দাবি বা প্রতিবাদ জানানোর অনেক অভিনব পন্থা আছে। কিন্তু স্যানিটারি ন্যাপকিনে লিখে তা জানানোর পদ্ধতি যে এ দেশের, এই সমাজের রীতি-রেওয়াজের সঙ্গে ঠিক খাপ খায় না, আগেই তা জানিয়ে দিয়েছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য আশিসস্বরূপ বর্মা। এ বার স্যানিটারি ন্যাপকিনে স্লোগান লিখে ক্যাম্পাসে তা সেঁটে দেওয়ার ঘটনার তদন্তে তিন জনের কমিটি গঠন করলেন যাদবপুর-কর্তৃপক্ষ।
লিঙ্গবৈষম্য, শ্লীলতাহানি ও ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে, ঋতুস্রাব নিয়ে অযথা গোপনতার বিরুদ্ধে এবং নারী স্বাধীনতা নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির পক্ষে স্যানিটারি ন্যাপকিনে স্লোগান লিখে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সেঁটে দেওয়া হয়েছিল গত শুক্রবার, ২৭ মার্চ। কারা সেই কাজ করেছেন, কমিটি সেটাই তদন্ত করে দেখবে। উপাচার্য আশিসবাবু সোমবার বলেন, ‘‘ওই কমিটিকে এক সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। রিপোর্ট পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।’’
ক্যাম্পাসে ও-ভাবে স্লোগান সাঁটার ঘটনাটিকে বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ যে সহজ ভাবে নেননি, সেটা সে-দিনই পরিষ্কার করে দিয়েছিলেন উপাচার্য। এ দিন এক ধাপ এগিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করে তিনি কড়া বার্তা দিতে চেয়েছেন বলে মনে করছেন শিক্ষামহলের একাংশ। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বক্ষাবরণী পুড়িয়ে প্রতিবাদ হয়েছে এর আগে। মেয়েদের একান্ত ব্যক্তিগত উপকরণ স্যানিটারি ন্যাপকিনকে নিয়েও এর আগে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন দিল্লির জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল পড়ুয়া। পরে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ তাঁদের শো-কজও করেন। এ বার কি সেই পথেই হাঁটছে যাদবপুর?
জবাবে উপাচার্য এ দিন বলেন, ‘‘ক্যাম্পাসের ভিতরে যে ও-ভাবে পোস্টার লাগানো হবে, সেটা কেউ আমাকে জানায়নি। কারা এ-সব করেছে, তা-ও জানি না। ঠিক কারা এ-সব করেছে, তা জানতেই কমিটি গড়া হয়েছে। রিপোর্ট হাতে এলে পরবর্তী ব্যবস্থার কথা ভাবা হবে।’’
ওই অভিনব প্রতিবাদের নেপথ্যে যাঁরা রয়েছেন, তাঁরা অবশ্য মোটেই লুকোছাপা করছেন না। খোলাখুলি সব স্বীকার করে নিয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, আজ, মঙ্গলবার আবার তাঁরা একই কাজ করবেন বলে ঘোষণা করেছেন। অরুমিতা মিত্র নামে এক ছাত্রী সে-দিন জানান, এই ধরনের প্রতিবাদ সংগঠিত করার জন্য ইতিমধ্যেই ‘পিরিয়ডস’ নামে একটি ফোরামও গড়া হয়েছে। উপাচার্যের সোমবারের বক্তব্যের পরিপ্রক্ষিতে অরুমিতা বলেন, ‘‘কর্তৃপক্ষ কী করলেন বা না-করলেন, তা নিয়ে এই আন্দোলন নয়। আমরা মঙ্গলবার ফের ও-ভাবেই প্রতিবাদ জানাব।’’
এই অবস্থায় শিক্ষা শিবিরেরই একাংশ প্রশ্ন তুলছেন, কারা ওই কাজ করছেন, তা জানতে তদন্ত কমিটির আর দরকারটা কী? যাঁরা করছেন, তাঁরা তো স্বীকারই করে নিচ্ছেন! ছাত্রছাত্রীদের বিভিন্ন সংগঠনও জানে, ওই কাজের সঙ্গে ঠিক কারা যুক্ত। তবে এমন আন্দোলন বা কর্তৃপক্ষের তদন্ত কমিটির ব্যাপারে ওই সব সংগঠন কিছু বলতে চাইছে না।
আবুটা অবশ্য প্রতিবাদের এই পন্থার সমালোচনা করছে। এমন প্রতিবাদ বিশ্ববিদালয়ের মেয়েদের অস্বস্তিতে ফেলে দেয় বলেও উপাচার্যকে লিখিত ভাবে জানান আবুটা-র সদস্যেরা। কর্তৃপক্ষের কড়া মানোভাব, তদন্ত কমিটি গঠন এবং আবুটা-র সমালোচনা সত্ত্বেও অরুমিতারা অবশ্য অনমনীয়। সব কিছুকে অগ্রাহ্য করে এই অভিনব পদ্ধতিতেই তাঁরা প্রতিবাদ আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন।