেশন’ যাচাইয়ের মাধ্যমে নিহত চিকিৎসকের গতিবিধি, তাঁর সহপাঠী ও সহকর্মীদের অবস্থান এবং অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়ের অবস্থানের চিত্র ধীরে ধীরে স্পষ্ট হচ্ছে। তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, এখনও পর্যন্ত প্রায় ১২৫টির বেশি মোবাইল নম্বরে টাওয়ার লোকেশনের সূত্র পর্যবেক্ষণ করেছেন তদন্তকারী দলের চার জন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ।
প্রাথমিক ভাবে ওই রাতে হাসপাতালে কর্তব্যরতদের মোবাইল ফোন পরীক্ষা করাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। এবং তার ভিত্তিতে কর্তব্যরত জুনিয়র-সিনিয়র চিকিৎসক, নার্স, নিরাপত্তারক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। সিবিআইয়ের এক কর্তা বলেন, “ওই রাতের প্রায় সব কর্তব্যরতকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। টাওয়ার লোকেশন অনুযায়ী অবস্থান এবং তাঁদের বয়ান পরস্পরবিরোধী হওয়ায় চার জন চিকিৎসক, দু’জন নিরাপত্তাকর্মী এবং সঞ্জয় রায় ও সন্দীপ ঘোষের পলিগ্রাফ টেস্ট করা হয়েছে। আরও কয়েক জনের টাওয়ার লোকেশন ও বয়ানে অসঙ্গতি ধরা পড়েছে। তাঁদের একাধিক বার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে, প্রয়োজনে পলিগ্রাফ টেস্ট হবে।”
ঘটনার রাতে ওই চিকিৎসক চার সহপাঠীর সঙ্গে সেমিনার হলে খাওয়াদাওয়ার পরে অলিম্পিক্সে নীরজ চোপড়ার জ্যাভলিন থ্রো দেখেছিলেন এবং তার পরে সেমিনার হলেই বিশ্রাম নিচ্ছিলেন বলে কলকাতা পুলিশের তরফে দাবি করা হয়েছিল। কিন্তু তরুণী চিকিৎসক সেমিনার হলে আদৌ জীবিত ছিলেন কি না, চার সহপাঠী ওই সময়ে তাঁর সঙ্গে ছিলেন কি না, তা ওই প্রযুক্তির মাধ্যমে মোবাইলের অবস্থান থেকে যাচাইয়ের চেষ্টা হচ্ছে। সিবিআইয়ের এক কর্তা বলেন, “এই পরীক্ষা সময়সাপেক্ষ। সব দিক নজরে রেখে আদালতগ্রাহ্য প্রমাণ জোগাড় হচ্ছে। তথ্যপ্রমাণ লোপাট, পুলিশের গাফিলতি, ময়না তদন্তে অসঙ্গতি, সাম্প্রতিক তদন্তের রিপোর্ট আদালতে পেশ হবে।”