ভোট চুকলেই প্রতাপ দমনে তৈরি পুলিশ

উপর মহলের চাপে পুলিশের উঁচু তলা তাঁকে ছাড় দিচ্ছে বলে অভিযোগ। পরের পর হামলায় অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা প্রতাপ সাহাকে পুলিশের নিচু তলা কিন্তু আর রেয়াত করতে রাজি নয়। তাই বিজেপি নেত্রী রূপা গঙ্গোপাধায়ের উপরে হামলা এবং পুলিশের কাজে বাধাদানের অভিযোগ প্রমাণে ওই নেতার বিরুদ্ধে তথ্য সংগ্রহে নেমেছে আলিপুর থানার নিচু তলা। পুরভোট মিটলেই প্রতাপকে গ্রেফতারের ব্যাপারে লালবাজারের আশ্বাস মিলেছে বলে পুলিশকর্মীদের দাবি।

Advertisement

শিবাজী দে সরকার

শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:০৩
Share:

উপর মহলের চাপে পুলিশের উঁচু তলা তাঁকে ছাড় দিচ্ছে বলে অভিযোগ। পরের পর হামলায় অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা প্রতাপ সাহাকে পুলিশের নিচু তলা কিন্তু আর রেয়াত করতে রাজি নয়। তাই বিজেপি নেত্রী রূপা গঙ্গোপাধায়ের উপরে হামলা এবং পুলিশের কাজে বাধাদানের অভিযোগ প্রমাণে ওই নেতার বিরুদ্ধে তথ্য সংগ্রহে নেমেছে আলিপুর থানার নিচু তলা। পুরভোট মিটলেই প্রতাপকে গ্রেফতারের ব্যাপারে লালবাজারের আশ্বাস মিলেছে বলে পুলিশকর্মীদের দাবি।

Advertisement

পুলিশের, বিশেষত আলিপুর থানার নিম্ন বর্গের কর্মীদের জ্বালা ক্রমশই বাড়িয়ে চলেছেন প্রতাপ। ১৪ নভেম্বর যে-ভৈরববাহিনীর তাণ্ডবে আলিপুর থানার পুলিশের মাথা হেঁট হয়ে গিয়েছিল, প্রতাপই তাদের সর্দার বলে অভিযোগ। আবার মঙ্গলবার আলিপুরের গোপালনগর মোড়ে বিজেপির সভায় রূপার উপরে হামলায় প্রতাপের উপস্থিতির প্রমাণ ধরে রেখেছে সিসিটিভি এবং অন্যান্য ক্যামেরা। ওই হামলায় জড়িত থাকার সঙ্গে সঙ্গে প্রতাপের বিরুদ্ধে কর্তব্যরত পুলিশকর্মী নিগ্রহের অভিযোগও দায়ের করা হয়েছে আলিপুর থানায়। নভেম্বরে থানায় হামলায় মাথা বাঁচাতে ফাইলকে ঢাল করে এক কর্মীর টেবিলের তলায় লুকোনোর ঘটনা পুলিশের মুখে কালি লেপে দিয়েছিল। তার পরে ফের পুলিশ-নিগ্রহের বিষয়টি বাহিনীর সেই ক্ষতে নুন ছিটিয়ে দিয়েছে।

গোপালনগরের সভায় হামলার ঘটনায় দ্বিতীয় অর্থাৎ পুলিশ-নিগ্রহের অভিযোগটি স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে দায়ের করেছে পুলিশই। আর ওই দ্বিতীয় অভিযোগেই প্রতাপকে গ্রেফতারের জন্য উপর তলাকে চাপ দিচ্ছে নিচু তলা। প্রতাপকে যাতে আইনগত দিক দিয়ে ভাল ভাবে গেঁথে ফেলা যায়, সেই জন্যই প্রমাণ সংগ্রহে নেমেছে নিচু তলা। গোপালনগর মোড়ে থাকা সিসিটিভির ফুটেজে প্রতাপের ছবি আছে বলে পুলিশের দাবি। এ ব্যাপারে আরও নিশ্চিত হতে বিভিন্ন বৈদ্যুতিন মাধ্যমের কাছ থেকে ভিডিওয় তোলা প্রমাণের খোঁজে নেমেছে আলিপুর থানা। তাদের বক্তব্য, সংবাদমাধ্যম সে-দিন ঘটনাস্থলের খুব কাছে ছিল। তাই তাদের ক্যামেরার ছবি খুব স্পষ্ট। ফলে খুব সহজেই প্রতাপ এবং অন্য অভিয়ুক্তদের চিহ্নিত করা সম্ভব হবে।

