পরিবেশ রক্ষায় এক সময়ে দেশের মধ্যে এগিয়ে ছিল বাংলা। শব্দবাজির লড়াইয়েও এ রাজ্যের আইন সব থেকে কড়া। কিন্তু বর্তমানে বাজির থেকে হওয়া বায়ুদূষণ রুখতে রাজ্যের সেই কড়া মনোভাব কোথায়, প্রশ্ন পরিবেশকর্মীদের। তাঁদের অভিযোগ, রাজ্যের পরিবেশ দফতর বা দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের বাজি থেকে হওয়া বায়ু দূষণ নিয়ে যথেষ্ট কঠোর মনোভাব নেই। বাধ্য হয়ে পরিবেশকর্মীদের অনেকেই তাই আদালতের শরণাপন্ন হওয়ার কথা ভাবছেন।
পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত রবিবার জানান, বিষয়টি নিয়ে তিনি সুপ্রিম কোর্টে মামলা করবেন। সেই মামলার আবেদনপত্র তৈরির কাজও শেষ। কাল, মঙ্গলবার বা পরশু, বুধবারই শীর্ষ আদালতে মামলাটি রুজু হতে পারে।
তাঁর মতে, দ্রুত এই বিপদ ঠেকাতে শীর্ষ আদালতই আদর্শ জায়গা।
শব্দবাজি নিয়ে মানুষের মধ্যে আপত্তি বা সচেতনতা তুলনায় বেশি। কিন্তু আতসবাজির ধোঁয়া যে নীরব ঘাতকের মতো নাগরিকদের শ্বাসযন্ত্রে হানা দেয়, তা নিয়ে অনেকেরই সঠিক ধারণা নেই। আতসবাজির বিপদ কেমন, তা অবশ্য গত কয়েক বছরে কিছুটা হলেও মালুম হয়েছে। বছর তিনেক আগে, কালীপুজোর রাতে ভিআইপি রোড দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে এক নাগরিকের অভিজ্ঞতা, কার্তিকেই যেন শীতকালের মতো চার পাশ অস্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল! ধোঁয়াশা কাটিয়ে যাওয়ার সময় রীতিমতো কষ্টও হচ্ছিল। ওই ধোঁয়াশা আসলে ওই এলাকার নাগরিকদের পোড়ানো বাজির ধোঁয়া। বাতাসের আর্দ্রতার সঙ্গে মিশে যা কি না ধোঁয়াশা হয়ে উঠেছিল। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের সূত্রও বলছে, কালীপুজোর রাতে মহানগরের বাতাসের দূষণের মাত্রা অনেকটাই বেড়ে যায়। শহরের একাধিক বক্ষরোগ বিশেষজ্ঞের অভিজ্ঞতা, কালীপুজো, দীপাবলি পেরোতেই চেম্বারে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানির রোগীর সংখ্যা বেড়ে যায়। তাঁদেরই এক জনের মন্তব্য, ‘‘একাংশের মনোরঞ্জনের খেসারত দিতে হয় বহু নিরপরাধ মানুষকে।’’
বাজি ব্যবসায়ী এবং পরিবেশবিদদের একাংশ জানাচ্ছেন, বহু বাজিতেই মশলার গুণমান ঠিক থাকে না। বিশেষত, রংমশাল, সাপবাজি, ফুলঝুরি, তুবড়ি থেকে যে ধোঁয়া বেরোয়, তা মারাত্মক ক্ষতিকর। এ রাজ্যে বেআইনি বাজি কারখানার উপরে নজরদারি না থাকায় ইচ্ছে মতো বাজি তৈরি হচ্ছে, বিক্রি হচ্ছে।
কালীপুজোর পরে ধোঁয়াশা তৈরি হয় দিল্লিতেও। সেখানে দীপাবলিতে কোটি কোটি টাকার বাজি পোড়ানো হয়। তার ধোঁয়ায় আবছা হয়ে যায় রাজধানীর চার পাশ। সেই বিপদকে মাথায় রেখেই এ বার দিল্লিতে আতসবাজি বিক্রির উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। কিন্তু এ রাজ্যে?
পরিবেশ দফতর ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কর্তারা ধোঁয়ার বিপদ ঠেকাতে মানুষের সদিচ্ছা এবং সচেতনতার উপরেই ভরসা রাখছেন। যা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেক পরিবেশকর্মী। তাঁরা বলছেন, শব্দবাজি তো বহু আগেই নিষিদ্ধ হয়েছে। কিন্তু তা নিয়ে কি সচেতনতা তৈরি হয়েছে? কালীপুজো, দীপাবলির রাতে তো শব্দবাজি ধরতে পুলিশকে রাতভর ছুটোছুটি করতে হয়। সেখানে আতসবাজির বিপদ লোকে নিষেধাজ্ঞা ছাড়াই বন্ধ করে দেবে, এমনটা তো অলীক কল্পনা!
আতসবাজির বিপদ বোঝেন পুলিশ-প্রশাসনের উপরওয়ালারাও। বছর দুয়েক আগে লালবাজারের এক শীর্ষ কর্তা বলেছিলেন, ‘‘বিদেশে যেমন কোনও একটি নির্দিষ্ট জায়গায় বাজি পোড়ানো হয়, এখানেও তা করা প্রয়োজন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে বেড়ালের গলায় সেই ঘণ্টা বাঁধবে কে?’’