মাধ্যমিকের রেজাল্ট হাতে পেয়ে উচ্ছাস ছাত্রীদের। ছবি পিটিআই।
উচ্চ মাধ্যমিক পড়ানো হয়, কলকাতায় এমন স্কুলের সংখ্যা যথেষ্ট। কিন্তু প্রতিটি স্কুলের পরিকাঠামো উন্নত নয়। কোথাও আবার পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই বলেও অভিযোগ। আর তার ফল ভুগতে হতে পারে এ বারের মাধ্যমিকে পাশ করা পড়ুয়াদের। এ বছর মাধ্যমিকে ১০০ শতাংশ পড়ুয়াই পাশ করে যাওয়ায় একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হতে গিয়ে তারা সমস্যার মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে।
শহরে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের সরকারি, সরকার-পোষিত এবং সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলের সংখ্যা ২৪০টি। আর উচ্চ মাধ্যমিক পড়ুয়ার সংখ্যা ৩৬ থেকে ৪০ হাজারের মতো। অর্থাৎ, পড়ুয়ার সংখ্যা ৪০ হাজার ধরলে স্কুলপিছু পড়ুয়া হওয়া উচিত ১৬৬ জন। শিক্ষকদের একাংশ জানাচ্ছেন, ওই সব স্কুলে একাদশ শ্রেণিতে ১৫০ জন করে পড়ুয়া থাকার কথা। অর্থাৎ, ছাত্র সংখ্যার অনুপাতে শহরের উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে স্কুলের সংখ্যা ঠিকই রয়েছে। কিন্তু সার্বিক ভাবে দেখা যাচ্ছে যে, পরিকাঠামোর অভাবে বেশ কিছু স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা কমে গিয়েছে। যার ফলে বাকি স্কুলগুলির উপরে ভর্তির চাপ বাড়ছে। ইতিমধ্যে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির ফর্ম দেওয়া শুরু করেছে প্রায় প্রতিটি স্কুল।
খিদিরপুরের ২০০ বছরের পুরনো স্কুল সেন্ট বার্নাবাস থেকে এ বার মাধ্যমিক দিয়েছিল মাত্র ৩১ জন। তারা সকলেই একাদশ শ্রেণিতে নিজের স্কুলে ভর্তি হবে কি না, সেই প্রশ্ন উঠেছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুখেন্দু বিশ্বাস বলেন, “আমাদের স্কুলে বাণিজ্য এবং কলা বিভাগ ছিল। কিন্তু শিক্ষক না থাকায় বাণিজ্য বিভাগটি উঠে গিয়েছে। কলা বিভাগেও পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই। গত ২২ বছর ধরে স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ হয়নি। তাই যারা ভর্তি হতে আসবে, তাদের এই সমস্যার কথা জানানো হবে।”
শ্যামপুকুর এলাকার মহারাজা কাশিমবাজার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষিকা কুমকুম দত্ত চৌধুরী জানালেন, সেখানেও পড়ুয়ার সংখ্যা বেশ কম। এ বছর তাদের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ছিল মুষ্টিমেয় কয়েক জন। এখনও পর্যন্ত মাত্র ২৭ জন একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে। কুমকুম বলেন, “এই স্কুল থেকে বহু কৃতী মানুষ পাশ করেছেন। এক সময়ে এখানে পলিটেকনিক পড়ানো হত। কিন্তু পরে তা বন্ধ হয়ে গিয়ে সাধারণ স্কুল হয়ে যায়। কিন্তু পলিটেকনিক নামটি রয়ে গিয়েছে। তবে নানা কারণে স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা কমতির দিকে। এ বার আমাদের স্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে মাত্র ২২ জন।”
আহিরীটোলা বঙ্গ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক আবার বলছেন, “উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের স্কুল হলেও এখানে শিক্ষকের অভাব রয়েছে। বিজ্ঞান শাখায় পদার্থবিদ্যা, অঙ্ক, রসায়নের শিক্ষক নেই। এমনকি, ইংরেজির শিক্ষকও নেই।” ওই এলাকার বাসিন্দা অলোক দাস বললেন, “নামেই উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল। কিন্তু যে স্কুলে শিক্ষকের সংখ্যা এত কম, বিজ্ঞান পড়ানোর শিক্ষকই নেই, সেখানে কেন পড়ুয়ারা ভর্তি হতে আসবে?”
তাই শুধু উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের স্কুল হিসেবে টিকে থাকাই নয়, এই সমস্ত স্কুলের পরিকাঠামোর উন্নয়নের দাবি জানিয়েছে বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন। পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নবকুমার কর্মকার বলেন, “এ বার সবাই পাশ করায় কলকাতায় ভর্তি হওয়া নিয়ে সমস্যা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অনেক পড়ুয়াই হয়তো পছন্দের বিষয় পাবে না। এই সমস্যা তৈরি হত না, যদি শহরের ২৪০টি স্কুলের পরিকাঠামো, শিক্ষকের সংখ্যা পর্যাপ্ত থাকত। স্কুলগুলিতে পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগের দাবি জানিয়ে শিক্ষা দফতরে চিঠি লিখেছি।”