আইন প্রয়োগে বিলম্ব, বহাল বিপজ্জনক বাড়ি

পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই সব বাড়ি ‘কনডেমড’ হিসেবে ঘোষণা করার কতগুলি পর্যায় রয়েছে। তাতে প্রথমেই বাড়ির মালিক বা সংস্থাকে শুনানিতে হাজির থাকতে বলা হয়। বিল্ডিং দফতরের এক অফিসার জানান, কয়েকটি শুনানির কাজ শেষ হয়েছে।

Advertisement

অনুপ চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:১৮
Share:

বিপজ্জনক বাড়ি ভেঙে নতুন বিল্ডিং গড়ে তুলতে এখনও পর্যন্ত ৬৮টি আবেদন জমা পড়েছে পুরসভায়। আর শহর জুড়ে বিপজ্জনক বাড়ির সংখ্যা সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি। কিন্তু এখনও পর্যন্ত মাত্র দু’টি বিপজ্জনক বাড়ি নতুন করে তৈরির জন্য প্ল্যান পাওয়ার মতো অবস্থায় রয়েছে। সম্প্রতি গার্স্টিন প্লেসের একটি বাড়ির ছাদও ভেঙে পড়েছে। সেখানেও বাড়ির মালিক নতুন করে বিল্ডিং তৈরির আবেদন জানিয়েছেন। অথচ পুরসভায় নতুন আইন হওয়ার পরে পেরিয়েছে ১০ মাস। তা সত্ত্বেও এ কাজে বিলম্বের কারণ কী?

Advertisement

মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আইন হয়েছে ঠিকই। কিন্তু তা প্রয়োগ করতে গেলে অনেক দিক ভেবে দেখতে হচ্ছে। সেখানে বলা রয়েছে বাড়ির বাসিন্দাদের নির্মাণ চলাকালীন পুনর্বাসন দিতে হবে। এত সব করতে সময় তো লাগবেই।’’

পুরসভা সূত্রের খবর, উত্তর কলকাতা থেকে আবেদনের সংখ্যাটাই বেশি। পুরসভার নতুন আইন মোতাবেক শহরের বিভিন্ন বিপজ্জনক বাড়িতে শো-কজের নোটিস পাঠানো হয়। তাতে বলা হয় পুরসভা বিপজ্জনক বলে নোটিস পাঠানোর পরেও এত দিনে কেন কাজ করা হয়নি। তাই আপনাকে জানাতে হবে আপনার বাড়ি কেন ‘কনডেমড’ হবে না। সেই নোটিসের ভিত্তিতেই ৬৮টি আবেদন জমা পড়েছে।

Advertisement

পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই সব বাড়ি ‘কনডেমড’ হিসেবে ঘোষণা করার কতগুলি পর্যায় রয়েছে। তাতে প্রথমেই বাড়ির মালিক বা সংস্থাকে শুনানিতে হাজির থাকতে বলা হয়। বিল্ডিং দফতরের এক অফিসার জানান, কয়েকটি শুনানির কাজ শেষ হয়েছে। কয়েকটি এখনও চলছে। এর মধ্যে ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের ৬ প্রতাপ চ্যাটার্জ্জী লেন, ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের ১এ হেরম্ব দাস লেনের বাড়ি দু’টি ‘কনডেমড’ হিসেবে ঘোষিত হয়ে গিয়েছে। খুব শীঘ্রই তাঁদের বিল্ডিং প্ল্যান অনুমোদিত হয়ে যাবে। আর ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের ১২৯/১, এমজি রোড এবং ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের ৪২, পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিট-সহ আরও কয়েকটির কাজও এগোচ্ছে।

নতুন আইন প্রয়োগে কী করছে পুর প্রশাসন?

বিল্ডিং দফতরের এক আধিকারিক জানান, ‘কনডেমড’ হিসেবে ঘোষণার পরে ৪ মাসের মধ্যে প্ল্যান অনুমোদন করাতে হবে। আর প্ল্যান হাতে পাওয়ার ১২ মাসের মধ্যে বাড়ির বাসিন্দাদের পুনর্বাসন দেওয়ার কাজ শেষ করতে হবে। উত্তর কলকাতার এক বাড়ির মালিকের কথায়, একে তো বিল্ডিং তৈরির খরচ। তার উপরে বাসিন্দাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছেন বহু বাড়ির মালিক। এক বাড়ির মালিক জানান, অনেক ভাড়াটেই এত দিন নামমাত্র ভাড়ায় থেকেছেন। ওই সব ভাড়াটেকে নতুন ফ্ল্যাট দেওয়া হলেও ভাড়া কিন্তু একই থাকবে। হিসাব দিয়ে তিনি জানান, তাঁর বাড়িতে এক ভাড়াটে থাকেন ৫০০ বর্গফুট এলাকা জুড়ে। ভাড়া দেন মাত্র ১৭০ টাকা। নতুন আইনে তাঁকে ওই মাপের ফ্ল্যাটই দিতে হবে। কিন্তু ভাড়া বাড়বে না একটুও। অথচ ওই ফ্ল্যাট গড়ে দিতেই খরচ হচ্ছে প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা।

পুরসভার বিল্ডিং দফতরের এক অফিসারের কথায়, ‘‘পুরসভা আইন মেনেই চলছে।’’ তিনি জানান, শুনানির সময় তো সবই জানানো হয়েছিল বাড়ির মালিকদের। এখন তো অভিযোগ করে কোনও লাভ নেই। তা ছাড়া বিপজ্জনক বাড়ি ভেঙে নতুন করে গড়ার জন্য ১০০ শতাংশ এফএআর (ফ্লোর এরিয়া রেশিও) দেওয়া হচ্ছে। সেটাও তো কম নয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement