Coronavirus in kolkata

করোনা টিকার উদ্বোধনেও রাজনীতির নারদ-নারদ

রাজ্যপাল আইডি হাসপাতাল চত্বর ছেড়ে চলে যাওয়ার চার ঘণ্টা পরে নাইসেডে আসেন ফিরহাদ হাকিম।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০২০ ০৩:৪১
Share:

শুরু: কোভিডের টিকা নিচ্ছেন ফিরহাদ হাকিম। বুধবার, বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে। নিজস্ব চিত্র।

বঙ্গে প্রথম টিকা পরীক্ষার উদ্বোধনী মঞ্চে এড়ানো গেল না রাজনৈতিক টিকা-টিপ্পনী!

Advertisement

দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি করোনার টিকা ‘কোভ্যাকসিন’-এর তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা আইসিএমআর-নাইসেডে যে হতে চলেছে, তা ক’দিন আগেই জানা গিয়েছিল। বুধবার বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের ভিতরে আইসিএমআর-নাইসেডে সেই পরীক্ষার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। বিকেলে মহানাগরিক হিসেবে টিকা নিতে নাইসেডে যান পুর প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান তথা প্রাক্তন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। রাজ্যের স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে এমন উল্লেখযোগ্য দিনে আবার করোনা সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখতে গঠিত তদন্ত কমিটির ভিত্তি নিয়েই প্রশ্ন তুললেন রাজ্যপাল। ওই কমিটির রিপোর্ট প্রকাশ্যে আনার কথা বলে আয়ুষ্মান ভারতের প্রসঙ্গও তোলেন তিনি। উল্টো দিকে, পুর প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান এলেও করোনা গবেষণার এমন উল্লেখযোগ্য দিনে স্বাস্থ্য ভবনের কর্তাব্যক্তিরা কেন অনুপস্থিত, সেই প্রশ্ন উঠতেও দেরি হল না।

এ দিন করোনা টিকার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাজ্যপাল জানান, করোনা নিয়ন্ত্রণে দু’হাজার কোটি টাকার সরঞ্জাম কেনার প্রক্রিয়া ঘিরে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। স্বজনপোষণ এবং দুর্নীতির সেই সমস্ত অভিযোগ খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গড়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সেই পদক্ষেপের প্রশংসা করে রাজ্যপালের মন্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী ঠিক কাজই করেছেন। কিন্তু আমার বক্তব্য হল, যাঁরা এ ধরনের কাজে যুক্ত ছিলেন, তাঁরা কী ভাবে তদন্ত করতে পারেন। ওই তদন্তে কী হল, কিসের ভিত্তিতে তদন্ত হচ্ছে, কারা তদন্ত করছেন, দরপত্রে কারা সুবিধা পেয়েছেন, এ সব প্রশ্নের উত্তর পেতে রাজ্য সরকারকে চিঠি লিখেছি।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: জোগানই কম, টিকা তাই ধাপে ধাপে

রাজ্যপাল আইডি হাসপাতাল চত্বর ছেড়ে চলে যাওয়ার চার ঘণ্টা পরে নাইসেডে আসেন ফিরহাদ হাকিম। রাজ্যপালের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, ‘‘আজ এই মঞ্চ থেকে রাজনীতির কথা বললে যে উদ্দেশ্যে আসা, সেটাই নষ্ট হয়ে যাবে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নীতি হল, মানুষের জন্য কাজ করো। সেই কাজ করতে এসে রাজনীতি করব না। রাজ্যপালেরও এ দিন রাজনীতির মধ্যে ঢোকা উচিত হয়নি। এর পরে উনি রাজ্যপাল পদে থাকার উপযুক্ত কি না, ভাবছি!’’

এ কথা বলার পরেই টিকা প্রসঙ্গে চলে যান প্রাক্তন মেয়র। তাঁর কথায়, ‘‘দেশের বিজ্ঞানীদের তৈরি ভ্যাকসিন প্রথম নেওয়ায় আমি গর্বিত। ভ্যাকসিন নেওয়ার পরে শারীরিক অসুবিধা কিছু হয়নি। সামান্য অসুবিধা হলেও তাতে কিছু যায়-আসে না। মানুষের যাতে ভাল হয়, সেটাই বড় কথা। নাইসেড কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছি, যাতে দ্রুত গবেষণার ফল সামনে এনে সাধারণ মানুষের হাতে টিকা তুলে দেওয়া যায়।’’

আরও পড়ুন: রাশিয়াতেও আগামী সপ্তাহ থেকে কোভিড টিকাকরণ, ঘোষণা পুতিনের

নাইসেডের অধিকর্ত্রী শান্তা দত্ত জানিয়েছেন, নাইসেডে এক হাজার স্বেচ্ছাসেবকের মধ্যে টিকার কার্যকারিতা কতখানি, তা দেখা হবে। সেই প্রক্রিয়া শেষ হতে অন্তত ছ’মাস সময় লেগে যাবে। প্রাক্তন মেয়র শুধু নন, স্বেচ্ছাসেবক হওয়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছেন রাজ্যপালও। এ বিষয়ে নাইসেড-কর্ত্রী বলেন, ‘‘আঠারো থেকে অনূর্ধ্ব আশি পর্যন্ত যে কোনও ব্যক্তি স্বেচ্ছাসেবক হতে পারেন। সে দিক থেকে রাজ্যপালের স্বেচ্ছাসেবক হওয়ার প্রশ্নে বয়স কোনও বাধা নয়। কিন্তু তাঁর শারীরিক অবস্থা ভাল ভাবে খতিয়ে দেখার পরেই এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।’’

স্বাস্থ্য ভবনের প্রতিনিধিদের অনুপস্থিতির প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে শান্তাদেবী জানান, স্বাস্থ্য-অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্যকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তা সত্ত্বেও তাঁদের কাউকে এ দিন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেখা গেল না কেন? শান্তাদেবী বলেন, ‘‘না এলে কী করব!’’ এ বিষয়ে স্বাস্থ্য-অধিকর্তা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাঁদের কারও কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

আইসিএমআর-নাইসেড প্রধান জানান, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে স্বেচ্ছাসেবকদের নাম নথিভুক্ত করা হবে। ২৮ দিনের ব্যবধানে প্রত্যেককে টিকার দু’টি করে ডোজ় দেওয়া হবে। এর পরে এক বছর তাঁরা পর্যবেক্ষণে থাকবেন। প্রথম এবং দ্বিতীয় ডোজ় নেওয়ার আগে করোনা

পরীক্ষায় স্বেচ্ছাসেবকের কারও দেহে ভাইরাসের অস্তিত্ব মিললে তিনি আর টিকা পরীক্ষায় শামিল হতে পারবেন না। একই ভাবে এক বছর ধরে পর্যবেক্ষণ চলাকালীন স্বেচ্ছাসেবকেরা চাইলে গবেষণা থেকে বেরিয়ে যেতে পারেন।

নাইসেড-কর্ত্রী বলেন, ‘‘ইতিমধ্যেই ৩৫০ জন স্বেচ্ছাসেবক হওয়ার আর্জি জানিয়েছেন। তবে আর্জি জানানো মানেই স্বেচ্ছাসেবক হয়ে যাওয়া নয়। তার জন্য টিকা পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত সব রকমের মাপকাঠিতে উত্তীর্ণ হতে হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement