২২ জানুয়ারি অযোধ্যায় নবনির্মিত রামমন্দিরে রামের মূর্তির প্রাণ প্রতিষ্ঠা। —ফাইল চিত্র।
গত কয়েক দিন ধরে রাজ্যের চিকিৎসক মহলের একাংশের মধ্যে চলেছে ‘সহকর্মী-সম্পর্ক অভিযান!’ তাতে অযোধ্যা থেকে আনা প্রসাদী চাল, রামের ছবি এবং রামমন্দিরের উদ্বোধনের দিন অযোধ্যায় উপস্থিত থাকার আমন্ত্রণপত্র সহকর্মীদের মধ্যে বিলি করেছেন বিজেপি-পন্থী চিকিৎসকেরা। এ বার আগামী ২২ জানুয়ারি অযোধ্যায় নবনির্মিত রামমন্দিরে রামের মূর্তির প্রাণ প্রতিষ্ঠা উপলক্ষে কলকাতার একাধিক প্রথম সারির কর্পোরেট হাসপাতালে এবং রাজ্যের একাধিক কেন্দ্র-পরিচালিত হাসপাতালে এই চিকিৎসকেরা রামের পুজোর আয়োজন করতে চলেছেন।
কেন্দ্রীয় সরকারি হাসপাতালগুলির কর্তারা এ ব্যাপারে খুব একটা রাখঢাক করছেন না। তবে, বিভিন্ন কর্পোরেট হাসপাতালের কর্তারা কিছুটা হলেও সতর্ক এবং কুণ্ঠিত। হাসপাতালের চিকিৎসকদের একাংশের এই কর্মসূচি রাজ্য সরকার কী ভাবে নেবে, তা ভেবে তাঁরা খানিক শঙ্কিতও বটে। এ রাজ্যে তাঁদের ব্যবসা করে খেতে হবে। তাই তাঁরা সরাসরি এই পুজোর কর্মসূচিকে সমর্থন করতে পারছেন না। আবার যে হেতু জাতীয় স্তরেও তাঁদের একাধিক ব্যবসা এবং হাসপাতাল রয়েছে, ফলে কেন্দ্রকেও ঘাঁটাতে সাহস পাচ্ছেন না। অভূতপূর্ব এই উভয়-সঙ্কটে পড়ে আপাতত নীরব থাকাটাই ঠিক মনে করছেন তাঁরা। বিজেপির ডাক্তার সেলের পশ্চিমবঙ্গ শাখার আহ্বায়ক, চিকিৎসক শারদ্বত মুখোপাধ্যায় যেমন আমরি হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত। তিনি জানিয়েছেন, আমরির সল্টলেক শাখায় ২২ তারিখ রামের পুজো হবে। পুজো হবে অ্যাপোলো হাসপাতালেও। দুই হাসপাতালেই নিজস্ব মন্দির রয়েছে। সেখানে নিত্যপুজো হয়। সেখানেই রামের ছবি এনে পুজোর আয়োজন করা হয়েছে। শারদ্বতের কথায়, ‘‘আগেই আমরা প্রসাদী চাল ও আমন্ত্রণপত্র সহকর্মী চিকিৎসকদের মধ্যে বিলি করেছি এবং ২২ তারিখ হাসপাতালের পুজোয় অংশ নিতে আহ্বান জানিয়েছি। আমরির সল্টলেক শাখায় যে মন্দির আছে, সেখানকার কৃষ্ণ মূর্তির পাদদেশে রামের ছবি রেখে পুজো হবে। রাতে পঞ্চপ্রদীপ জ্বালানো হবে।’’ যদিও এ ব্যাপারে আমরি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেন, ‘‘আমাদের কাছে এমন কোনও কর্মসূচির খবর নেই।’’ শারদ্বতের বক্তব্য, ‘‘কর্তৃপক্ষের তো এ ব্যাপারে কিছু বলার থাকতে পারে না। এতে রোগী বা পরিষেবার কোনও ক্ষতি হচ্ছে না। প্রত্যেকেরই পছন্দ অনুযায়ী ধর্মাচরণের অধিকার আছে।’’
অ্যাপোলো হাসপাতালের চিকিৎসক তন্ময় মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘অ্যাপোলোর একতলায় বড় মন্দির রয়েছে। সেখানেই চিকিৎসকেরা ২২ তারিখ রামের ছবি রেখে পুজোর আয়োজন করেছেন। এর জন্য হাসপাতালের ‘ডিরেক্টর অব মেডিক্যাল সার্ভিসেস’ সুরিন্দর সিংহ ভাটিয়া ও মেডিক্যাল সুপার পার্থ ভট্টাচার্যকে আমরা আমন্ত্রণপত্রও দিয়ে এসেছি।’’ যদিও এ ব্যাপারে অ্যাপোলো কর্তৃপক্ষের বক্তব্য জানা যায়নি। আবার বেলভিউ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ উত্তর দিয়েছেন কিছুটা হেঁয়ালি করে। তাঁদের হাসপাতালের মন্দিরে রামের পুজো হচ্ছে কি না, তা জানতে চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু উত্তরে হ্যাঁ বা না, কিছুই বলতে চাননি হাসপাতালের আধিকারিক প্রদীপ টন্ডন। ঘুরিয়ে উত্তর দিয়েছেন, ‘‘আমাদের মন্দিরে কৃষ্ণ, নারায়ণ আছেন। নাম অনেক হলেও ভগবান তো এক। রোজ পুজো হয়, সোমবারও হবে।’’
কেন্দ্রীয় সরকারি হাসপাতালগুলির মধ্যে জোকা ইএসআই হাসপাতালের চিকিৎসক প্রভাত সিংহ বললেন, ‘‘আমাদের হাসপাতালে ২২ তারিখ রামের পুজোর আয়োজন করা হয়েছে। প্রসাদী চাল ও রামের ছবি পাঠিয়ে প্রত্যেক চিকিৎসককে হাজির থাকতে বলা হয়েছে। প্রদীপ জ্বালানো হবে।’’ কলকাতার বনহুগলির ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর লোকোমোটর ডিজ়এবিলিটিজ়’-এর অধিকর্তা ললিত নারায়ণ বলেন, ‘‘সোমবার রাম মন্দিরের উদ্বোধন উপলক্ষে আমাদের ক্যাম্পাসে ছাত্রছাত্রীরা প্রায় ঘণ্টা দুয়েকের অনুষ্ঠান করবে। রামযাত্রা পুজো হবে।’’
বিভিন্ন হাসপাতালে এই আয়োজন সম্পর্কে তৃণমূলের চিকিৎসক-নেতা শান্তনু সেনের মন্তব্য, ‘‘বিজেপি রামের নামে রাজনীতি করছে। কিন্তু চিকিৎসকেরা মানুষের সেবা করার জন্য শপথ নিয়ে আসেন। তাঁদের এই আচরণ শোভা পায় না।’’