কেষ্টপুর খাল

রক্ষণাবেক্ষণ নেই, ধুঁকছে দুই সেতু

বহু চর্চিত সেই সুয়োরানি আর দুয়োরানির গল্প। উল্টোডাঙা থেকে বাগুইআটি যাওয়ার সময়ে বাঁ দিকে যে ছবিটা দেখা যায়, ডান দিকের সঙ্গে তার তফাৎটাও তেমনই চোখে পড়ে।

Advertisement

সোমনাথ চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:১১
Share:

এ ভাবেই চলছে যাতায়াত। — শৌভিক দে

বহু চর্চিত সেই সুয়োরানি আর দুয়োরানির গল্প।

Advertisement

উল্টোডাঙা থেকে বাগুইআটি যাওয়ার সময়ে বাঁ দিকে যে ছবিটা দেখা যায়, ডান দিকের সঙ্গে তার তফাৎটাও তেমনই চোখে পড়ে।

এক দিকে লেকটাউনের মোড়ে বিগ বেনের ধাঁচে ঘড়ি। লেকটাউন থেকে বাঙুর যাওয়ার পথে খালের উপরে সেতু তৈরি হয়েছে। সন্ধ্যা নামলেই সেখানে জ্বলে ওঠে নিয়ন বাতি। ফোয়ারা, নিয়ন ও টুনির মালাতে সাজানো হয়েছে গোলাঘাটা থেকে বাঙুর পর্যন্ত ভিআইপি রোডের বাঁ দিক। দমদম পার্ক থেকে গোলাঘাটা পর্যন্ত ভিআইপি রোড চওড়াও করা হচ্ছে।

Advertisement

ভিআইপি রোডের ডান দিকে অবশ্য চোখে পড়বে অন্য চিত্র। লেকটাউন আর কেষ্টপুর থেকে খাল পেরিয়ে সল্টলেকে যাওয়ার যে দু’টি পায়ে চলার ব্রিজ, সেগুলি রয়েছে জরাজীর্ণ অবস্থায়। অভিযোগ, সংরক্ষণের অভাবে লেকটাউন-সল্টলেক সংযোগকারী সরু ফুটব্রিজটির রেলিং ভেঙে পড়েছে। বাঁশ দিয়ে কোনও রকমে রেলিংটি জোড়া দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে। কেষ্টপুর থেকে সল্টলেক যাতায়াতের লোহার সেতুটি জং ধরে জীর্ণ হয়ে পড়েছে।

লেকটাউন, সল্টলেক, গোলাঘাটা — সবগুলিই তৃণমূল বিধায়ক সুজিত বসু-র এলাকা। অভিযোগ, তিনি নিজের এলাকার এক দিকে নজর না দিয়ে অন্য দিক সাজিয়ে তুলছেন। লেকটাউন, বাঙুর, বাগুইআটি ও কেষ্টপুরে লোক সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে। একই ভাবে সল্টলেক ও আশপাশেও বসতি বাড়ছে। এই এলাকার বহু পড়ুয়া, চাকুরিজীবী প্রতি দিনই ওই দু’টি সেতুর উপর দিয়ে যাতায়াত করেন। ভিড় বাড়ায় সেতুর উপরে চাপ বেড়েছে। আশঙ্কা, যে কোনও সময়ে সেতু দু’টি ভেঙে পড়তে পারে।

সল্টলেকের এ-ডি এবং বি-ডি স্কুলে ছেলে-মেয়েদের নিয়ে নিত্যদিন যাতায়াত করেন শম্পা মণ্ডল, রীতা পাল, মুমতাজ বেগমরা। এঁরা বাঙুর-কেষ্টপুর-লেকটাউনের বাসিন্দা। কেষ্টপুর খালের উপরে ফুটব্রিজের ভেঙে পড়া রেলিং দেখিয়ে তাঁদের অভিযোগ, ‘‘ভয়ে ভয়ে যাতায়াত করতে হয়। সরু সেতু, ভাল করে চলা যায় না। তার উপর দিয়েই সাইকেল নিয়ে যান অনেকে।’’ সল্টলেকের এ-ই ব্লকের পুরনো বাসিন্দা ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায় নিয়মিত ওই সেতু ব্যবহার করেন। তাঁর কথায়, ‘‘সেতুটি চওড়া করা খুব জরুরি। এলাকার বিধায়ককে তা জানানোও হয়েছে।’’

১৯৭২-এ সল্টলেকে কংগ্রেসের এআইসিসি অধিবেশন বসে। তখন ভিআইপি রোড থেকে যাতে সল্টলেকে ঢোকা যায়, সে জন্য সেচ দফতর লেকটাউন-সল্টলেক সংযোগকারী এই কংক্রিটের সেতুটি তৈরি করে। সেতু দিয়ে পাশাপাশি দু’জন হাঁটাই দায়। তার উপরে রয়েছে সাইকেল নিয়ে যাতায়াত। কেষ্টপুর থেকে সল্টলেকে যাওয়ার সেতুটি সেচ দফতর তৈরি করে অনেক পরে। অভিযোগ, রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেটির হালও খারাপ।

লেকটাউন ও কেষ্টপুর থেকে এই দু’টি সেতু সল্টলেকের যেখানে গিয়ে পড়েছে, সেই দু’টি এলাকাই বিধাননগর পুরসভার মেয়র সব্যসাচী দত্তের ওয়ার্ডের মধ্যে পড়ে। বাসিন্দারা তাঁকে সেতু দু’টির অবস্থার কথা জানিয়েছেন। সব্যসাচীবাবু বলেন, ‘‘লেকটাউন ব্রিজ যে কোনও দিন ভেঙে পড়বে বলে স্থানীয় মানুষ অভিযোগ করেছেন। সেচ দফতরকে চিঠিতে তা জানিয়েছি।’’

এ প্রসঙ্গে বিধায়ক সুজিত বসু জানান, ‘‘লেকটাউন, দমদম পার্ক-সহ ওই এলাকার চারটি ব্রিজের বিষয়ে কী করা যায়, তা নিয়ে ২০ ফেব্রুয়ারি বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে লিখিত ভাবে জানিয়েছি। তাঁর সঙ্গে বসে ঠিক করা হবে কী করা যায়। নতুন ব্রিজ তৈরি করা নিয়েও ভাবনা-চিন্তা চলছে।’’

সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘আমরা আপাতত সেতু দু’টি সারিয়ে দেব। নতুন করে করা যায় কি না, তা নিয়ে পরে আলোচনা হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement