ফাইল চিত্র।
আগরতলা থেকে কলকাতা ফিরে বিমানবন্দরে নেমে প্রিপেড বুথে ট্যাক্সি ভাড়া করেছিলেন ব্রহ্মপুরের বাসিন্দা শুভ্রশেখর ঘোষ। ভাড়ার ৪৬০ টাকা মিটিয়ে রসিদ নেওয়ার পরে নিশ্চিন্ত ছিলেন যে আর সমস্যায় পড়তে হবে না। কিন্তু ট্যাক্সিতে উঠে গড়িয়ার কাছাকাছি এসে চালক জানতে চান, আরও কতটা পথ যেতে হবে? নির্দিষ্ট আবাসনের চৌহদ্দি পর্যন্ত পৌঁছে দিতে অতিরিক্ত ৬০ টাকা ভাড়া দাবি করেন তিনি। যাত্রী আপত্তি করলে খারাপ রাস্তা এবং ফিরতি পথে খালি গাড়ি নিয়ে ফেরার যুক্তি দেখান চালক। এই নিয়ে বচসার পরিস্থিতি তৈরি হয়। পরে ৪০ টাকা বাড়তি দেওয়ায় ট্যাক্সিচালক আবাসনের ঠিকানা পর্যন্ত যেতে সম্মত হন।
সম্প্রতি রাধিকাপুর এক্সপ্রেস থেকে কলকাতা স্টেশনে নেমে ট্যাক্সির খোঁজ করতে কাছাকাছি প্রিপেড বুথে যান বজবজের সুব্রত চক্রবর্তী। কিন্তু ট্যাক্সি ভাড়া করতে গিয়ে তাঁকে অপেক্ষা করতে হয় দীর্ঘক্ষণ। অবশেষে প্রায় সাতশো টাকা ভাড়ায় ট্যাক্সি পেলেও চালক আরও অতিরিক্ত একশো টাকা দাবি করেন। ৭০ টাকা অতিরিক্ত দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছন যাত্রী।
হাওড়া, শিয়ালদহ, কলকাতা স্টেশন বা বিমানবন্দরের মতো জায়গায় আসা যাত্রীরা এত দিন প্রিপেড ট্যাক্সির পরিষেবা এবং ভাড়া নিয়ে অনেকটাই নিশ্চিন্ত থাকতেন বলে দাবি। সম্প্রতি ডিজ়েলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির জেরে প্রিপেড বুথ এড়িয়ে চলছেন ট্যাক্সিচালকেরা। পুরনো ভাড়ার হারে যাত্রী তোলার বদলে তাঁরা স্টেশন চত্বরে মৌখিক দরাদরির ভিত্তিতে যাত্রী তোলার দিকে ঝুঁকছেন বেশি। ফলে ট্যাক্সি চালকদের মধ্যে প্রিপেড বুথে যাত্রী তুলতে লাইন দেওয়ার প্রবণতা হু হু করে কমছে। কলকাতা বিমানবন্দর ছাড়াও হাওড়া, শিয়ালদহের মতো স্টেশনে ব্যস্ত সময়ের চাহিদা অনুযায়ী ট্যাক্সির জোগান দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন প্রিপেড বুথের দায়িত্বে থাকা ট্যাক্সি সংগঠনের সদস্যেরাও।
শাসক দলের শ্রমিক সংগঠনের ঘনিষ্ঠ ট্যাক্সি সংগঠন, ‘প্রোগ্রেসিভ ট্যাক্সি মেনস ইউনিয়ন’ সূত্রের খবর, অতিমারি পর্বের পর থেকে ডিজ়েলের লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধির জেরে পরিষেবার খরচ অনেক বেড়েছে। বিমা এবং অন্যান্য কর বাবদ খরচও বেড়েছে। একাধিক ট্যাক্সি সংগঠন সূত্রের খবর, বিমা, পথকর এবং অন্যান্য কর মেটাতে গিয়ে বছরে যে খরচের দায় ঘাড়ে চাপে তার পরিমাণ অনেকটাই। প্রতিদিন নথি ঠিক রাখার খরচ গড়ে একশো টাকার বেশি পড়ে বলে দাবি চালকদের। এই অবস্থায় ভাড়া বৃদ্ধি না হওয়ায় চালকদের প্রিপেড ট্যাক্সির বুথে লাইনে দাঁড়ানোর আগ্রহ কমছে।
‘প্রোগ্রেসিভ ট্যাক্সি মেনস ইউনিয়ন’-এর সাধারণ সম্পাদক শম্ভুনাথ দে বলেন, ‘‘প্রতিদিন হলুদ ট্যাক্সির সংখ্যা কমছে। এই অবস্থায় সরকার চালকদের পাশে না দাঁড়ালে ট্যাক্সি হারিয়ে যাবে। গতি-ধারা প্রকল্পের সুবিধা ট্যাক্সি চালকেরা কেউ পাননি। চালকদের সমস্যার কথা ভেবে সরকার বিশেষ প্রকল্প নিলে সমস্যার কিছুটা সুরাহা হতে পারে।’’ তবে শাসক দলের শ্রমিক সংগঠনের অনুগামী হওয়ায় সরাসরি ভাড়া বৃদ্ধির দাবি তিনি জানাতে পারেননি। বাম শ্রমিক সংগঠন এআইটিইউসি-র ট্যাক্সি এবং অ্যাপ-ক্যাব চালক সংগঠনের নেতা নওলকিশোর শ্রীবাস্তব বলেন, ‘‘সরকার ভাড়া না বাড়িয়ে উল্টে ট্যাক্সি চালকদের উপর চড়া হারে জরিমানার বোঝা চাপিয়েছে। এটা নিষ্ঠুর মানসিকতার প্রকাশ। ট্যাক্সির ভাড়া সরকার ঠিক করে না দেওয়ায় যাত্রীদের মতোই ভুগতে হচ্ছে চালকদেরও। এ ভাবে ক্রমে শুধুই নৈরাজ্য বাড়ছে।’’
প্রিপেড বুথে এখন গাড়ির সংখ্যা আগের তুলনায় প্রায় ষাট শতাংশ কমে গিয়েছে বলে ট্যাক্সি চালকদের দাবি। ফলে দ্রুত পদক্ষেপ না করলে যাত্রী পরিষেবা ব্যাহত তো হবেই, এর পাশাপাশি প্রিপেড বুথ তার গুরুত্ব হারাবে বলে আশঙ্কা করছেন শাসক দলের ট্যাক্সি চালক সংগঠনের সদস্যেরা।