গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
রাত পোহালেই বিধানসভা নির্বাচন মহারাষ্ট্রের। এক দফাতেই ভোট হবে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজ্যের (জনসংখ্যার নিরিখে) ২৮৮টি বিধানসভা কেন্দ্রে। বুধবার একই সঙ্গে দ্বিতীয় তথা শেষ দফার ভোট হবে বাংলার পড়শি রাজ্য ঝাড়খণ্ডের ৮১টির মধ্যে ৩৮টি বিধানসভা আসনেও। সন্ধ্যায় জানা যাবে, দুই রাজ্যের বুথ ফেরত সমীক্ষার ফল। যদিও ভারতীয় গণতন্ত্রের ইতিহাস বলছে, অনেক সময়ই এমন সমীক্ষার সঙ্গে প্রকৃত ফল মেলে না। যার সাম্প্রতিকতম উদাহরণ গত মাসে হরিয়ানার বিধানসভা ভোট।
মহারাষ্ট্রে বিধানসভা নির্বাচনে মোট ভোটারের সংখ্যা ন’কোটি ৭০ লক্ষেরও বেশি। তাঁরা ৪১৩৬ জন প্রার্থীর জয়-পরাজয় নির্ধারণ করবেন। ভোট গণনা হবে ২৩ নভেম্বর। মূল লড়াই বিজেপি-শিবসেনা (একনাথ শিন্ডে)-এনসিপি (অজিত)-এর জোট ‘মহাজুটি’এবং কংগ্রেস-শিবসেনা (ইউবিটি)-এনসিপি (শরদ)-এর ‘মহাবিকাশ আঘাড়ী’র মধ্যে। এ ছাড়া ভোটের ময়দানে রয়েছে রাজ ঠাকরের মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা (এমএনএস), বাবাসাহের অম্বেডকরের পুত্র তথা প্রাক্তন সাংসদ প্রকাশ অম্বেডকরের ‘বঞ্চিত বহুজন আঘাড়ী’ (ভিবিএ), হায়দরাবাদের সাংসদ আসাদউদ্দিন ওয়েইসির ‘অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন’ (মিম)-সহ বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক দল।
ক্ষমতাসীন জোটের গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী তথা শিবসেনা প্রধান একনাথ শিন্ডে (কোপরি-পাচপাখাড়ি), দুই উপমুখ্যমন্ত্রী, এনসিপির অজিত পওয়ার (বারামতী) এবং বিজেপির দেবেন্দ্র ফডণবীস (নাগপুর দক্ষিণ-পশ্চিম)। বিরোধী জোটের উল্লেখযোগ্যদের মধ্যে শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরের পুত্র আদিত্য (ওরলি), প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি নানা পাটোলে (সাকোলি), প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী পৃথ্বীরাজ চহ্বাণ (কারাড দক্ষিণ) এবং শরদ পওয়ারের নেতৃত্বাধীন এনসিপি(এসপি)-র পরিষদীয় দলনেতা জিতেন্দ্র আওয়াড় (মুমব্রা-কালওয়া)।
ঝাড়খণ্ডের ৮১টি বিধানসভা আসনের মধ্যে প্রথম দফায় গত ১৩ নভেম্বর ৪৩টিতে ভোটগ্রহণ হয়েছিল। বুধবার হবে বাকি ৩৮টিতে। সে রাজ্যে ভোটের প্রচারে বিজেপির কেন্দ্রীয় ও রাজ্যস্তরের নেতারা ধারাবাহিক ভাবে মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনের নেতৃত্বাধীন জেএমএম-কংগ্রেস-আরজেডির ‘মহাগঠবন্ধনের’ বিরুদ্ধে জমি কেলেঙ্কারি, দুর্নীতির পাশাপাশি ‘জমি জিহাদে’ মদত দেওয়ার অভিযোগ তুলেছে। ২০১৯-এর বিধানসভা ভোটে প্রায় সাড়ে ৩৫ শতাংশ ভোট পেয়ে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়েছিল জেএনএম-কংগ্রেস-আরজেডির ‘মহাগঠবন্ধন’। এ বারও তিন দল একসঙ্গে লড়ছে। সঙ্গে পেয়েছে বাম দল সিপিআইএমএল (লিবারেশন)-কে।
