সরব: বেহাল রাস্তার প্রতিবাদে বিক্ষোভ। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র
বেহাল পথের উন্নয়নের দাবিতে প্ল্যাকার্ড হাতে রাস্তায় এসে দাঁড়ালেন তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী, নামী বেসরকারি সংস্থার চাকুরে এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যেরা। বৃহস্পতিবার সকালে যার জেরে প্রায় ৪০ মিনিট অবরুদ্ধ রইল নিউ টাউনের বিশ্ব বাংলা কনভেনশন সেন্টারের সামনে বিশ্ববঙ্গ সরণির কলকাতা বিমানবন্দরমুখী পথ।
স্থানীয় সূত্রের খবর, যাত্রাগাছি মোড় থেকে জগৎপুর পর্যন্ত খাল পাড়ের রাস্তা দীর্ঘদিন ভাঙাচোরা অবস্থায় রয়েছে। রাস্তার একাধিক জায়গায় তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত। কোথাও আবার পিচ উঠে এমন অবস্থা, যে কোনও সময়ে গাড়ি পাল্টি খেয়ে ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। বস্তুত, শিশুদের কথা ভেবেই এ দিন অবরোধ কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নেন গৌরাঙ্গনগরের বিভিন্ন আবাসনের বাসিন্দারা। স্থানীয় বাসিন্দা অদিতি চৌধুরী জানান, মঙ্গলবার পাম্প হাউসের কাছে খানাখন্দের মধ্যে পড়ে খালের দিকে হেলে গিয়েছিল একটি স্কুলবাস। পরিস্থিতি এমনই হয় যে, শিশুদের পাশাপাশি স্কুলবাসে থাকা শিক্ষিকারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। এর পরে ওই স্কুলের তরফে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে, রাস্তা খারাপ থাকার কারণে স্কুলবাস ওই দিক দিয়ে যাবে না। বিক্ষোভে শামিল বিনায়ক সেন জানান, সম্প্রতি তাঁদের আবাসনের বাসিন্দা কৌশিক বিশ্বাসের মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার হয়। রাস্তা খারাপ হওয়ার জন্য তাঁকে অ্যাম্বুল্যান্সে করে বাড়ি আনা যায়নি। ঝাঁকুনি এড়াতে নিউ টাউন বাসস্ট্যান্ডের রাস্তা ধরে খালের কাছে এসে বাঁশের সাঁকো দিয়ে হাঁটিয়ে আনা হয়। আবাসনের বাসিন্দা অনুপ দাস বলেন, “একে খারাপ রাস্তা, তার উপরে আলো নেই। খাল ধারের দোকানের আলোই আমাদের ভরসা। অন্ধকারের সুযোগে এলাকায় অসামাজিক কাজকর্মও তো বাড়ছে।”
এই পরিস্থিতির বদল আনতেই এ দিন সকাল ১০টা নাগাদ যাত্রাগাছি সেতুর নীচে প্ল্যাকার্ড হাতে বিক্ষোভ দেখান মহুয়া সরকার, নীলাঞ্জনা মুখোপাধ্যায়, ঈপ্সিতা চট্টোপাধ্যায়, ইশিকা রায়েরা। কোনওটিতে লেখা, ‘গৌরাঙ্গনগর কি বিশ্ব বাংলার বাইরে?’ কোনওটির আবার বক্তব্য, ‘যাতায়াতের অযোগ্য রাস্তা মেরামতির দাবিতে গৌরাঙ্গনগরবাসীদের শান্তিপূর্ণ অবরোধ’। সঙ্গে স্লোগান, ‘রাস্তা চাই, আলো চাই’! খবর পেয়ে অবরোধ স্থলে যায় নিউ টাউন থানার পুলিশ। হাজির হন হিডকো-র আধিকারিকেরাও। রাজ্যের বিনিয়োগ ভাবমূর্তির প্রতীক বিশ্ব বাংলা কনভেনশন সেন্টারের রাস্তা অবরোধের কারণ জানতে চাইলে নিজেদের ক্ষোভের কথা জানান তিনটি আবাসনের বাসিন্দারা। বিক্ষোভকারী চন্দ্রাণী দাস বলেন, “আমরাও তো কর দিই। তা হলে ন্যূনতম পরিষেবা পাব না কেন?” আশিস দাসের কথায়, “রাস্তা, আলোর দাবিতে পথ অবরোধ করতে হবে কেন?” অবরোধকারীরা জানান, তাঁরা সকলে চাকুরিজীবী। কিন্তু খারাপ রাস্তা ও আলো না থাকার সমস্যা এতটাই যে কেউ ছুটি, কেউ অর্ধদিবস ছুটি নিয়ে অবরোধে শামিল হন।
সমস্যার সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপের আশ্বাস মিললে অবরোধ তুলে হিডকো ভবনে বৈঠক করতে রাজি হন বিক্ষোভকারীরা। হিডকো-র এক কর্তা বলেন, ‘‘রাস্তাটি সেচ দফতরের অধীন হলেও অবিলম্বে দরপত্র ডেকে ১ জানুয়ারির মধ্যে রাস্তা তৈরি করে দেওয়া হবে। গৌরাঙ্গনগরের ওই এলাকা পঞ্চায়েতের মধ্যে পড়ে। তবুও আবাসিকেরা চিঠি দিলে বিষয়টি নিয়ে তাঁরা আলোচনা করবেন।” বিক্ষোভকারীদের তরফে অশোক পান বলেন, ‘‘জানুয়ারির মধ্যে রাস্তার সমস্যা না মিটলে আমরা আরও বড় আন্দোলনে যাব।’’ সেচ দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘বাগজোলা খালের দু’ধারে পরিদর্শনের সুবিধার্থে ওই রাস্তা তৈরি করা হয়েছিল, ভারী যান চলাচলের জন্য নয়। আগামিদিনে সরকারের যে দফতর ভারী যান চলাচলে রাস্তা তৈরি করতে সক্ষম, তারা যাতে পাকাপাকি ভাবে ওই রাস্তার দায়িত্ব নেয়, সে বিষয়ে কথা বলব।’’ আলো নিয়ে স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান শিবশঙ্কর গায়েন বলেন, ‘‘পঞ্চায়েতি ব্যবস্থার বাজেট মেনে রাস্তায় দ্রুত আলো লাগিয়ে
দেওয়া হবে।’’