নীলরতনের সিসিইউ-এ ঢুকতে ‘মানা’

নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ‘ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট’-এ আন্তর্জাতিক সিসিইউ ‘প্রোটোকল’ ভেঙে রোগীর নিকটাত্মীয়দের রোগীর ধারে কাছে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। একটিবার গুরুতর অসুস্থ নিকটাত্মীয়ের মুখ দেখার জন্য আত্মীয়েরা চিকিৎসকদের হাতেপায়ে ধরেও প্রত্যাখ্যাত হচ্ছেন।

Advertisement

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০১৭ ০০:৫৬
Share:

নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ‘ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট’-এ আন্তর্জাতিক সিসিইউ ‘প্রোটোকল’ ভেঙে রোগীর নিকটাত্মীয়দের রোগীর ধারে কাছে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। একটিবার গুরুতর অসুস্থ নিকটাত্মীয়ের মুখ দেখার জন্য আত্মীয়েরা চিকিৎসকদের হাতেপায়ে ধরেও প্রত্যাখ্যাত হচ্ছেন। এই নিয়ম আন্তর্জাতিক প্রোটোকলের সম্পূর্ণ বিরোধী বলে দাবি করে স্বাস্থ্য দফতরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন এক সরকারি ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিশেষজ্ঞ তুষারকান্তি সাহা এবং তাঁর পরিবার। এ ব্যাপারে শনিবার এন্টালি থানাতেও এফআইআর করেছেন তিনি।

Advertisement

চিকিৎসক তুষারকান্তিবাবু নিজে দীর্ঘদিন বিসি রায় শিশু হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ারের নোডাল অফিসার ছিলেন। বর্তমানে তিনি মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজের ‘পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট’ (পিকু)-এর নোডাল অফিসার।

তুষারবাবুর শাশুড়ি ৭৬ বছরের সবিতা বন্দ্যোপাধ্যায় গত ২০ মার্চ এনআরএসের সিসিইউতে ভর্তি হন। ২৬ মার্চ তাঁর মৃত্যু হয়। তুষারকান্তিবাবু ও তাঁর পরিবার স্বাস্থ্যসচিব রাজেন্দ্র শুক্ল, বিশেষ সচিব তমাল ঘোষ এবং স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথীকে দেওয়া অভিযোগপত্রে লিখেছেন, সিসিইউতে রোগী ভর্তি হওয়ার পরে তাঁর কী চিকিৎসা হচ্ছে, চিকিৎসায় গাফিলতি হচ্ছে কি না, এমনকী রোগীর কখন মৃত্যু হচ্ছে— কিছুই বাড়ির লোক জানতে পারছেন না। সরাসরি মৃতদেহ তাঁদের দেখানো হচ্ছে।

Advertisement

তুষারকান্তিবাবুর কথায়, ‘‘আমি নিজে ক্রিটিক্যাল কেয়ার স্পেশ্যালিস্ট। আমি নিশ্চিত, পরিষেবার ফাঁকফোকরগুলি যাতে রোগীর আত্মীয়দের নজরে না আসে, সেই কারণে এনআরএসের সিসিইউয়ে রোগীর নিকটাত্মীয়দের প্রবেশ নিষিদ্ধ হয়েছে। আসলে সেখানে রোগীদের চিকিৎসায় ব্যাপক গাফিলতি হচ্ছে। আমরা তদন্ত চাইছি।’’

এক সরকারি ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিশেষজ্ঞের থেকে এত গুরুতর আভিযোগ পেয়ে নড়েচড়ে বসেছে স্বাস্থ্য দফতর। এনআরএসের সিসিইউ-র ইনচার্জ সুব্রত পাল কিন্তু নির্দ্বিধায় বলেছেন, ‘‘আমাদের হাসপাতালের এটাই নীতি। আমরা সিসিইউতে কোনও রোগীর আত্মীয়কে ঢুকতে দিই না।’’ যা শুনে বিস্মিত খোদ এনআরএসের অধ্যক্ষ দেবাশিস ভট্টাচার্যের উক্তি, ‘‘রোগীকে এক বার সিসিইউতে ঢোকানোর পরে বাড়ির লোক আর তাঁকে দেখতে পারবেন না, তাঁর সম্পর্কে কিচ্ছু জানতে পারবেন না, এটা হতে পারে নাকি! কে এই নিয়ম করল? আমি গোটা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি।’’

বিষয়টি শুনে হতবাক রাজ্যের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটের নোডাল অফিসার আশুতোষ ঘোষও। তিনি ও আরজিকরের ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিশেষজ্ঞ সুগত দাশগুপ্ত দু’জনেই বলেন, পৃথিবীর সর্বত্র নির্দিষ্ট সময় ও সংক্রমণ মোকাবিলা নিয়ম মেনে রোগীর আত্মীয়দের সিসিইউতে ঢুকতে দেওয়াটাই নিয়ম। তাঁদের সেই সময়ে হাত ধুতে হয়, মুখে মাস্ক

এবং অনেক ক্ষেত্রে গাউন ও আলাদা চপ্পল পরতে হয়। রোগীর আত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেও এটা প্রয়োজনীয়। রাজ্যের সব সরকারি হাসপাতালে এটা মানা হয়। এনআরএসে কেন এটা বন্ধ করল, বোধগম্য হচ্ছে না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement