ফাইল চিত্র।
দীর্ঘ দিন ধরেই চলছে পড়ুয়া-চিকিৎসকদের একাংশের বিক্ষোভ-অনশন। অধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তা চলবে বলেও জানিয়ে দিয়েছেন তাঁরা। এ বার রোগীর পরিজনদেরও তাঁদের পাশে এসে দাঁড়ানোর ডাক দিলেন আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওই পড়ুয়া-চিকিৎসকেরা।
শুক্রবার অনশনের ১৯তম দিনে ট্রমা কেয়ার বিল্ডিংয়ের সামনে সমাবেশ করেন বিক্ষোভকারী পড়ুয়া, ইন্টার্নরা। ট্রমা কেয়ারে ওঠার রাস্তার দিকে একটি উঁচু চত্বরে দাঁড়িয়ে খালি গলাতেই নিজেদের বক্তব্য রাখেন তাঁরা। নীচে রোগীর পরিজনদের মাঝেই হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন অন্য বিক্ষোভকারীরা। এক পড়ুয়ার কথায়, “অধ্যক্ষের আচরণের জন্যই এই পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়েছি। পরিষেবা ব্যাহত হওয়ার নেপথ্যে উনিই দায়ী। সেটা রোগীর পরিজনদেরও জানা উচিত।” অধ্যক্ষের কার্যালয়ের পাশেই মঞ্চ বেঁধে অনশন-বিক্ষোভ চালাচ্ছেন পড়ুয়া, ইন্টার্নরা। ওই জায়গায় রোগীর পরিজনদের যাওয়ার তেমন প্রয়োজন পড়ে না। তাই আর জি করের অচলাবস্থার প্রকৃত কারণও কেউ জানতে পারেন না বলে দাবি ওই পড়ুয়াদের। তাঁদেরই এক জনের কথায়, “অনেকে হয়তো ভাবেন, আমরাই গন্ডগোল করছি। কিন্তু তা যে সত্যি নয়, সেটা জানানো প্রয়োজন।”
এ দিন সমাবেশ থেকে বিক্ষোভকারীরা আর্জি জানান, রোগীর পরিজনদের মনে যদি কোনও প্রশ্ন ওঠে, তা হলে তাঁরা যেন অনশন মঞ্চে আসেন। বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ইন্টার্ন, পড়ুয়াদের অভিযোগ, ‘দাম্ভিক’ অধ্যক্ষের জন্যই আজ এই অবস্থা। তিনি বিক্ষোভকারীদের বাড়িতে পুলিশ পাঠিয়েছেন, অনশনরত ছাত্রদের মুখে কাগজ ছুড়ে দিয়ে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন এবং অনশন করা কন্যাসম পড়ুয়াকে ডিঙিয়েই হাসপাতাল ছেড়ে পালিয়েছেন বলে দাবি বিক্ষোভকারীদের। তাঁরা স্পষ্ট জানান, অন্য কোনও দাবি নয়, এখন একমাত্র দাবি, অধ্যক্ষের পদত্যাগ। এক ছাত্রের কথায়, “অনশনের ১৫তম দিনে আমরা জানিয়েছিলাম, অধ্যক্ষ পদত্যাগ না করলে আমরণ অনশন চলবে। রোগী-পরিষেবা ব্যাহত হোক, সেটা আমরাও চাই না। আমরা ও চিকিৎসকেরা রোগীদের ভালই চাই। দিনরাত কাজ করে পরিষেবা দিই। কিন্তু অধ্যক্ষ সে কাজ করেন না।”
অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ বলেন, “পরিষেবা না দিয়ে মানুষকে খেপানো হচ্ছে। এটা পড়ুয়া-চিকিৎসকসুলভ আচরণ বলে মনে হয় না। ওয়ার্ডে কাজ না করে, শুধুমাত্র ট্রমা কেয়ারের সামনে বিক্ষোভ-সমাবেশ করে এবং অনশন মঞ্চে বসে রোগী-পরিষেবা দেওয়া যায় কি? ইন্টার্নদের এমন নতুন নীতির বিষয়ে আমার জানা নেই। ওঁরা বলছেন, সরকার-বিরোধী নন। তা হলে এটা কেন বুঝছেন না, সরকার রেখেছে বলেই আমি রয়েছি। বদলি করলে চলে যাব। কে কার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছেন, তার তো সব প্রমাণই রয়েছে।”
পাল্টা দাবি তুলছেন বিক্ষোভকারীরাও। স্লোগান উঠেছে, ‘আর জি কর লড়ছে, লড়বে। স্বৈরাচারী প্রিন্সিপাল হটিয়ে দাও। আমরা কারা, আর জি কর।’ তাঁরা এ-ও বলছেন, ‘আর জি কর ভাল নেই’।
সাধারণের প্রশ্ন হল, অসুস্থ হাসপাতালকে সুস্থ করার দায় কার? এ ভাবেই কি চলবে একটি মেডিক্যাল কলেজ? সব দেখেও প্রশাসনের শীর্ষ স্তরের হস্তক্ষেপ কোথায়? সব মিলিয়ে সত্যিই ভাল নেই ১৩৫ বছরের রাধাগোবিন্দ কর হাসপাতাল!