আটকে গিয়েছে রাজ্যের প্রথম সবুজ বাজি তৈরির কাজ। প্রতীকী ছবি।
পরীক্ষায় পাশ করেও আটকে গিয়েছে এ রাজ্যের প্রথম সবুজ বাজি তৈরির কাজ। উৎসবের মরসুম শুরু হওয়ার আগে এমনই অভিযোগ বাজি ব্যবসায়ীদের অনেকের। তাঁদের দাবি, ‘ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট’ (নিরি)-এর নাগপুরের দফতর থেকে গত জুলাইয়েই পাশ করে এসেছে এ রাজ্যে তৈরি সবুজ বাজি। এখানকার ১০ জন ব্যবসায়ীকে সবুজ বাজি তৈরির ছাড়পত্রও দেওয়া হয়েছে নিরি-র দফতর থেকে। কিন্তু তার পরেও সব আটকে গিয়েছে দমকলের ছাড়পত্র না মেলায়। সূত্রের খবর, দমকল দফতরে যোগাযোগ করা হলে সেখান থেকে জানানো হয়েছে, আগে পরিবেশ দফতরের ছাড়পত্র প্রয়োজন। সব মিলিয়ে কবে এই রাজ্যে সবুজ বাজি তৈরির কাজ শুরু হবে, তার উত্তর নেই।
যে কোনও উৎসবের মরসুমেই বাজি ঘিরে বিতর্ক তৈরি হচ্ছে গত কয়েক বছর ধরে। কলকাতা হাই কোর্টের একটি রায়ের পরে সুপ্রিম কোর্টের নতুন রায়ে গত বছর সেই বিতর্ক চরমে পৌঁছয়। হাই কোর্ট সব ধরনের বাজি বিক্রি এবং ফাটানো নিষিদ্ধ করলেও অপেক্ষাকৃত কম দূষণ ছড়ায়, এমন সবুজ বাজি বিক্রি এবং ফাটানোয় ছাড়পত্র দেয় সুপ্রিম কোর্ট। পরিবেশবিদদের বড় অংশই শীর্ষ আদালতের ওই রায়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে প্রশ্ন তোলেন, সবুজ বাজির তকমা সেঁটে নিষিদ্ধ বাজিই বিক্রি হবে না তো?
তাঁদের যুক্তি ছিল, সবুজ বাজি কী, সে ব্যাপারে জনমানসে তেমন কোনও ধারণাই নেই। যাচাই করার কাজে পুলিশেরও সে ভাবে প্রশিক্ষণ নেই। পরিসংখ্যান দিয়ে তাঁরা জানান, এ রাজ্যে কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা ‘পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড এক্সপ্লোসিভ অর্গানাইজ়েশন’ (পেসো)-এর ছাড়পত্র পাওয়া বাজি কারখানার সংখ্যা মাত্র তিনটি। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তালিকায় রয়েছে ৩৭টি বাজি কারখানা। বাকি সব কারখানা অবৈধ। স্বীকৃত কারখানাগুলির কোনওটিতেই সবুজ বাজি তৈরি হয় না। তা ছাড়া, এমন বাজি তৈরির জন্য নিরি-র ছাড়পত্র লাগে।
এই বাধা এড়াতেই চলতি বছরে সবুজ বাজি তৈরির প্রশিক্ষণ নেওয়ার বিষয়ে আগাম তৎপর হন বাজি ব্যবসায়ীরা। বাজি ব্যবসায়ী এবং কলকাতা পুলিশের কর্তারা যৌথ ভাবে যোগাযোগ করেন নিরি-র সঙ্গে। যার পরিপ্রেক্ষিতে গত জুলাই মাসে কলকাতায় আসেন নিরি-র প্রধান বিজ্ঞানী সাধনা রাইলু। সঙ্গে ছিলেন নিরি-র আরও পাঁচ বিজ্ঞানী। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাজি তৈরির জায়গাগুলিতে গিয়ে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেন তাঁরা। প্রশিক্ষণ শেষে নুঙ্গির ১০ জন ব্যবসায়ী নিজেদের তৈরি ফুলঝুরি, রংমশাল, চরকি ও তুবড়ি পরীক্ষার জন্য নিরি-র অফিসে পাঠান। বাজি ব্যবসায়ীদের সংগঠন সূত্রের খবর, নিরি-র দফতরে একাধিক পরীক্ষার পরে সব ক’টি বাজিই পাশ করেছে। নিরি এর পরে ওই ব্যবসায়ীদের সবুজ বাজি তৈরির ছাড়পত্র দেয়। কিন্তু তার পরেই জটিলতা তৈরি হয় ফায়ার লাইসেন্স পাওয়ার ক্ষেত্রে।
‘পশ্চিমবঙ্গ বাজি শিল্প উন্নয়ন সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক শুভঙ্কর মান্না বলেন, ‘‘গত মঙ্গলবারই দমকলমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছি আমরা। তিনি সাহায্যের আশ্বাস দিলেও তাঁর দফতর থেকে কাজ এগোচ্ছে না। ২০২১ সালের কোর্টের নির্দেশকে হাতিয়ার করে এখনও বলা হচ্ছে, সব রকমের বাজি তৈরি ও বিক্রি এ রাজ্যে নিষিদ্ধ। এর পরে পরিবেশ দফতর থেকে ছাড়পত্র নিয়ে আসতে বলা হয়েছে।’’ শুক্রবারই পরিবেশ দফতরে যোগাযোগ করেন বাজি ব্যবসায়ীরা। সেখানেও আবেদন করা হয়েছে বলে খবর। সবুজ বাজি তৈরির পরীক্ষায় পাশ করা এক ব্যবসায়ী বললেন, ‘‘শুধু কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী এলাকাতেই প্রায় ৫০০ বাজি কারখানা রয়েছে। প্রশিক্ষণ নিয়ে তাদের অনেকেই এ বার আইন মেনে সবুজ বাজি তৈরি করতে চাইছে। কিন্তু অনুমতি না মিললে তারা ফের সেই বেআইনি বাজি তৈরির পথে হাঁটতে পারে। শুরু হতে পারে বাজির অবাধ বেআইনি কারবার।’’