দোতলা বাস নিয়ে প্রস্তুতি। রণজিৎ নন্দী
পুজোর আগে এ যেন চোখ টানার ‘ড্রেস রিহার্সাল’! আর এই ড্রেস রিহার্সালে নিজেদের দিকে নজর ঘোরাতে চেষ্টায় কসুর রাখতে চাইছে না পুজো কমিটিগুলি। বাহারি পোশাকের সঙ্গে রংবেরঙের ছাতার ব্যবহারে নজর ঘোরাতে চাইছে কেউ, আবার কেউ মিছিলে আনছে বিশাল ঢাকির দল থেকে মুখোশের সম্ভার। কোনও পুজো কমিটি আবার থিমের মতো লুকিয়ে রাখছেন প্রাক্ পুজোর মিছিলের প্রস্তুতিও। জোরাজুরি করলে কেবল উত্তর দিচ্ছেন, ‘‘প্রতিযোগীকে গোল দেওয়ার পরিকল্পনা বাইরে বার করলে চলে! সব চমক কাল দেখবেন।’’
গত বছর ডিসেম্বরে ইউনেস্কোর স্বীকৃতি আদায় করেছে কলকাতার দুর্গাপুজো। জায়গা করে নিয়েছে ইউনেস্কোর ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজ অব হিউম্যানিটি অংশে। এই স্বীকৃতিস্বরূপ ধন্যবাদ জানাতে ১ সেপ্টেম্বর প্রাক্ পুজো মিছিলের ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ, বৃহস্পতিবার সেই মিছিল ঘিরে ইতিমধ্যেই প্রশাসনের তরফে একাধিক নির্দেশিকা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে পুজো কমিটিগুলির কাছে। কোনও ট্যাবলো না রেখে মূলত রঙিন মিছিল করার উপরে জোর দেওয়ার কথা বলা হয়েছে নির্দেশে। বিধি মেনে মিছিল করে নজর টানতে আগ্রহী শহরের একাধিক পুজো কমিটি। মুখে প্রতিযোগিতার কথা না বললেও কার্যত কেউ কাউকে জায়গা ছাড়তে নারাজ।
রঙিন ছোট-বড় ছাতার সঙ্গে সুসজ্জিত ঢাকির দল নিয়ে মিছিলে চমক দিতে চাইছে ত্রিধারা উৎসব কমিটি। সেই সঙ্গে ক্লাবের তরফে মিছিলে অংশ নেওয়া প্রত্যেকের জন্য নির্দিষ্ট পোশাকের বন্দোবস্ত করা হয়েছে বলে জানাচ্ছেন ক্লাবকর্তারা। এই পুজোর অন্যতম কর্তা দেবাশিস কুমার বলেন, ‘‘চাইলেও যে নজর টানার জন্য ট্যাবলো করব, তা তো হচ্ছে না। তার পরেও যতটা চমক দেওয়া যায়, সেই চেষ্টা করছি। সুসজ্জিত ছাতা এবং ঢাকের বোল আমাদের হাতিয়ার। আরও কিছু করা যায় কি না, সেটাও দেখা হচ্ছে।’’ পিছিয়ে নেই চেতলার মিছিলও। মূলত পোশাকের চাকচিক্যে মাত করতে চাইছেন তাঁরা। এ ছাড়া, ইউনেস্কোকে ধন্যবাদ জানানোর মধ্য দিয়ে বিশেষ চমক রাখা হচ্ছে বলে এ দিন জানালেন পুজোকর্তারা। এই পুজোর অন্যতম কর্তা সমীর ঘোষের কথায়, ‘‘পুরুষ এবং মহিলাদের জন্য বিশেষ পোশাকের ব্যবস্থা করেছি। থাকছে বাঙালিয়ানার ছোঁয়া। সেই সঙ্গে মিছিলে ঢাকের সঙ্গে থাকছে শঙ্খধ্বনি। আমাদের মূল চমক ইউনেস্কো এবং মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানানো। আশা করি সকলের পছন্দ হবে।’’ পুজোর থিমের সঙ্গে মিল রেখে মিছিল সাজাচ্ছে বকুলবাগানও। এই পুজোর সম্পাদক সুমন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আমরা এ বার পুজোয় অন্য রকম থিম করছি। তার সঙ্গে মিল রেখেই মিছিল হবে। সকলকে জানানোর এমন সুযোগ ছাড়লে চলে!’’ চমকের তোড়জোড় চলছে শ্রীভূমি, চক্রবেড়িয়া, দেশপ্রিয় পার্কের পুজোকর্তাদের মধ্যেও।
তবে মিছিলের চমক এখনই বাইরে আনতে চাইছেন না উত্তর কলকাতার টালা পার্ক প্রত্যয়ের পুজোকর্তারা। মিছিলের মাঠে নেমে তবেই চমক দিতে চাইছেন তাঁরা। এই পুজোর এক কর্তা বলেন, ‘‘সব চলছে। আশা করি, আমাদের আয়োজন সকলের পছন্দ হবে।’’ মিছিলের রং বাড়াতে ফোরাম ফর দুর্গোৎসবের তরফে ছো-নৃত্য, রঙিন মুখোশ, ব্যান্ড, হরেক ছাতা থাকছে বলে জানালেন সাধারণ সম্পাদক শাশ্বত বসু।
তবে পুজোর এক মাস আগে ব্যস্ততার মধ্যে মিছিল সাজাতে গিয়ে কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন অনেক পুজোকর্তা। গৌরীবেড়িয়া সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির যুগ্ম সম্পাদক মান্টা মিশ্র বলেন, ‘‘মিছিলের আয়োজন চলছে। তবে এই সময়ে পুজোর আয়োজনে আমাদের নানা ভাবে ব্যস্ত থাকতে হয়। ফলে মিছিল নিয়ে অন্য কিছু করার ইচ্ছা থাকলেও উপায় থাকছে না। তার মধ্যেও চেষ্টা চলছে চমকের।’’