আটক: কাউন্সেলিং ও নিয়োগের দাবিতে উচ্চ প্রাথমিকের চাকরিপ্রার্থীদের বিক্ষোভ। সোমবার, সল্টলেকে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।
সপ্তাহের শুরুতেই শহরের রাজপথে চাকরিপ্রার্থীদের দু’টি বিক্ষোভ-মিছিল ঘিরে উত্তেজনা ছড়াল। প্রথম মিছিলটি বেরোয় বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ, সল্টলেকের করুণাময়ীতে। অপরটি শুরু হয় দুপুর ১টা নাগাদ, শিয়ালদহ থেকে। ২০২২ সালে টেট পাশ চাকরিপ্রার্থীরা শিয়ালদহ থেকে মিছিল করে যান শ্যামবাজারে। দ্রুত ইন্টারভিউ নেওয়ার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দাবিতে মাথা নেড়া করে মিছিলে নামেন তাঁদের কয়েক জন।
প্রথম কাউন্সেলিং হয়ে যাওয়া প্রার্থীদের দ্রুত নিয়োগপত্র দিতে হবে এবং দ্বিতীয় কাউন্সেলিং অবিলম্বে শুরু করতে হবে— এই দুই দাবিতে বেলা ১টা নাগাদ স্কুল সার্ভিস কমিশনের অফিসের উদ্দেশে অভিযান করেন উচ্চ প্রাথমিকের চাকরিপ্রার্থীরা। করুণাময়ী মেট্রো স্টেশনে নেমে সল্টলেকের রাস্তায় উঠতেই পুলিশ তাঁদের আটকায়। গাড়িতে তুলে সল্টলেকের বিভিন্ন থানায় নিয়ে যায়। সুশান্ত ঘোষ নামে উচ্চ প্রাথমিকের এক চাকরিপ্রার্থী বলেন, ‘‘আগের তিনটি শুনানিতে স্কুল সার্ভিস কমিশনের সিনিয়র আইনজীবী ছিলেন না। আমাদের দাবি, ৬ মার্চের শুনানিতে তাঁকে উপস্থিত থাকতে হবে।’’
অন্য দিকে, ইন্টারভিউয়ের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে দু’টি ইন্টারভিউ প্রক্রিয়া শুরু করুক প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ— এই দাবিতে এ দিন শিয়ালদহ থেকে শ্যামবাজার পর্যন্ত মিছিল করলেন ২০২২ সালে টেট পাশ চাকরিপ্রার্থীরা। মিছিলের শুরুতে কয়েক জন চাকরিপ্রার্থী মস্তক মুণ্ডন করান। প্রসেনজিৎ রায় নামে এমনই এক চাকরিপ্রার্থী বললেন, ‘‘আমাদের নিয়োগে কোনও আইনি জটিলতা নেই। তবু ইন্টারভিউ প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে না। পেটের জ্বালায় পথে নেমেছি। মস্তক মুণ্ডন করে প্রতিবাদ করছি।’’
বিক্ষোভ-মিছিলে দাবি ওঠে, ‘ভোটের আগেই নিয়োগ চাই।’ শ্যামবাজারের পাঁচ মাথার মোড়ের কাছে রাস্তায় বসে বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। চাকরিপ্রার্থীদের কারও হাতে থালা, কারও হাতে ছিল হ্যারিকেন। পার্থজিৎ বণিক নামে এক চাকরিপ্রার্থী বললেন, ‘‘আমাদের শিক্ষক হওয়ার স্বপ্নকে এ ভাবে মেরে ফেলা হচ্ছে।’’ মিছিলে উঠল বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রসঙ্গ। চাকরিপ্রার্থীদের মতে, বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় ইদানীং নিয়োগ সংক্রান্ত কোনও মামলায় ছিলেন না ঠিকই, কিন্তু তিনি যে ভাবে একের পর এক ঘটনায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়ে সমস্যার সমাধানে ব্রতী হয়েছিলেন, তাতে তাঁরা আশার আলো দেখেছিলেন।
বিদেশ গাজি নামে এক চাকরিপ্রার্থী বলেন, ‘‘জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে চাকরিপ্রার্থীরা বিক্ষোভ-মিছিলে এসেছেন। প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি গৌতম পাল আমাদের প্রতিশ্রুতি দিয়ে জানিয়েছিলেন, ২০১৪-’১৭ টেটের প্যানেল প্রকাশ হওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ৫০ হাজার শূন্য পদে ইন্টারভিউয়ের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। কিন্তু ওই প্যানেল প্রকাশ হওয়ার পরে নিয়োগও হয়ে গেল। এখনও ইন্টারভিউয়ের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হল না।’’
যদিও প্রাথমিক শিক্ষা পর্যদের সভাপতি গৌতম পাল বলেন, ‘‘২০১৪-’১৭ টেটের নিয়োগ প্রক্রিয়া এখনও শেষ হয়নি। আমি প্যানেল প্রকাশ নয়, নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পরে ২০২২ সালের টেট পাশদের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করার কথা বলেছিলাম। ৫০ হাজার শূন্য পদের কোনও প্রতিশ্রুতিও দিইনি। সরকার যে শূন্য পদ পাঠাবে, সেই অনুযায়ী বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। যা হওয়ার, আইন মেনেই হবে।’’