Footpath Encroachment

বেহালা চৌরাস্তায় হকার উচ্ছেদ, বাকি শহরে উদ্ধার হবে কি ফুটপাত? সৌরনীলের মৃত্যুর পর উঠছে প্রশ্ন

বেহালা চৌরাস্তার বর্তমান ছবিটি অন্যত্র দেখা যাচ্ছে না কেন? নাগরিকদের ফুটপাতে হাঁটার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে দিতে কি প্রশাসনের সৌরনীলের মৃত্যুর মতো ঘটনাই প্রয়োজন?

Advertisement

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০২৩ ০৫:৪৫
Share:

চেনা চিত্র: হকারদের দখলে ফুটপাত। তাই যানবাহনের পাশ দিয়েই হাঁটছে স্কুলপড়ুয়ারা। সোমবার, গড়িয়াহাটে। ছবি: সুমন বল্লভ।

ভয়াবহ কোনও দুর্ঘটনা না-ঘটলে কি ফুটপাত দখলমুক্ত হবে না? এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে শহরবাসীর মনে।

Advertisement

লরিতে পিষ্ট হয়ে একটি শিশুর মৃত্যু। সেই ঘটনাই যেন ফারাক তৈরি করে দিয়েছে ডায়মন্ড হারবার রোডের সঙ্গে বিধান সরণি বা গড়িয়াহাটের। গত শুক্রবার ডায়মন্ড হারবার রোডে লরিতে পিষ্ট হয়ে এক স্কুলপড়ুয়ার মৃত্যুর পরে সেখানে জনরোষ আছড়ে পড়েছিল। যার জেরে বেহালা চৌরাস্তা তথা ডায়মন্ড হারবার রোডে প্রশাসনিক তৎপরতা চরমে উঠেছে। স্কুলের সামনে প্রবল কড়াকড়ি করছে পুলিশ। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ফুটপাত দখল করে থাকা অস্থায়ী দোকান। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, কলকাতার অন্যান্য প্রান্ত, যেখানে এখনও ফুটপাত দখল হয়ে থাকার কারণে পথচারীদের গাড়ির রাস্তায় নেমে হাঁটতে হয়, সেই সব জায়গায় প্রশাসনিক তৎপরতা কবে দেখা যাবে? বা আদৌ সেই সমস্ত জায়গার পরিবর্তন হবে কি?

পুরসভা ও পুলিশের দাবি, হকারদের নিয়ন্ত্রণ করে পথচারীদের জন্য ফুটপাতে নিরাপদ যাতায়াত সুনিশ্চিত করতে নতুন চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে। যদিও গড়িয়াহাটে পুরসভাই হকারদের লোহার কাঠামো দেওয়া দোকান তৈরি করে দিয়েছে। যার জেরে সেখানে ফুটপাত অত্যন্ত সঙ্কীর্ণ হয়ে গিয়েছে। আর এক–দেড় মাসের মধ্যেই শুরু হবে পুজোর বাজারের ভিড়। তখনই ফের ফুটপাত উপচে রাস্তায় নেমে আসবে মানুষের ঢল। গড়িয়াহাট মোড়ে সোমবার দুপুরে দেখা গেল, এক মা সন্তানকে নিয়ে রাস্তা দিয়ে হেঁটে স্কুল থেকে ফিরছেন। মহিলার কথায়, ‘‘ফুটপাত দিয়ে হাঁটলে রাস্তায় বাসের নম্বর দেখতে পাব না। চার দিকই তো হকারদের দোকানে ঘেরা।’’

Advertisement

আবার বিধান সরণিতে দেখা গেল, সেখানে অস্থায়ী দোকান এমন ভাবে তৈরি যে, ফুটপাত এবং রাস্তা, দু’দিক থেকেই ক্রেতারা কিনতে পারেন। স্থায়ী দোকানিদের অভিযোগ, এর জেরে ফুটপাতও আটকে যায়, আবার রাস্তাতেও ভিড় জমে যায়। পথচারীদের পাশ দিয়েই বাস, গাড়ি, বাইক বেপরোয়া ভাবে চলাচল করে। বড়বাজার, চিৎপুর, গার্ডেনরিচের মতো বহু গুরুত্বপূর্ণ এলাকাতেও ফুটপাত চুরি গিয়েছে অনেক বছর আগেই। রাস্তায় বিপদ মাথায় নিয়েই হাঁটতে হয়। কখনও কোনও বড় দুর্ঘটনা ঘটলে প্রশাসন নড়েচড়ে বসে, তার পরে আবার পরিস্থিতি আগের জায়গায় ফিরে যায়। এমনই অভিযোগ শহরবাসীর।

বেহালার দুর্ঘটনার পরে এ দিন শহরের বিভিন্ন এলাকার হকার বা অন্য জবরদখলকারীদের বক্তব্য, তাঁরা সকলেই কলকাতায় কয়েক দশক ধরে ফুটপাতে ব্যবসা করছেন। কাজেই ফুটপাতে তাঁদেরই ‘অধিকার’। রয়েছে তাঁদের হকার সংগঠনও। বেহালার ডায়মন্ড হারবার রোডে দেখা গেল, পুরসভার পার্কিংয়ের বৈধ কাগজপত্র থাকা গাড়ি রাখতে পারছেন না লোকজন। সেখানে রাস্তা জুড়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে টেম্পো, ছোট লরি। চালকেরা জানান, তাঁরা ‘বেহালা মিনি ট্রাক ও টেম্পো অ্যাসোসিয়েশন’-এর সদস্য, যা ১৯৬৮ সাল থেকে রয়েছে। এক চালকের কথায়, ‘‘আমরা শুরু থেকে রয়েছি। যাঁরা গাড়ি রাখবেন বলে পুর অনুমোদনের কথা বলছেন, তাঁরা এখানে পুরনো।’’ এমনই বিশৃঙ্খল এক পরিস্থিতির জটে আটকে ফুটপাত কিংবা রাস্তা।

বেহালা চৌরাস্তার বর্তমান ছবিটি অন্যত্র দেখা যাচ্ছে না কেন? নাগরিকদের ফুটপাতে হাঁটার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে দিতে কি প্রশাসনের সৌরনীলের মৃত্যুর মতো ঘটনাই প্রয়োজন? কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘কলকাতা পুলিশের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। কী ভাবে ফুটপাতের এক-তৃতীয়াংশ হকারদের ছেড়ে বাকি অংশ পথচারীদের জন্য খুলে রাখা যায়, তা দেখা হচ্ছে। তবে মানুষকেও সতর্ক হতে হবে। অনেক ফুটপাতেই জায়গা থাকা সত্ত্বেও মানুষ রাস্তা দিয়েই হাঁটেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement