অগ্নি-নিরাপত্তা কতটা মজবুত, প্রশ্নে পুরসভা

কলকাতা পুরসভার ঢিলছোড়া দূরত্বে নিউ মার্কেট চত্বরে অগ্নিসুরক্ষা ব্যবস্থা যে কত ঢিলেঢালা, তা ফের বুঝিয়ে দিল হগ মার্কেট আলুপট্টির অগ্নিকাণ্ড। সোমবার দুপুরে কিছুক্ষণের মধ্যেই পুড়ে ছাই হয়ে যায় সেখানকার গোটা পঞ্চাশেক দোকান। তার পর থেকেই প্রশ্ন উঠছে, বাজারে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল তো? কতগুলি অগ্নি নির্বাপণ যন্ত্র ছিল সেখানে? আগুন নিয়ন্ত্রণে সেগুলি কতটা কাজ করেছে?

Advertisement

অনুপ চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০১৫ ০৩:১৬
Share:

কলকাতা পুরসভার ঢিলছোড়া দূরত্বে নিউ মার্কেট চত্বরে অগ্নিসুরক্ষা ব্যবস্থা যে কত ঢিলেঢালা, তা ফের বুঝিয়ে দিল হগ মার্কেট আলুপট্টির অগ্নিকাণ্ড। সোমবার দুপুরে কিছুক্ষণের মধ্যেই পুড়ে ছাই হয়ে যায় সেখানকার গোটা পঞ্চাশেক দোকান। তার পর থেকেই প্রশ্ন উঠছে, বাজারে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল তো? কতগুলি অগ্নি নির্বাপণ যন্ত্র ছিল সেখানে? আগুন নিয়ন্ত্রণে সেগুলি কতটা কাজ করেছে?

Advertisement

শহরের কোনও বাজারে আগুন লাগলেই বারবার প্রশ্ন ওঠে সেখানকার অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নিয়ে। এ দিনও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এমনই নানা প্রশ্ন ঘিরে এ দিন চাপানউতোর চলে পুরসভাতেও। আর সেই জল্পনা আরও উস্কে দেয় মেয়রের এক বক্তব্য। অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়, ডেপুটি মেয়র ইকবাল আহমেদ। সেখানে মেয়রকে প্রশ্ন করা হয়, বাজারের ভিতরে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা কেমন ছিল? জবাবে মেয়র বলেন, ‘‘কী ছিল, না ছিল— খবর নিতে বলেছি।’’

বাজার দফতর সূত্রের খবর, ব্রিটিশ আমলে তৈরি হওয়া হগ মার্কেটের ছাউনি ছিল টালির। আয়তন প্রায় পাঁচ হাজার বর্গফুট। মূলত আলু বিক্রির জন্য ওই বাজার নির্দিষ্ট ছিল। এক সময়ে আলু ছাড়াও প্লাস্টিক ও থার্মোকলের কাপ-প্লেট-থালার মতো দাহ্য জিনিসপত্রেরও বিক্রি শুরু হয় সেখানে। হগ মার্কেটের ভিতরে বাজার দফতরের অফিস রয়েছে, রয়েছে নজরদার ক্যামেরাও। তবুও সে সব দেখা হয়নি বলে অভিযোগ। এ বিষয়ে কলকাতা পুরসভা-কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতার কথাও উঠেছে এ দিন।

Advertisement

বর্তমানে পুরসভার বাজার দফতরের দায়িত্ব পেয়েছেন আমিরুদ্দিন। সদ্য দায়িত্ব নেওয়ায় বিশেষ কিছু জেনে উঠতে পারেননি। তবে পুর-প্রশাসনের ব্যর্থতা মানতে নারাজ বাজার দফতরের প্রাক্তন মেয়র পারিষদ তারক সিংহ। তাঁর বক্তব্য, ওই বাজারে পাঁচটি অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র বসানো আছে। যা বাজারের আয়তনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তবে হগ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক উদয় সাউয়ের অবশ্য দাবি, আলুপট্টিতে ছিল দু’টি অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র।

তারকবাবু খানিকটা দায় চাপিয়েছেন মার্কেটের দোকানদারদের উপরেও। তিনি জানান, ওই বাজারের পাশেই গভীর নলকূপ রয়েছে। হঠাৎ আগুন লাগলে তা থেকে কী ভাবে রেহাই মিলতে পারে, তা-ও শেখানো হয়েছিল দোকানদের। বিপদকালে হয়তো সে সব খেয়াল না থাকায় আগুন নেভানোর কোনও পদ্ধতিই ব্যবহার করতে পারেননি স্থানীয় দোকানদারেরা। তারকবাবু বলেন, ‘‘যাঁরা ব্যবসা করছেন, নিজেদের নিরাপত্তায় তাঁদেরও সজাগ থাকতে হয়। সবটা পুরসভা করবে, এমন ভেবে নেওয়ার কোনও কারণ নেই।’’

প্রসঙ্গত, হাতিবাগান এবং শিয়ালদহের দু’টি বাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শহরের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা জোরদার করতে নির্দেশ দেন পুর-প্রশাসনকে। তারই প্রেক্ষিতে শহরে বিভিন্ন বাজার এবং ঘিঞ্জি এলাকায় গভীর নলকূপ বসানোর ব্যবস্থা করে পুরসভা। ঠিক হয়, যেখানে জলের যোগান কম, সেখানে জল দেওয়াই হবে ওই নলকূপের প্রধান কাজ। এ দিন যেখানে আগুন লেগেছিল, তার ২০ ফুটের মধ্যেই ছিল ওই নলকূপ। স্বভাবতই, দমকলের প্রয়োজনে ক্রমাগত জলের জোগান দিয়েছে সেটি। এই প্রসঙ্গ তুলে মেয়র শোভনবাবু বলেন, ‘‘পুরসভা সজাগ বলেই ওখানে দ্রুত আগুন নেভানো সম্ভব হয়েছে।’’ আলুপট্টিতে আগুন লাগার ঘটনায় পুরসভার ব্যর্থতা নিয়ে তাঁর বক্তব্য, ‘‘ডাহা মিথ্যে অপবাদ।’’ তিনি জানান, ওই এলাকার বস্তির বাসিন্দাদের জন্য খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা করেছে পুরসভা। এ দিন পুরসভার ৬ নম্বর বরো থেকে রান্না খাবার দেওয়া হয় তাঁদের।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement