খাতায়কলমে ২০১৮ সালের পর থেকে ভাড়া বাড়েনি বেসরকারি বাস, মিনিবাসের। ফাইল ছবি।
খাতায়কলমে ২০১৮ সালের পর থেকে ভাড়া বাড়েনি বেসরকারি বাস, মিনিবাসের। অথচ বাসে উঠলেই পুরনো ভাড়া ৭-৮ টাকার বদলে যাত্রীদের গুনতে হচ্ছে ১০-১২ টাকা। তালিকা ছাড়াই ওই ভাড়ার কার্যত ‘প্রচলন’ হয়ে গিয়েছে বলে জানাচ্ছেন বাসমালিক সংগঠনের একাংশ। তবে সম্প্রতি বেসরকারি বাসের ভাড়া সংক্রান্ত একটি মামলায় উচ্চ আদালত নির্দেশ দিয়েছে, সমস্ত বেসরকারি বাসে ২০১৮ সালের ভাড়ার তালিকা ঝোলাতে হবে এবং সেই অনুযায়ী ভাড়া নিতে হবে। ওই নির্দেশের পরে পরিবহণমন্ত্রীও জানিয়েছেন, বাসে ভাড়ার তালিকা টাঙানো নিয়ে নজরদারি চালাবে সরকার। আর এতেই বেঁকে বসেছেন বাসমালিকেরা।
এত দিন খাতায়কলমে ও বাস্তবের ভাড়ার মধ্যে ফারাক থাকলেও বাসমালিকেরা দিব্যি মানিয়ে নিয়েছিলেন। কিন্তু নতুন নির্দেশ প্রকাশ্যে আসতেই ভাড়া বৃদ্ধির দাবিতে ফের সরব হয়েছে বাসমালিক সংগঠনগুলি। ইতিমধ্যেই ভাড়া বৃদ্ধি সংক্রান্ত দাবি বিবেচনার জন্য সরকারকে তিন সপ্তাহ সময় দিয়ে গত ২৮ এপ্রিল চিঠি দিয়েছে ‘জয়েন্ট ফোরাম অব ট্রান্সপোর্ট অপারেটর্স’। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সমস্যার সুরাহা না হলে রাস্তা থেকে বাস উধাও হয়ে যাবে বলে কার্যত সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়েছে ওই ফোরামের অন্তর্গত দু’টি সংগঠন— ‘সিটি সাবার্বান বাস সার্ভিস’ এবং ‘অল বেঙ্গল বাস মিনিবাস সমন্বয় সমিতি’।
অতিমারি পরিস্থিতিতে যাত্রীদের উপরে বর্ধিত ভাড়ার বোঝা চাপাতে না চাওয়ার সরকারি সিদ্ধান্তকে মেনে নিয়েও বাসমালিকদের একাংশ জানাচ্ছেন, গত কয়েক বছরে জ্বালানির অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ছাড়াও বিমা, যন্ত্রাংশ এবং রক্ষণাবেক্ষণের খরচ বেড়েছে বহু গুণ। ফলে পুরনো ভাড়ায় বাস চালানো অসম্ভব। ‘অল বেঙ্গল বাস মিনিবাস সমন্বয় সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক রাহুল চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অনুদান নিয়ে আমাদের বাস চালাতে হবে কেন? বাসের ভাড়া সরকার নির্ধারণ করে দিলেই তো আর সমস্যা থাকে না।’’ এর আগেও কিছু রুটে ভাড়া নিয়ে অভিযোগের ভিত্তিতে সরকারি স্তরে ধরপাকড় শুরু হতেই রাস্তা থেকে উধাও হয়েছিল বাস। উচ্চ আদালত যে মামলার রায়ে বাসে ভাড়ার তালিকা টাঙানোর নির্দেশ দিয়েছে, তার পাশাপাশি ভাড়া বৃদ্ধির দাবি নিয়ে আসানসোল মিনিবাস অ্যাসোসিয়েশনের করা আরও একটি মামলা আদালতে বিচারাধীন। দু’টি মামলাকে কেন একত্রে আনা হয়নি, সেই প্রশ্ন তুলেছে ওই সংগঠন। এ নিয়ে রাজ্য সরকারকে চিঠি দেওয়ার পাশাপাশি, বিষয়টি আদালতের নজরে আনার কথাও জানিয়েছেন সংগঠনের নেতৃত্ব। চলতি ব্যবস্থায় গণপরিবহণের স্বাস্থ্য ফেরানো সম্ভব নয় বলেও জানাচ্ছেন তাঁরা।
ফোরামের অন্যতম সদস্য, ‘সিটি সাবার্বান বাস সার্ভিস’-এর টিটু সাহা বলেন, ‘‘ভাড়া নিয়ে লুকোচুরি করতে হবে কেন? ন্যায্য ভাড়া ঠিক করে দেওয়া হোক।’’ অতিমারির পরে দু’বার ভাড়া পর্যালোচনার জন্য সরকারি স্তরে কমিটি গড়া হলেও সেই রিপোর্ট কেন প্রকাশ্যে আনা হল না বা ওই সুপারিশ কেন কার্যকর করা হল না, সেই প্রশ্নও তুলেছেন তিনি। ‘অল বেঙ্গল বাস মিনিবাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সাধারণ সম্পাদক প্রদীপনারায়ণ বসু বলেন, ‘‘ভাড়া না বাড়ালে বাস রাস্তায় রাখা যাবে না। ক্ষতি স্বীকার করে কেউ বাস চালাবেন না।’’
পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী অবশ্য মানুষের উপরে বোঝা না চাপানোর ‘সরকারি নীতি’র কথাই বলছেন। তাঁর কথায়, ‘‘বাস ভাড়া বাড়ানো হবে না। কোর্টের নির্দেশ মেনে বাসে তালিকা টাঙানোর নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। যাঁরা তা মানবেন না, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতিমধ্যে মেদিনীপুরে একটি বাসে ১০ টাকার বদলে ২০ টাকা ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ পেয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অভিযুক্ত বাসের ১০ হাজার টাকা জরিমানাও হয়েছে।’’