প্রশ্নে হেরিটেজ

সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ভাঙা হল প্রেসিডেন্সির গেট

ভেঙে দেওয়া হল প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক। সেখানে তৈরি হবে বড় গেট। যাতে দমকলের গাড়ি অনায়াসে ভিতরে ঢুকতে পারে। বুধবারই পে-লোডার দিয়ে পুরনো গেট তুলে সরিয়ে ফেলা হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:৩১
Share:

বুধবার পে-লোডার দিয়ে ভেঙে দেওয়া হচ্ছে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক। — নিজস্ব চিত্র।

ভেঙে দেওয়া হল প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক। সেখানে তৈরি হবে বড় গেট। যাতে দমকলের গাড়ি অনায়াসে ভিতরে ঢুকতে পারে। বুধবারই পে-লোডার দিয়ে পুরনো গেট তুলে সরিয়ে ফেলা হয়।

Advertisement

প্রয়োজনের নিরিখে এই সিদ্ধান্ত কতটা সঙ্গত সেই প্রশ্ন ছাপিয়ে সামনে এসেছে একটি বিতর্ক, প্রেসিডেন্সির মতো হেরিটেজ ভবনের গেট এ ভাবে ভেঙে ফেলা যায় কি?

প্রেসিডেন্সির রেজিস্ট্রার দেবজ্যোতি কোনার জানিয়েছেন, অগ্নিকাণ্ড ঘটলে দমকলের গাড়ি ঢোকার মতো পরিসর ছিল না। তাই মূল ফটক ভেঙে বড় করা প্রয়োজন। তিনি আরও জানান, প্রেসিডেন্সির সামনের ফুটপাথে মোট যে ৯২টি বইয়ের দোকান আছে, তাদের সব ক’টিকেই নতুন করে বানিয়ে দেওয়া হবে। তাঁর বক্তব্য, ‘‘এর জন্য প্রেসিডেন্সির খরচ হবে প্রায় ৭০ লক্ষ টাকা। রাত-দিন কাজ করে খুব তাড়াতাড়ি গোটা বিষয়টি শেষ করা হবে।’’

Advertisement

কলেজ স্ট্রিটে প্রেসিডেন্সি কলেজ ভবনের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়েছিল ১৮৭৩ সালে। ওই ভবনই এখন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যলয়। সেখানকার ‘ডিসটিংগুইসড প্রফেসর ইন হিউম্যানিটিজ’ স্বপন চক্রবর্তী এ দিন জানান, ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের কিছু পরেই মূল ফটকটি তৈরি হয়।

কলকাতার হেরিটেজ ভবনগুলির তালিকায় প্রেসিডেন্সির স্থান উপরের সারিতে। এটি ‘গ্রেড ১’ তালিকাভুক্ত। যার অর্থ, এই ভবনের কোথাও কোনও অংশে কোনও রকম পরিবর্তন করা সাধারণ ভাবে চলবে না। শেষ ক্ষেত্রে কোথাও কিছু বদল করতে হলে হেরিটেজ কমিশনের কাছ থেকে আগাম অনুমতি নিতে হবে। রেজিস্ট্রারের দাবি, হেরিটেজ কমিশনের স্থপতি পার্থরঞ্জন দাসকে সব জানিয়েই যা করার, তা করা হয়েছে।

এমনই ছিল সেই গেট। ফাইল চিত্র।

যদিও হেরিটেজ বিশেষজ্ঞ দেবাশিস বসুর প্রশ্ন, ‘‘প্রেসিডেন্সির গোটা ক্যাম্পাসই তো হেরিটেজ। গেট কি তার থেকে আলাদা হয়? এ ভাবে কি ভাঙা যায়?’’ হেরিটেজ কমিশনের অন্যতম সদস্য কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের পাল্টা যুক্তি, ‘‘সব ক্ষেত্রেই প্রয়োজন ও বাস্তবতার দিকটি বিবেচনা করা জরুরি।’’ বিষয়টি বিশদ না জেনে নির্দিষ্ট ভাবে ‘ভাল-মন্দ’ কিছু বলতে চাননি প্রেসিডেন্সির প্রাক্তনী এবং বর্তমানে মেন্টর গ্রুপের চেয়ারপার্সন সুগত বসু। তবে তাঁরও বক্তব্য, ‘‘১৮৭৩ সালে কলেজ পত্তনের পড়ে যে গেট বসেছে, তাকে হেরিটেজ হিসাবে গণ্য না করার কোনও কারণ নেই।’’

মাস দু’য়েক আগে এই মূল ফটকের সম্প্রসারণের জন্য পাঁচটি বইয়ের দোকান সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন। কিন্তু অন্যত্র যেতে অস্বীকার করেন ওই পাঁচ বই বিক্রেতা। শেষে পুলিশের হস্তক্ষেপে ঠিক হয়েছিল, পাশের স্টলগুলি থেকে জায়গা কেটে ওই পাঁচটি স্টলকে রাখার ব্যবস্থা করা হবে। এ দিন আপাতত ওই পাঁচটি স্টলকে সরিয়ে ফুটপাথের অন্য প্রান্তে নিয়ে যাওয়া হয়। এর পরে বুধবারে মূল ফটক পে-লোডার দিয়ে ভেঙে দেওয়া হয়।

প্রেসিডেন্সির ২০০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আগামী জানুয়ারি মাসে রয়েছে ঠাসা কর্মসূচি। তার আগেই মূল ফটক তৈরি ও ফুটপাথের দোকানগুলি নতুন করে তৈরি হয়ে যাওয়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ চালাচ্ছেন কর্তৃপক্ষ।

কলেজ স্ট্রিটের ঐতিহ্যমণ্ডিত এই দোকানগুলিতে পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি দুষ্প্রাপ্য নানা বইয়ের খোঁজে বইপ্রেমীরা নিয়মিত আসেন। যে পাঁচটি দোকান এ দিন সরানো হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে নুরুল মল্লিক, সামিউল আলম মল্লিকের দোকান। এ দিন সামিউল বলেন, ‘‘উচ্ছেদ করা হবে কি না, তা নিয়ে খুব চিন্তায় ছিলাম। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যদি নতুন ভাবে দোকান করে দেন, তা হলে খুবই ভাল হয়।’’

রেজিস্ট্রার জানিয়েছেন, হেরিটেজ কমিশনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করেই নতুন বইয়ের দোকানগুলির নকশা করা হয়েছে। প্রেসিডেন্সির ক্যাম্পাসের সঙ্গে সাযুজ্য রেখেই এই নকশা করা হয়েছে বলে তাঁর দাবি। তবে মূল ফটক চওড়া করতে গিয়ে কাটা পড়েছে ফটকের ডান দিকে থাকা বহু দিনের পুরনো বট গাছটি। এর বিরুদ্ধে পড়ুয়ারা এ দিন ক্যাম্পাসে পোস্টারও লাগান।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement