‘প্রক্সি’-কাণ্ডে ধৃতেরা। —নিজস্ব চিত্র।
এক জনের বদলে অন্য জন নাম ভাঁড়িয়ে পরীক্ষা দিচ্ছে এমন ঘটনা আকছার ঘটে। কিন্তু পুলিশের জেরায় একের বদলে অন্যকে পাঠানো! এমন ঘটনাই বুধবার ঘটেছে রাজ্য পুলিশের সদর দফতর ভবানী ভবনে।
একটি জমি কেলেঙ্কারি সংক্রান্ত তদন্তে সল্টলেকের বাসিন্দা রোমি হিরাওয়াত এবং বরুণ লাড্ঢাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (সিআইডি)-র তদন্তকারীরা তলব করেছিলেন। মামলার তদন্তকারী আধিকারিকের সঙ্গে তাঁদের দেখা করার কথা ছিল। বুধবার দুপুরে বরুণ লাড্ঢা নামে যে যুবক হাজির হন এবং তদন্তকারী আধিকারিকের চাওয়া নথি জমা দেন, তাঁকে দেখে সন্দেহ হয় অন্য আধিকারিকদের। তাঁকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করতে গিয়ে জানা যায়, বরুণ লাড্ঢা নামে যে যুবক সিআইডি দফতরে হাজির হয়েছেন তাঁর আসল নাম রক্তিম চৌধুরী। তিনি রোমি হিরাওয়াতের একটি নির্মাণ সংস্থার কর্মী।
সিআইডি সূত্রে খবর, জেরায় রক্তিম জানান, মালিকের নির্দেশেই তিনি তাঁর হয়ে ‘প্রক্সি’ দিতে গিয়েছিলেন। এর পরেই রক্তিমকে আটক করে তাঁকে দিয়ে ফোন করানো হয় বরুণ লাড্ঢা এবং রোমিকে। তাঁরা বিপদ বুঝে দ্রুত চলে আসেন ভবানী ভবনে। সিআইডি আধিকারিকদের অভিযোগ, বরুণ এবং রোমি পরিস্থিতি সামাল দিতে সিআইডি দফতরের ওই রেজিস্টারে নিজেদের নাম কেটে রক্তিমের নাম লিখতে যান। আর তখনই বিষয়টা নজরে পড়ে সিআইডি কর্মীদের। আটক করা হয় ওই দু’জনকেও। এর পর তিন জনকে একসঙ্গে জেরা করে এবং সিআইডি দফতরের পুরনো সিসিটিভি ফুটেজ ঘেঁটে দেখা যায় এর আগেও কয়েক বার রক্তিমকে দিয়ে ‘প্রক্সি’ দিয়েছে ওই দু’জন।
আরও পড়ুন: অনলাইনে ‘বান্ধবী’ জোগান, ছত্তীসগঢ় পুলিশের হাতে পাকড়াও কলকাতার ২ প্রতারক
আরও পড়ুন: রাতের শহরে গোষ্ঠী বিবাদের জেরে গুলিবিদ্ধ ১ ব্যক্তি, ধৃত ১
সল্টলেকে কেএমডিএ-র একটি জমিতে ভুয়ো নথি দিয়ে বাড়ি তৈরি করার জন্য কয়েক মাস আগে রাজীব রঞ্জন নামে এক প্রোমোটারকে গ্রেফতার করেছিল সিআইডি। সেই মামলার তদন্তেই উঠে আসে এই দু’জনের নাম। তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, রোমি এবং বরুণ শীর্ষ আদালত থেকে আগাম জামিন নিয়েছেন। তবে আদালত তাঁদের তদন্ত সহযোগিতা করার নির্দেশ দিয়েছিল। সেই সূত্রেই বিভিন্ন সময়ে সিআইডি তলব করেছে ওই দু’জনকে। প্রথমে কয়েক বার নিজেরা এলেও, তার পর থেকে কোনও কর্মীকে দিয়ে ‘প্রক্সি’ দিয়ে কাজ সারত দু’জন। এক তদন্তকারী বলেন, ‘‘ওরা যখন নিজেদের বদলে অন্য কাউকে পাঠাতেন, তখন এমন সময়ে পাঠাতেন যাতে তদন্তকারী আধিকারিকের মুখোমুখি না হতে হয়। শুধু নথি জমা দিয়েই চলে আসত ওই কর্মী। কিন্তু খাতায় কলমে দেখা যেত ওই দু’জন হাজিরা দিয়েছেন।”
রাতেই ওই তিন জনকে আলিপুর থানার পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার তাঁদের আলিপুর আদালতে পেশ করা হয়।