এক সপ্তাহ আগে বাতিল হয়েছে ৫০০-১০০০ টাকার নোট। ব্যাঙ্কে বা এটিএমে এখনও মিলছে না পর্যাপ্ত ১০০ বা নতুন ৫০০ টাকা। নোটের গেরোয় জেরবার মেছুয়া ফলপট্টির ব্যবসায়ীরা তাই প্রতিবাদে মঙ্গলবার দিনভর বন্ধ রাখলেন ব্যবসা। ফল ব্যবসায়ীদের সংগঠন ক্যালকাটা ফ্রুট মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ইফতেকার আলমের হুঁশিয়ারি, ‘‘গত সাত দিনে আমাদের বিক্রিবাটা ৭০ শতাংশ কমেছে। এ রকম চলতে থাকলে ব্যবসা পুরোপুরি লাটে উঠবে। আগামী ২-৩ দিন পর্যাপ্ত নতুন নোট বাজারে না এলে আমরা ফের ব্যবসা বন্ধ করতে বাধ্য হব।’’
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ মেছুয়া ফলপট্টিতে বাজার করতে আসেন বড়বাজারের বাসিন্দা রোহিত কুমার। ফলপট্টি তখন পুরো ফাঁকা। কেনাবেচা বন্ধ থাকায় বাধ্য হয়ে ফল না কিনেই বাড়ি ফিরতে হল তাঁকে। তাঁর কথায়, ‘‘পুরনো ৫০০-১০০০ টাকার নোট বাতিল হয়েছে। হাতে পর্যাপ্ত খুচরো নোট না থাকায় বেশি করে মাল কিনতে পারছি না। সব মিলিয়ে আমাদের খুচরো ব্যবসাও মার খাচ্ছে।’’ একই অবস্থা মানিকতলা থেকে আসা ফল ব্যবসায়ী গোপাল প্রসাদেরও। বললেন, ‘‘ফলপট্টি বন্ধ থাকায় বাইরে থেকে দ্বিগুণ দামে কিনতে হবে। বিক্রিও করতে হবে বেশি দামে।’’
মেছুয়া ফলপট্টি থেকে গোটা রাজ্য ছাড়াও ফল যায় অসম ও বাংলাদেশে। ক্যালকাটা ফ্রুট মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের তরফে জানানো হয়েছে, পুরনো নোট বাতিল হওয়ায় সারা দেশে একই সমস্যা। বিভিন্ন রাজ্য থেকে লরির বুকিংও বন্ধ করা হয়েছে। নোট সমস্যায় ফলভর্তি গাড়ি আসা অর্ধেক কমেছে। এ রকম চলতে থাকলে এক সপ্তাহ পরে ফলের জোগান তলানিতে ঠেকবে বলে আশঙ্কা ফল ব্যবসায়ীদের।
মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে মেছুয়া ফলপট্টি থেকে মিছিল শুরু করেন প্রায় দু’হাজার ব্যবসায়ী। বুকে কালো ব্যাজ, হাতে পোস্টার, প্ল্যাকার্ড নিয়ে মোদীবিরোধী স্লোগান দিয়ে বড়বাজার, ব্রেবোর্ন রোড, টি-বোর্ড হয়ে এজরা স্ট্রিটে পৌঁছন তাঁরা। সেখান থেকে পোদ্দার কোর্ট হয়ে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, কলুটোলা এবং মহাত্মা গাঁধী রোড হয়ে ফের মেছুয়া ফলপট্টিতে ফেরেন। পর্যাপ্ত ৫০০-১০০ টাকার নোট চালু না হওয়ায় মোদী সরকারের এই সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানান মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা।
এঁদের মধ্যেই এক ব্যবসায়ী প্রদীপকুমার যোশিনা বলেন, ‘‘আমাদের অনেকেরই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নেই। অসংগঠিত ক্ষেত্রে রোজ কেনাবেচার উপরে বাজার চলে। সেটাই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।’’ আর এক ব্যবসায়ী মনোজকুমার সাউ বলেন, ‘‘বিক্রি না হওয়ায় আঙুর, কমলালেবু, তরমুজের মতো প্রচুর ফল পচে যাচ্ছে। তিন-চার দিনের মধ্যে পরিস্থিতি না বদলালে সম্পূর্ণ ব্যবসা বন্ধ করতে বাধ্য হব।’’