Advertisement

শুধু ক্যামেরাবন্দি প্রমাণে সন্তুষ্ট না-হয়ে ওই দিনের হামলায় প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ানও নথিভুক্ত করছে পুলিশ। আলিপুর থানার এক অফিসার বলেন, ‘‘আমরা এমন লোকেদেরই বয়ান নিচ্ছি, যাঁরা প্রয়োজনে আদালতে গিয়ে সত্যি ঘটনাটা বলতে পারবেন। কারণ, তদন্তের সময় বয়ান দিয়েও অনেকে পরে আদালতে তা দিতে অস্বীকার করায় সমস্যায় পড়তে হয় আমাদের। তাই আমরা শুধু বাছাই করা প্রত্যক্ষদর্শীদেরই বয়ান নিচ্ছি।’’ সে-দিন ঘটনাস্থলে থাকা সব পুলিশকর্মীর বক্তব্যও নথিভুক্ত করবেন তদন্তকারীরা। তবে ওই বয়ান পেতে পুরভোট মিটে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

এক তদম্তকারী অফিসারের বক্তব্য, ধরা পড়লে প্রতাপ নিজের প্রভাব খাটিয়ে যাতে জামিন পেতে না-পারেন, তার পাকা ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পুলিশের খবর, তদন্তকারীদের মনোভাব টের পেয়ে বৃহস্পতিবারের পর থেকে ওই অভিযুক্ত আর এলাকায় বেরোচ্ছেন না। এ দিন তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু মোবাইল বেজে গিয়েছে। সাড়া দেননি ওই নেতা।

তবে শাসক দল সূত্রের খবর, আজ, শনিবার ভোটের সময় প্রতাপ এলাকাতেই থাকবেন। আড়ালে থেকে ভোট পরিচালনা করবেন। কিন্তু তাঁকে ধরতে এই মুহূর্তে বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালাবে না পুলিশ। কেন?

‘‘আমরা এমন কিছু করব না, যাতে এলাকায় নতুন করে আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত হয়। পরিস্থিতি আবার উত্তপ্ত হয়ে গেলে প্রতাপকে আর ধরাই যাবে না। দল পুরোপুরি ওই নেতার পক্ষে দাঁড়িয়ে যাবে,’’ বললেন এক অফিসার।

রূপা কাণ্ডে তিনটি মামলায় অভিযুক্তদের গ্রেফতারের ব্যাপারে পুলিশের একাংশের মধ্যে বিরোধ আছে বলে লালবাজারের খবর। পুলিশের শীর্ষ কর্তাদের অভিমত, গ্রেফতার করতে হলে দু’পক্ষের যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে, সকলকেই গ্রেফতার করতে হবে। কিন্তু সেটা আবার মানতে রাজি নন তদন্তকারীরা। এর মধ্যেই গোপালনগর কাণ্ড ঘিরে পতাকা ছেঁড়ার ঘটনায় অভিযুক্তদের কেন গ্রেফতার করা হবে না, বৃহস্পতিবার এক প্রচারসভায় সেই প্রশ্ন তুলেছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মুখ্যমন্ত্রী ওই প্রশ্ন তোলার পরেই ঘটনার দিন রূপার ভূমিকা ঠিত কী ছিল, তা ভাল করে খতিয়ে দেখার জন্য তদন্তকারীদের নির্দেশ দিয়েছে লালবাজার। পুলিশকর্তাদের দাবি, রূপার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ উঠলেও প্রাথমিক তদন্তে তার তেমন প্রমাণ মেলেনি। শুধু বিরোধী দলের পতাকা খোলা ছাড়া আর কোনও প্রমাণ তদন্তকারীরা পাননি। লালবাজারের এক কর্তা বলেন, ‘‘পুরভোটের পরে তদন্তের গতি আরও জোরদার হবে। তখন বোঝা যাবে, সে-দিন কার কী ভূমিকা ছিল। কাকে গ্রেফতার করা হবে না-হবে, সেটা স্থির হবে তার পরেই।’’

কলকাতা পুলিশ বৃহস্পতিবার রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের কাছে গোপালনগরের ঘটনার রিপোর্ট পেশ করে। রূপার উপরে হামলার পিছনে অজ্ঞাতপরিচয় কিছু যুবকের হাত আছে বলে তাতে জানানো হয়েছে। সিসিটিভির ফুটেজ থাকা সত্ত্বেও পুলিশ কমিশনার তাঁর রিপোর্টে হামলাকারীদের অজ্ঞাতপরিচয় বলে উল্লেখ করেছেন কেন, সেই প্রশ্ন উঠছে। লালবাজার বলছে, ফুটেজ দেখে হামলাকারীদের শনাক্ত করার কাজ শুরু হয়েছে। সেই কাজ সম্পূর্ণ হয়নি বলেই তাদের নাম-পরিচয় রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়নি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement