আকাশ থেকে নেমে আসছে রাশি রাশি টাকা, হাঁ করে দেখল জনতা

বুধবার বিকেলে এমনই এক অদ্ভুত ঘটনার সাক্ষী রইল মধ্য কলকাতার বেন্টিঙ্ক স্ট্রিট! তবে কৌতূহলী জনতা শুধু টাকা পড়তেই দেখল। সে টাকা পকেটে ঢোকানো তো দূর, ছুঁয়েও দেখা যায়নি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৯ ০৪:২৪
Share:

উড়ছে টাকা: বহুতল থেকে ফেলা হচ্ছে টাকার বান্ডিল। টের পেতেই চোখ কপালে উঠল পথচারীদের। ছবি: েদশকল্যাণ চৌধুরী

শীতকালে আচমকা আকাশ থেকে জলের ফোঁটা নেমে আসাটা একেবারে বিরল ঘটনা নয়। কিন্তু উপর থেকে নেমে আসছে রাশি রাশি টাকা, এমন দৃশ্য কেউ দেখেছেন কি! তা-ও দশ-বিশ টাকার নোট নয়, একেবারে কড়কড়ে পাঁচশো আর দু’হাজারের নোট!

Advertisement

বুধবার বিকেলে এমনই এক অদ্ভুত ঘটনার সাক্ষী রইল মধ্য কলকাতার বেন্টিঙ্ক স্ট্রিট! তবে কৌতূহলী জনতা শুধু টাকা পড়তেই দেখল। সে টাকা পকেটে ঢোকানো তো দূর, ছুঁয়েও দেখা যায়নি।

সূত্রের খবর, এ দিন বিকেলে বেন্টিঙ্ক স্ট্রিটের একটি বহুতলে থাকা এক বাণিজ্যিক সংস্থার অফিসে হানা দিয়েছিলেন ‘ডিরেক্টরেট অব রেভিনিউ ইন্টেলিজেন্স’ (ডিআরআই)-এর অফিসারেরা। সেই তল্লাশি-অভিযানের সময়েই ওই বহুতলের ছাদের উপর থেকে ঝপাঝপ করে টাকার বান্ডিল পড়তে থাকে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওই টাকার বান্ডিল ফেলা হয়েছিল বহুতলেরই চৌহদ্দিতে। তা দেখতে পেয়েই ওই বাড়ির নিরাপত্তারক্ষীরা গেট বন্ধ করে সেই টাকার বান্ডিল কুড়োতে থাকেন। সেই দৃশ্য দেখে জমে যায় ভিড়। ভিড়ে থাকা অনেকেই পকেট থেকে মোবাইল বার করে পটাপট ছবিও তুলতে থাকেন।

Advertisement

দেখুন ভিডিয়ো:

ঘটনার কথা শুনেই তড়িঘড়ি সেখানে হাজির হয় হেয়ার স্ট্রিট থানার পুলিশ। ওই বহুতলের চৌহদ্দিতে পাহারা বসিয়ে দেয় তারা। গেট বন্ধ করে মোতায়েন করা হয় রক্ষী। এমন সময়ে হঠাৎ নজরে আসে, উপর থেকে ফেলা সব ক’টি টাকার বান্ডিল নীচে পড়েনি। বেশ কয়েকটি আটকে রয়েছে বাড়ির কার্নিসে। সেই টাকা উদ্ধার হবে কী করে? দেখা গেল, এক রক্ষী ছুটে বেরিয়ে গেলেন। কয়েক মিনিট পরে ফিরে এলেন দু’টি স্ক্রু ডাইভার নিয়ে। সেটি দিয়েই জানলার কাচ খুলে লাঠি দিয়ে খুঁচিয়ে টাকার বান্ডিল নীচে ফেলা হয়। টাকা ঝরে পড়ার সেই দৃশ্য দেখতে গিয়ে বাইরে তখন হুলস্থুল কাণ্ড। কেউ পড়লেন অন্যের ঘাড়ে। কেউ বা মাড়িয়ে দিলেন আর এক জনের পা।

অনেকেই বলছেন, বছর দশেক আগে চৌরঙ্গি রোডের একটি বাণিজ্যিক বহুতল থেকে এমন ভাবেই টাকার বৃষ্টি হয়েছিল। সূত্রের দাবি, রাজস্ব দফতরের তল্লাশির সময়ে তাদের চোখে ধুলো দিতেই তা করা হয়েছিল। রাস্তায় পড়া টাকা পকেটে গুঁজে চম্পট দিয়েছিলেন পথচারীদের অনেকেই। কারণ, পুলিশ তখনও সেখানে পৌঁছয়নি। এ দিন অবশ্য জনতা সে সুযোগ পায়নি। বন্ধ গেটের বাইরে থেকে টাকা ওড়া চাক্ষুষ করে এবং মোবাইলে তা বন্দি করেই আশ মেটাতে হয়েছে।

টাকা মিলুক বা না মিলুক, ফুটপাতে দাঁড়ানো ভিড়ে কান পাততেই শোনা গেল হরেক জল্পনা আর গুজব। ফুটপাত লাগোয়া একটি গাড়িতে হেলান দিয়ে স্থানীয় একটি দোকানের প্রৌঢ় কর্মী তখন বলে চলেছেন, কবে, কোথায় এমন রাশি রাশি টাকা উড়তে দেখেছেন। কর ফাঁকি দেওয়ার এ হেন কৌশল নিয়ে তখন একটু দূরে চায়ের দোকানে আড্ডায় তুফান বইছে। টাকা উড়ছে শুনেই ফুটপাতে দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন এক প্রৌঢ়। কিন্তু ভিড় ঠেলে গেটের সামনে যেতে পারেননি। অগত্যা তিনি ঝাঁঝিয়ে উঠলেন, ‘‘কাজ নেই, তাই এ সব নাটক দেখতে এসেছে! বলি, ওই টাকার এক কণাও মিলবে নাকি?’’

সূত্রের দাবি, পুলিশের সাহায্যে সন্ধ্যা পর্যন্ত ৩ লক্ষ ৭৪ হাজার টাকা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। সবই ৫০০ ও ২০০০ টাকার নোট। তবে ওই টাকার মালিক কে, তা রাত পর্যন্ত জানা যায়নি। গভীর রাত পর্যন্ত ওই অফিসে তল্লাশি চলেছে বলে সূত্রের দাবি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement