ফাইল চিত্র।
কারও মতে, বইমেলার সময় পিছিয়ে যাওয়ায় অনেকটাই নিশ্চিন্ত হওয়া গেল। কেউ আবার ইতিমধ্যে নতুন বই প্রকাশের পরিকল্পনা করে ফেলেছেন। করোনা-বিধি মেনে এ বার নির্ভয়ে স্টলে বিশেষ অতিথিদের ডাকতে পারবেন বলেও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন কলেজ স্ট্রিটের বই প্রকাশকদের কেউ কেউ।
করোনার সংক্রমণের কথা মাথায় রেখে কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা ৩১ জানুয়ারি থেকে পিছিয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়ার ঘোষণায় অনেকটাই নিশ্চিন্ত হয়েছেন কলেজ স্ট্রিটের বই প্রকাশকেরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউয়ের মধ্যে চলতি মাসের শেষে সল্টলেকের সেন্ট্রাল পার্কে বইমেলা শুরু হলে আদৌ কত জন সেখানে আসতেন, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় ছিল। কিন্তু এখন মেলা এক মাস পিছিয়ে যাওয়ায় নিজেদের স্টল আরও সুন্দর করে গুছিয়ে তোলার জন্য কিছুটা সময় হাতে পেলেন তাঁরা।
সেই সঙ্গে প্রকাশকদের একাংশ জানাচ্ছেন, বইমেলা পিছিয়ে যাওয়ায় তাঁদের ছাপাখানায় ব্যস্ততাও বেড়েছে অনেকটাই। কলেজ স্ট্রিটের এক প্রকাশক পার্থশঙ্কর বসুর কথায়, ‘‘৩১ জানুয়ারি থেকে বইমেলা শুরু হবে শুনে অনেকেই নতুন বই প্রকাশের সাহস পাচ্ছিলেন না। কারণ, তাঁদের প্রশ্ন ছিল, আদৌ মেলায় ভিড় হবে তো? বইপ্রেমীদের একটি বড় অংশই প্রবীণ অথবা িশশু। ওই পাঠকদের এ বারের বইমেলায় দেখা যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ে ছিলেন অনেকেই। সে ক্ষেত্রে নতুন বই প্রকাশ করে লাভ কী?’’ এখন বইমেলা পিছিয়ে যাওয়ায় তাঁদের আশা, সেই সময়ে করোনা পরিস্থিতি তুলনায় অনেকটাই ভাল হবে। ফলে নতুন বই ছাপানোর কথাও ভাবছেন প্রকাশকেরা, যা এত দিন ভাবার সাহস দেখাতে পারছিলেন না। পার্থ জানাচ্ছেন, তিনিও বেশ কিছু নতুন বই প্রকাশ করার পরিকল্পনা করেছেন। সেই মতো বই ছাপানোর কাজও শুরু হয়েছে।
কলেজ স্ট্রিটের আরও এক প্রকাশক কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায় বলছেন, “বইমেলার জন্য হাতে এক মাস অতিরিক্ত সময় পেয়ে অনেকটা স্বস্তি মিলেছে। সংক্রমণ এড়াতে প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের প্রয়োজন ছিল। এটাই ভাল হল।” বয়স্ক প্রকাশক এবং বয়স্ক কর্মীদের মধ্যেও অনেকে চলতি মাসের শেষে বইমেলা শুরু হলে মেলায় আসতে ভয় পেতেন। অথচ, কর্মীরা সকলে বইমেলায় উপস্থিত না থাকলে স্টল চালানোও কঠিন। তাই সময় পিছিয়ে যাওয়ায় সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা অনেকটা কম হতে পারে বলে আশাবাদী প্রকাশকেরা। ফলে স্টলে বয়স্ক কর্মীরাও অনেকটাই নির্ভয়ে কাজ করতে পারবেন বলে মনে করছেন তাঁরা।
বইমেলা পিছনোয় ছোট-বড় সব প্রকাশকই স্বস্তির শ্বাস ফেলছেন বলে মনে করছেন আয়োজক সংস্থা পাবলিশার্স অ্যান্ড বুক সেলার্স গিল্ডের সভাপতি সুধাংশুশেখর দে। তিনি জানান, ২৮ ফেব্রুয়ারি বইমেলা শুরু হলেও কবে শেষ হবে, তা নিয়ে এখনও কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে আগের মতো দু’সপ্তাহ, অর্থাৎ ১৩ মার্চ পর্যন্ত বইমেলা চলতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। সুধাংশুবাবু বলেন, “গত বার করোনার জন্য বইমেলা হয়নি। এ বার ৩১ জানুয়ারি বইমেলা শুরুর কথা থাকলেও তখনও তৃতীয় ঢেউয়ের রেশ থাকবে কি না, তা নিয়ে অনেকেই সংশয়ে ছিলেন।
ফলে বইমেলা হলেও বিক্রি হয়তো কম হত। কিন্তু সময় পিছিয়ে যাওয়ায় অনেকেই নিশ্চিন্তে মেলায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন।” এমনকি, প্রকাশকদের মধ্যে উৎসাহ এতটাই বেড়েছে যে, বইমেলার স্টল বণ্টন হওয়ার পরেও মেলায় আর কোনও ভাবে স্টল দেওয়া যেতে পারে কি না, তা নিয়ে
অনেকেই খোঁজ নিচ্ছেন বলে জানাচ্ছেন সুধাংশুবাবু।