ক্ষমতাসীন জোটের সঙ্গে মূল লড়াই বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ-র। গত বার আলাদা লড়লেও বিজেপি এ বার প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী সুদেশ মাহাতোর ‘অল ঝাড়খণ্ড স্টুডেন্টস ইউনিয়ন’ (আজসু)-এর সঙ্গে জোট গড়েছে। সঙ্গে রয়েছে বিহারের নীতীশ কুমারের দল জেডিইউ এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী চিরাগ পাসোয়ানের দল এলজেপি (রামবিলাস)। দ্বিতীয় দফার ভোটে গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন (বরহেট), তাঁর স্ত্রী কল্পনা (গাঁডেয়), ভাই বসন্ত (দুমকা)। বিজেপির টিকিটে লড়ছেন দলের রাজ্য সভাপতি বাবুলাল মরান্ডি (ধনওয়ার) এবং প্রাক্তন জেএমএম বিধায়ক তথা বর্তমানে বিজেপি নেত্রী হেমন্তের বৌদি সীতা (জামতাড়া)।
মহারাষ্ট্রে ২০১৯ সালের বিধানসভা ভোটে বিজেপি এবং অবিভক্ত শিবসেনার জোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও ভোটের পর মুখ্যমন্ত্রিত্ব নিয়ে উদ্ধবের সঙ্গে পদ্ম শিবিরের বিরোধ বাধায় সরকার গঠন ঝুলে থাকে। এর পর অবিভক্ত এনসিপির পরিষদীয় নেতা অজিত ‘বিদ্রোহী’ হয়েছিলেন। তাঁর সমর্থন পেয়ে মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিয়েছিলেন বিজেপির দেবেন্দ্র ফডণবীস। অজিত হন উপমুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু সে সময় এনসিপি পরিষদীয় দলে ভাঙন ধরাতে ব্যর্থ হয়ে ইস্তফা দিতে হয় তাঁদের দু’জনকে। এর পর অজিত আবার শরদের শিবিরে আশ্রয় নেন। তাঁকে শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরের নেতৃত্বাধীন মহাবিকাশ আঘাড়ী জোট সরকারের উপমুখ্যমন্ত্রী করেছিলেন শরদ।
কিন্তু ২০২২-এর জুন মাসে একনাথ শিন্ডের নেতৃত্বে শিবসেনায় ভাঙন ধরলে মহাবিকাশ আঘাড়ী সরকারের পতন ঘটে। বিজেপির সমর্থনে মুখ্যমন্ত্রী হন শিন্ডে। এর পর ২০২৩ সালের ২ জুলাই শরদের সঙ্গ ছেড়ে অধিকাংশ এনসিপি বিধায়ককে নিয়ে আবার বিদ্রোহী হন অজিত। শিন্ডের নেতৃত্বাধীন ‘মহাজুটি’ সরকারের উপমুখ্যমন্ত্রীও হন। যদিও ছ’মাস আগের লোকসভা ভোটে মহারাষ্ট্রে ‘ইন্ডিয়া’ পরাস্ত করে এনডিএকে। সে রাজ্যের ৪৮টি আসনের মধ্যে বিরোধী জোটের ঝুলিতে গিয়েছে ৩০টি (কংগ্রেস ১৩, উদ্ধবসেনা ৯ এবং শরদপন্থী এনসিপি ৮)। পাশাপাশি, সাংলি আসনে জয়ী নির্দল প্রার্থী কংগ্রেস শিবিরে ভিড়ে গিয়েছেন ইতিমধ্যেই।
অন্য দিকে, লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি ন’টি এবং তার দুই শরিক শিবসেনা (শিন্ডে) এবং এনসিপির অজিত গোষ্ঠী যথাক্রমে জিতেছে সাতটি আর একটি আসনে। পাঁচ বছর আগের ফল থেকে প্রায় দু’ডজন আসন কম পেয়েছে এনডিএ জোট। যদিও বিজেপি শিবিরের দাবি, এ বার ধাক্কা কাটিয়ে উঠে নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা পাবে তারা। তবে কয়েকটি আসনে দুই জোটেরই সহযোগী দলগুলি ‘বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই’ করছে। অন্য দিকে, ঝাড়খণ্ডের ১৪টি লোকসভা আসনের মধ্যে এ বার বিজেপি ৮ এবং তার সহযোগী আজসু ১টিতে জিতেছে। বিরোধী জোটের জেএমএম ৩ এবং কংগ্রেস ২টিতে। কংগ্রেস সাংসদের মৃত্যুর কারণে মহারাষ্ট্রের নান্দেড় লোকসভা আসনে উপনির্বাচন হবে বুধে। সেই সঙ্গে উত্তরপ্রদেশের ন’টি, পঞ্জাবের চারটি, কেরল এবং উত্তরাখণ্ডের একটি করে বিধানসভা আসনেও।