উদ্ধার হওয়া শব্দবাজি। রবিবার। নিজস্ব চিত্র
প্রায় দু’মাস বাকি কালীপুজো। কিন্তু পুলিশের চোখে ধুলো দিতে এই সময়টাকেই বেআইনি শব্দবাজি পাচারের ‘সেরা’ ভেবে বেছে নিয়েছিল একদল ব্যবসায়ী। বাদ সাধে দিন কয়েক আগে দক্ষিণ ২৪ পরগনার হারালের সোলগোলিয়া এলাকার একটি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের ঘটনা। এর পরেই বারুইপুর জেলা পুলিশের নজর ঘোরে সে দিকে। শনিবার ওই জেলার হারাল ও চম্পাহাটি গ্রামে তল্লাশি চালায় বারুইপুর জেলা পুলিশ। প্রায় দু’লক্ষ চকলেট বোমা বাজেয়াপ্ত করা হয়। গ্রেফতার করা হয় তিনটি বেআইনি বাজি কারখানার মালিককে। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ওই শব্দবাজি কলকাতায় পাচারের জন্য তৈরি হচ্ছিল।
উৎসবের মরসুম কাছে আসতেই দক্ষিণ ২৪ পরগনার চম্পাহাটির বিভিন্ন এলাকায় ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠে চকলেট বোমার কারখানা। বিপুল পরিমাণ চাহিদা মেটাতে দুর্গাপুজোর কয়েক মাস আগে থেকেই শব্দবাজি তৈরির কাজ শুরু হয়ে যায়। বরাত অনুযায়ী নির্দিষ্ট ঠিকানায় সে সব পাচার করে দেওয়া হয়। সে ক্ষেত্রে কালীপুজোর কাছাকাছি সময়ে কড়া নজরদারি শুরুর আগেই বরাত যথাস্থানে পৌঁছে যায়। তদন্তকারীদের মতে, দুর্গাপুজোর পরবর্তী সময়ে বাজি পাচার করতে গিয়ে পুলিশের জালে ধরা পড়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। তাই বেআইনি বাজি কারবারিরা এত আগে পাচার শুরু করেন।
জেলা পুলিশ সূত্রের খবর, সোলগোলিয়ার বাজি কারখানায় বিস্ফোরণে গুরুতর জখম হয়েছেন দুই শ্রমিক। ওই কারখানার মালিক সন্তোষ মণ্ডল এখনও পলাতক। পুলিশকর্তাদের কথায়, ওই দুর্ঘটনার পরেই এলাকায় নজরদারি শুরু করা হয়েছিল। সেই সূত্র ধরে কয়েকটি কারখানার হদিস পাওয়া যায়। তারই তিনটি কারখানায় শনিবার সন্ধ্যায় বারুইপুর থানার আইসি দেবকুমার রায়ের নেতৃত্বে তল্লাশি অভিযান চালানো হয়। ওই কারখানাগুলির মালিক যথাক্রমে স্থানীয় বাসিন্দা তপন মণ্ডল, খোকন মণ্ডল ও হরিপদ নস্কর। বেআইনি শব্দবাজি তৈরির অভিযোগে তাঁদেরকে গ্রেফতার করা হয়। তদন্তকারীদের কথায়, ওই কারখানাগুলিতে শব্দবাজি তৈরি ও মজুত দুই-ই হয়। চকলেট বোমার একশোটি প্যাকেট কলকাতায় পাচারের জন্য প্রস্তুত করে রাখা ছিল বলে জানিয়েছেন তাঁরা। ওই দিনের অভিযানে সে সবই বাজেয়াপ্ত হয়েছে।
ধৃতদের জেরা করে তদন্তকারীরা জেনেছেন, পুলিশের নজর এড়াতে ওই এলাকার বাড়িগুলির ভিতরে বাজি কারখানা গড়ে উঠেছে। কলকাতা ছাড়াও দক্ষিণ এবং উত্তরবঙ্গে পাচারের জন্য আরও শব্দবাজি তৈরি হচ্ছিল বলে জানান তদন্তকারীরাা। বারুইপুর পুলিশ জেলার সুপার রশিদ মুনির খান বলেন, ‘‘এলাকায় কড়া নজরদারি রয়েছে। কোনও ভাবেই নিষিদ্ধ শব্দবাজি তৈরি করতে দেওয়া হবে না।’’