অসন্তোষ: গরফা থানায় ভাঙচুরের পরে। সোমবার। নিজস্ব চিত্র
কলকাতা পুলিশ ট্রেনিং স্কুলের সশস্ত্র বাহিনীর পরে বিক্ষোভে এ বার গরফা থানার পুলিশকর্মীদের একাংশ। অভিযোগ, শুধু বিক্ষোভ নয়, নিজেদেরই থানায় রীতিমতো ভাঙচুর চালিয়েছেন তাঁরা। এই ক্ষোভের পিছনে রয়েছে করোনার উপসর্গ থাকা এক সহকর্মীর মৃত্যুর ঘটনা। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, ওই কনস্টেবল গত কয়েক দিন ধরে অসু্স্থ থাকলেও ঠিকমতো তাঁর চিকিৎসা হয়নি। আর সেই কারণেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
ঘটনার সূত্রপাত সোমবার বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ। এম আর বাঙুর হাসপাতাল থেকে গরফা থানায় খবর আসে, রবিবার গভীর রাতে ভর্তি হওয়া বছর সাতচল্লিশের ওই কনস্টেবল এ দিন সকালে মারা গিয়েছেন। থানার একটি সূত্রের খবর, ওই কনস্টেবল গত কয়েক দিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন। জ্বর ও শ্বাসকষ্ট থাকায় তাঁকে আরও কয়েক জনের সঙ্গে ডোমজুড়ের কোয়রান্টিন কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছিল। চার দিন সেখানে ভর্তি থাকার পরে রবিবার অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে এম আর বাঙুরে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানে আইসিইউ-তে ছিলেন তিনি। এ দিন তাঁর মৃত্যু হয়।
সেই খবর থানায় পৌঁছতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন পুলিশের নিচুতলার কর্মীরা। তাঁদের অভিযোগ, ওই কনস্টেবলের ঠিকমতো চিকিৎসাই হয়নি। কারণ, হাসপাতালের পরিবর্তে তাঁকে পাঠানো হয়েছিল কোয়রান্টিন কেন্দ্রে। ক্ষোভ প্রকাশ করতে গিয়ে থানার ভিতরেই ভাঙচুর চালাতে থাকেন ওই কর্মীরা। অভিযোগ, থানার সামনে থাকা গার্ডরেল উল্টে ফেলে দেন তাঁরা। প্লাস্টিকের চেয়ার, জানলার কাচ, ফুলের টব ভাঙচুর করেন উত্তেজিত ওই পুলিশকর্মীরা।
পুলিশ সূত্রের খবর, ওই কনস্টেবল থানার ব্যারাকেই থাকতেন। সম্প্রতি গরফা থানার এক এএসআই করোনায় আক্রান্ত হন। তাঁর সংস্পর্শে আসায় আরও দুই কনস্টেবল ও এক হোমগার্ডের সঙ্গে সেই কনস্টেবলকেও কোয়রান্টিনে পাঠানো হয়েছিল।
লালবাজার সূত্রের খবর, করোনার উপসর্গ থাকায় গত ২২ মে ওই কনস্টেবলের লালারসের নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছিল। সেই রিপোর্ট নেগেটিভ আসে।
আরও পড়ুন: এখনও জল পাচ্ছে না বিধাননগরের কিছু এলাকা
থানার বিক্ষোভকারী পুলিশকর্মীদের প্রশ্ন, রিপোর্ট নেগেটিভ এসে থাকলে রবিবার গভীর রাতে ডোমজুড়ের কোয়রান্টিন কেন্দ্র থেকে ওই কনস্টেবলকে এম আর বাঙুরে আনা হল কেন? আর সেই রিপোর্টই বা কখন এল? এর কোনও সদুত্তর পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তাদের থেকে মেলেনি।
করোনায় আক্রান্ত পুলিশকর্মীদের সংস্পর্শে আসা সহকর্মীদের সঙ্গে থাকা এবং প্রয়োজনীয় সুরক্ষা-বর্ম ছাড়া বাজারে ডিউটি করতে পাঠানো-সহ বেশ কিছু অভিযোগ নিয়ে গত ১৯ মে নজিরবিহীন ভাবে রাস্তায় নেমেছিলেন কলকাতা সশস্ত্র পুলিশের কর্মীদের একাংশ। কলকাতা পুলিশ ট্রেনিং স্কুলের ভিতরে এবং এ জে সি বসু রোডে বিক্ষোভ-অবরোধ করেন তাঁরা। এমনকি, ডিসি (কমব্যাট) ঘটনাস্থলে গেলে তাঁকে আরও কয়েক জন আধিকারিকের সঙ্গে নিগ্রহের শিকার হতে হয়। পরের দিন সশস্ত্র পুলিশকর্মীদের অভিযোগ শুনতে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পিটিএস-এ যান। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথাও বলেন তিনি। তাঁদের অভিযোগ খতিয়ে দেখারও আশ্বাস দেন। ওই ঘটনার পরে বদলি হয়েছেন এক ইনস্পেক্টর ও রিজার্ভ অফিসার। ১৫ দিনের জন্য ছুটিতে গিয়েছেন খোদ ডিসি।
সেই ঘটনার রেশ কাটতে না-কাটতেই ঘটে গেল এ দিনের থানা ভাঙচুরের ঘটনা। যুগ্ম কমিশনার (সদর) শুভঙ্কর সিংহ সরকারের অবশ্য দাবি, সহকর্মীর মৃত্যু নিয়ে সাময়িক উত্তেজনা ছড়িয়েছিল, তবে ডিসি গিয়ে কথা বলতেই তা মিটে যায়। কোনও ভাঙচুরের ঘটনা তাঁর জানা নেই বলে দাবি করেন ওই পুলিশকর্তা।
লালবাজার সূত্রের খবর, পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা প্রতিটি ইউনিটের কর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন, করোনার উপসর্গ থাকা পুলিশকর্মীদের এ বার থেকে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করানোর প্রয়োজন হলে বেলেঘাটা আইডি বা বাইপাস সংলগ্ন নির্দিষ্ট দু’টি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।