ফাইল চিত্র।
মহানগরের বেশির ভাগ বাসিন্দাই বাস বা মেট্রোর মতো গণপরিবহণে যাতায়াত করেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও বায়ুদূষণের তালিকায় কলকাতা দেশের প্রথম সারিতে! শুক্রবার পরিবেশ গবেষণা সংস্থা ‘সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট’ (সিএসই) আয়োজিত এক আলোচনাসভায় উঠে এল এই বৈপরীত্যের কথা। পরিবেশবিদেরা জানান, ডিজেলের মতো জ্বালানি, দূষণ ছড়ানো গাড়ি এবং দূষণ মাপার কেন্দ্রগুলির উপরে নজরদারি না থাকাতেই কলকাতার হাওয়া ক্রমে বিষিয়ে যাচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে নাগরিকদের ফুসফুসে।
বায়ুদূষণ এবং পরিবহণ— এই দুইয়ের সম্পর্ক নিয়ে দেশের ১৪টি শহরে সমীক্ষা করেছে সিএসই। দেখা গিয়েছে, গণপরিবহণ ব্যবস্থায় উপরের সারিতে রয়েছে কলকাতা। আর বায়ুদূষণের তালিকায় এ শহরের স্থান সাত নম্বরে। তাও অন্য মহানগরের থেকে উপরে। পরিবেশকর্মীদের মতে, এই অঙ্কের চুলচেরা হিসেবে খুশি হওয়ার কিছু নেই। দূষণ কমাতে প্রশাসনের কড়া পদক্ষেপ জরুরি। কিন্তু তা হচ্ছে কোথায়?
রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তথ্য বলছে, অক্টোবর থেকে মার্চ, এই ছ’মাস কলকাতায় বায়ুদূষণ মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। গত শীতে কলকাতার দূষণ দিল্লিকেও ছুঁয়ে ফেলেছিল! এ-ও দেখা গিয়েছে, রাত হলেই শহরের দূষণের মাত্রা বাড়তে থাকে। পরিবেশকর্মীদের অভিযোগ, রাতে প্রচুর পণ্যবাহী গাড়ি শহরে ঢোকে। সেগুলিতে নজরদারি থাকে না। এক পরিবেশকর্মীর অভিযোগ, ‘‘শহরে ইচ্ছেমতো দূষণ সংক্রান্ত ছাড়পত্র মেলে। তাই কাগজে-কলমে গাড়ি ঠিক থাকলেও আসলে তা দূষণ ছড়ায়।’’
সিএসই-র এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর অনুমিতা রায়চৌধুরীর বক্তব্য, দূষণে রাশ টানতে ডিজেলচালিত গাড়ি কমাতে হবে। বাড়াতে হবে বিদ্যুৎচালিত বাস। পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত বলছেন, ‘‘ডিজেলচালিত গাড়ি কমবে কী ভাবে? কলকাতায় সিএনজি সরবরাহ নিয়ে টালবাহানা চলছেই।’’ খড়্গপুর আইআইটি-র সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অধ্যাপক ভার্গব মৈত্রের মতে, রাস্তা তৈরি বা সারাইয়ের নামে অনেক সময়েই দীর্ঘদিন রাস্তা আটকে রাখা হয়। তাতে যানজট ও দূষণ বাড়ে।
কলকাতায় এমনিতেই রাস্তার পরিমাণ অন্য শহরের তুলনায় কম। তার উপরে অবৈধ পার্কিং, হকারের দাপটে অনেক জায়গায় রাস্তা সরু। সেগুলি সরানোর দাবিও উঠেছে।
এ দিন অনুষ্ঠানসূচিতে নাম থাকলেও পরিবেশ ও পরিবহণ দফতরের মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী বা তাঁর দফতরের কোনও কর্তা হাজির ছিলেন না। শুভেন্দুবাবু আশ্বাস দিয়েছিলেন, বায়ুদূষণে রাশ টানা সরকারের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। বিদ্যুৎচালিত বাসের সংখ্যা বাড়ানোর কথাও বলেছিলেন তিনি। পরিবেশ দফতরের এক শীর্ষ কর্তার বক্তব্য, দূষণ কমানোর রূপরেখা তৈরির জন্য দূষণের উৎস ও তাদের ভূমিকা জানা দরকার। তাই দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ জাতীয় পরিবেশ প্রযুক্তি গবেষণা সংস্থাকে (নিরি) দিয়ে একটি সমীক্ষা করাচ্ছে। সেই রিপোর্ট অনুযায়ী দূষণ কমানোর দাওয়াই দেওয়া হবে। তবে শুভেন্দুকে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি।