—প্রতীকী ছবি
ফুলের বাজারেও করোনা-কাঁটা! দীর্ঘ লকডাউনের মধ্যে লোকসানের ভয়ে চাষে তেমন আগ্রহ দেখাননি রাজ্যের ফুল চাষিরা। শীতের শুরুতে বিয়ের মরসুম চলে এলেও ফুলের জোগানে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। তাই ফুলের দামও বেড়ে চলেছে। ‘সারা বাংলা ফুল চাষি ও ফুল ব্যবসায়ী সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক নারায়ণচন্দ্র নায়েক বললেন, ‘‘গত বছর এই সময়ে কেজি প্রতি রজনীগন্ধা ফুলের দাম ছিল ২০০ টাকা। এ বছর ওই ফুল বিকোচ্ছে ৪০০ টাকায়। গত বার ১০০টি গোলাপের দাম ছিল ৪০০ টাকা। এ বার তা ৭০০ ছুঁয়ে ফেলেছে। লকডাউনের জন্য ফুলের চাষ সে ভাবে না হওয়ায় দাম এতটা চড়া হয়ে গিয়েছে।’’
সারা দেশের মধ্যে ফুল উৎপাদনে পশ্চিমবঙ্গ প্রথম সারিতে। দুই মেদিনীপুর, হাওড়া এবং উত্তর ২৪ পরগনাতেই মূলত ফুলের চাষ হয়। এ রাজ্যের ফুল প্রচুর পরিমাণে পাঠানো হয় ভিন্ রাজ্যে। দিল্লি, মহারাষ্ট্র ছাড়াও এখানকার ফুল যায় বিহার এবং উত্তরপ্রদেশে। পূর্ব মেদিনীপুরের ফুল চাষি মলয় পাড়ুই জানালেন, এ বছর করোনার আবহে ফুল বিক্রি কতটা হবে, তা বুঝতে পারছিলেন না তিনি। তাই চাষও বেশি পরিমাণে করেননি। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘করোনার ভয়ে ফুলের চাষ বেশি করে না করায় কয়েক লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়ে গেল। আমার ফুল বিদেশেও যেত।’’
উত্তর ২৪ পরগনার দত্তপুকুরের ফুল চাষি আবুল বাশার তাঁর বিশাল পলিহাউসে জারবেরা ও গোলাপ চাষ করেন। আবুল জানালেন, তাঁর পলিহাউসের দু’হাজার বর্গমিটার জুড়ে ৪০ থেকে ৪৪ হাজার জারবেরা ও বাকি দু’হাজার বর্গমিটারে দশ হাজার গোলাপ চাষ হয়। কিন্তু লকডাউনের কারণে গত এপ্রিল মাস থেকে ফুল ফুটলেও তা ছিঁড়ে ফেলে দিতে হয়েছে। আবুলের কথায়, ‘‘ফুল ফুটলেও তা ছিঁড়ে ফেলে দিতে হয়েছে। কারণ, না ছিঁড়লে পুরো গাছ পোকায় নষ্ট করে দিত। এ বার আমার সব মিলিয়ে প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে।’’
ওড়িশার সেঞ্চুরিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষিবিজ্ঞানের অধ্যাপক সগর মৈত্র বললেন, ‘‘এ বার লকডাউনের কারণে ফুল উৎপাদন কম হয়েছে। বিভিন্ন রাজ্যে পরিবহণ পরিষেবা এখনও পুরোপুরি স্বাভাবিক না হওয়ায় প্রান্তিক ফুল চাষিদের প্রচুর ক্ষতি হয়েছে।’’