দূষণ-বিষের দাপট বাড়ে শীতেই, ভুগছে শ্বাসযন্ত্র

কাশি আর দমবন্ধ ভাব নিয়ে প্রায় ধুঁকতে ধুঁকতেই ডাক্তারের চেম্বারে পৌঁছলেন এক তরুণী। চেস্ট এক্স-রে দেখে ডাক্তার জানতে চাইলেন, ‘‘দিনে কতগুলো সিগারেট খান?’’ হতভম্ব তরুণী বললেন, ‘‘একটাও নয়।’’ এ বার ডাক্তারের অবাক হওয়ার পালা! ‘নন-স্মোকার’ হয়েও ফুসফুসের এমন হাল হয় কী করে?

Advertisement

সোমা মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০১৭ ০০:৪১
Share:

কাশি আর দমবন্ধ ভাব নিয়ে প্রায় ধুঁকতে ধুঁকতেই ডাক্তারের চেম্বারে পৌঁছলেন এক তরুণী। চেস্ট এক্স-রে দেখে ডাক্তার জানতে চাইলেন, ‘‘দিনে কতগুলো সিগারেট খান?’’ হতভম্ব তরুণী বললেন, ‘‘একটাও নয়।’’ এ বার ডাক্তারের অবাক হওয়ার পালা! ‘নন-স্মোকার’ হয়েও ফুসফুসের এমন হাল হয় কী করে?

Advertisement

এ কথা-সে কথার পরে জানা গেল, রাস্তায় প্রচুর ঘোরাঘুরি হয় ওই তরুণীর। বিশেষত রাতে অনেকটা সময় বাইরে থাকতে হয়। রহস্যভেদ হল তখনই! শহরের বাতাসে দূষণের মাত্রা এখন এমনই যে হু হু করে দূষিত বাতাস ঢুকছে শরীরে। আর তাতেই কার্যত ফুসফুসে ধুলোর আস্তরণ পড়ে গেছে। পোঁচের পর পোঁচ ধুলো জমেছে বুকের ভিতরে। তা থেকেই কাশি, শ্বাসকষ্ট, জ্বর। শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে এই একই সমস্যা নিয়ে এখন ভর্তি বহু মানুষ।

কিছু দিন আগেই দিল্লির হাওয়ায় দূষণের মাত্রা নিয়ে চর্চা চলছিল চারদিকে। কিন্তু কলকাতাও যে খুব তফাতে নেই, তা মেনে নিচ্ছেন পরিবেশবিদরা। জাতীয় পরিবেশ আদালতে এই শহরের দূষণ নিয়ে সম্প্রতি হলফনামাও পেশ করেছে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। পর্ষদের কর্তারা মেনে নিয়েছেন, শীতকালে এই শহরে দূষণের মাত্রা অন্য সময়ের তুলনায় অন্তত তিন গুণ বেশি থাকে। আর এখন তারই মাসুল গুনছেন শহরবাসী।

Advertisement

উপসর্গ কম-বেশি একই। প্রথম দু’-এক দিন কাশি। তার পর জ্বর। তার দিন দুয়েকের মধ্যেই গলা-বুক বসে যাওয়া। অবস্থা এমনই যে কথা বলা তো দূর অস্ত্, স্বাভাবিক নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে। বয়স্ক ও শিশুদের তো বটেই, এমন কী তরুণ-তরুণীদেরও পুরোদস্তুর শয্যাশায়ী করে ফেলছে এই অসুখ। কারও কারও এমন অবস্থা যে কাশি সারা দিনে এক বারও থামছে না। এক ঢোঁক জল খেলেও কাশতে কাশতে বমি হয়ে যাচ্ছে।

চিকিৎসকদের মতে, এই রোগের উপসর্গগুলো অনেকটা ভুল বোঝাচ্ছে মানুষকে। সেটা কেমন? যেমন, এই শীতে কম-বেশি গলা খুসখুস সকলেরই হয়। সঙ্গে হাল্কা জ্বরও আসতে পারে। লোকে ভাবছেন প্যারাসিটামল খেলেই সমস্যা মিটে যাবে। আদতে তা তো হয়ই না, বরং ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গলা পুরো বসে যায়। এমনই অবস্থা দাঁড়ায় যে মনে হয়, গলার ভিতরে যেন পাথরের খণ্ড আটকে আছে। ওই সময়ে রোগীকে দ্রুত নেবুলাইজার দেওয়া ছাড়া বহু সময়েই অন্য পথ থাকে না। শুরু করতে হয় কড়া ডোজের অ্যান্টিবায়োটিকও।

সুস্থ থাকতে

•হঠাৎ করে বেশি গরম বা ঠান্ডায় ঢুকবেন না

•পরিমাণ মতো জল খান

•বদ্ধ জায়গা, ধুলো-ধোঁয়া এড়ান

•সন্ধ্যার পরে রাস্তায় কম ঘুরুন

পালমোনোলজিস্ট রাজা ধর জানাচ্ছেন, শীতকালে বাতাসে ভেসে বেড়ানো দূষিত ধূলিকণা উপরে উঠতে পারে না। তা চক্রাকারে ঘুরতে থাকে। সন্ধ্যার পরে তাপমাত্রা যত কমতে থাকে, ততই ওই ধূলিকণা আরও বেশি করে নাক-মুখ দিয়ে ফুসফুসে ঢুকতে শুরু করে। আর গোটা ‘সিস্টেম’টাকে পর্যুদস্ত করে দেয়। এখন আকছার এমন রোগীরাই আসছেন তাঁর চেম্বারে। রাজাবাবু বলেন, ‘‘সারা বছরে কোনও একটা সময়ে যদি মাস্ক পরে থাকা জরুরি হয়, তা হলে সেটা এই সময়ে। যাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কিছুটা কম, কিংবা যাঁরা হাঁপানি বা ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (সিওপিডি)-এ ভোগেন, তাঁদের ক্ষেত্রে এই সময়টা খুব বিপজ্জনক।’’

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, শিশুরা অনেকেই এই সময়ে কাহিল হয়ে পড়ে। খাবারে অনীহা, জল খেতেও কষ্ট হয়। যতক্ষণ না তাদের নেবুলাইজ করা হচ্ছে, স্বস্তি নেই। শিশু রোগ চিকিৎসক অপূর্ব ঘোষ জানান, এক-দেড় বছরের বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এক ধরনের ভাইরাল সংক্রমণ হয়। প্রথমে হাল্কা জ্বর, নাক দিয়ে জল পড়া, কাশি, তার পরেই শ্বাসকষ্ট। বুকের ভিতরে সাঁই সাঁই শব্দ। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সমস্যাটা সারানোর পথ রীতিমতো জটিল হয়ে পড়ে।

মেডিসিন-এর চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার জানালেন, শীতকালে দূষণের মাত্রা এখন এতই বেড়ে যাচ্ছে যে দূষিত বায়ুকণা ফুসফুসকে রীতিমতো গ্রাস করে নিচ্ছে। ক্ষতি হচ্ছে স্বরযন্ত্রেরও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement