প্রতীক্ষায়। — নিজস্ব চিত্র।
গ্রীষ্ম শুরুর সঙ্গে সঙ্গে আবার পানিহাটিতে ফিরে এসেছে সেই চেনা ছবিটাই। বিস্তীর্ণ অংশে দেখা দিয়েছে পানীয় জলের সমস্যা। পাঁচ বছর অপেক্ষার পরেও পানিহাটির সব জায়গায় এখনও গঙ্গার জল পরিশোধন করে সরবরাহ সম্ভব হয়নি।
এত দিন বিটি রোডের পূর্ব দিকের ওয়ার্ডের বাসিন্দারাই জল সমস্যায় ভুগতেন। এ বছর গঙ্গার তীরবর্তী ১, ২, ৩, ৪ ওয়ার্ডগুলিতেও জলের চাপ কমেছে বলে জানাচ্ছেন স্থানীয়েরা। এ ছাড়াও সমস্যা রয়েছে ১২, ২৫, ২৬, ২৭, ২৮, ২৯, ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে। এর মধ্যে ১২, ২৬, ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে কার্যত জল মিলছে না বলে পানিহাটি পুর-কর্তৃপক্ষই স্বীকার করে নিয়েছেন।
বাসিন্দাদের দাবি, এখনই বিভিন্ন এলাকা জলশূন্য হয়ে পড়েছে। কোথাও আবার জল আসছে খুবই সরু ভাবে। অনেক ওয়ার্ড থেকেই ঘোলা জল বেরনোর অভিযোগ আসছে। আতঙ্কিত বাসিন্দারা জানান, গত গরমে পানীয় জল থেকে জন্ডিস, ডায়ারিয়ার মতো জলবাহিত অসুখ ছড়িয়ে ছিল। এ বারও কি একই অবস্থা হবে? এ দিকে, নির্দিষ্ট সময় পার করেও জলপ্রকল্পের কাজ শেষ না করায় বর্তমান বোর্ডের ব্যর্থতাকেই দায়ী করছেন পানিহাটি পুর এলাকার বিরোধী নেতারা।
এত দিন এই পুরসভার ৩৫টি ওয়ার্ডের ভরসা ছিল ভূগর্ভস্থ জল। কয়েক বছর আগে পূর্বতন বাম বোর্ডের সময়েই গঙ্গার জল পরিশোধন করে সরবরাহ করতে জেএনএনইউআরএম-এর অন্তর্গত নিজস্ব জলপ্রকল্পের কাজ শুরু করে পানিহাটি পুরসভা। এই জলপ্রকল্পের দায়িত্বে কেএমডিএ। সংস্থার পক্ষ থেকে জানান হয়েছে, প্রায় ৬০ শতাংশ কাজ হয়ে গিয়েছে। তাই গঙ্গার পরিশোধিত জলের আংশিক সরবরাহ শুরু হয়েছে। এত দিন পুরসভা দিনে তিন বার জল সরবরাহ করত। এ বছর রাতে আরও এক ঘণ্টা অতিরিক্ত জল সরবরাহ করছে পুরসভা। পানিহাটি পুর কর্তৃপক্ষের দাবি, ওই সময়ে চাহিদা কম থাকায় মানুষ প্রয়োজন মতো জল ধরে রাখতে পারবেন। এই ভেবেই ওই ব্যবস্থা। পুরপ্রধান স্বপন ঘোষ বলেন, ‘‘মাটির নীচের জলস্তর নেমে যাওয়ায় প্রতি বছরই এই সমস্যা হয়। পুরসভা দৈনিক ২০টি জলের গাড়ি এলাকায় পাঠিয়ে পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করছে। ইলিয়াস রোড, না টাগড়, ময়রা পাড়া, মিলনগড়, এইচ বি টাউন, পাত্রপুর, ভোম্বলা মোড়ে প্রকল্পের জল সরবরাহ শুরু হয়েছে। পাশাপাশি ভূগর্ভস্থ জলও সরবরাহ করা হচ্ছে।’’
কেএমডিএ-এর জল বিভাগের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘জলপ্রকল্পে ১৩টি ওভারহেড রিজার্ভার রয়েছে। সম্প্রতি সাতটি থেকে জল সরবরাহ শুরু হয়েছে।’’ তিনি জানাচ্ছেন, রেললাইনের নীচ দিয়ে পুরসভার ১০০ ডায়ামিটারের পাইপ সরিয়ে ৩৫০ ডায়ামিটারের পাইপ বসানোর কাজ বাকি আছে। ঘোলা জল নিয়ে তিনি জানান, পুরনো সার্ভিস পাইপগুলিতে পলি জমে রয়েছে। নয়া প্রকল্পে জলের বেগ পুরনো পদ্ধতিতে পাম্পের মাধ্যমে তোলা জলের বেগের থেকে বেশি। ওই বেগে পাইপে জমা পলি ভেঙে প্রবাহিত হচ্ছে। তাতেই ঘোলা জল বেরোচ্ছে। সমস্যা মিটতে দুই-তিন মাস লাগবে।