শুক্রবার বিধাননগর পুলিশ উদ্ধার করে এই ল্যাপটপগুলি।
দমদম,লেকটাউন,বাগুইআটি,সল্টলেক— একের পর এক ল্যাপটপ চুরির অভিযোগ পেতে পেতে ঘুম উড়ে গিয়েছিল পুলিশের।
৯০ শতাংশ ক্ষেত্রেই ফ্ল্যাট বা ঘরের তালা ভেঙে ঢোকে চোর। সব ক্ষেত্রেই দিনদুপুরে চুরি। আর সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ, চুরি হচ্ছে এমন সব জায়গায় যেখানে ছাত্রছাত্রী বা চাকরিজীবী তরুণ-তরুণীরা পেয়িং গেস্ট হিসাবে বা মেসে থাকেন।
ল্যাপটপ চুরির তদন্ত করতে গিয়ে আরও একটা বিশেষত্ব চোখে পড়ে তদন্তকারীদের। চোর ল্যাপটপ ছাড়া আর কিছু নেয় না। পাশে ল্যাপটপের থেকেও দামি জিনিস থাকলেও চোর হাত দেয়নি তাতে।
সব ক’টা চুরিতেই এই মিল দেখে বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের গোয়েন্দাদের সন্দেহ হয়, এই চুরিগুলোর পেছনে রয়েছে একই দল। সেই তদন্ত করতে গিয়েই শেষ পর্যন্ত পুলিশের জালে ধরা পড়ে সৌমেন বর্মণ। বাগুইআটির জগৎপুরের বাসিন্দা সৌমেন পেশায় রং মিস্ত্রি। আর সেই কাজের সুবাদেই সে খোঁজ রাখত বিভিন্ন এলাকার মেসের। দিনের বেলায় সেই মেসের বাসিন্দারা বাড়ি থাকেন না।
আরও পড়ুন: সাউথ সিটির সামনে বন্দুক দেখিয়ে লুঠ
শুক্রবার বিধাননগর পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান আভারু রবীন্দ্রনাথ বলেন,“সৌমেনের কাছ থেকে তালা ভাঙার যন্ত্রপাতি পাওয়া গিয়েছে। জেরায় জানা গিয়েছে দিনের বেলায় সে ওই সব ফ্ল্যাটে হানা দিত। মোটা তোয়ালে দিয়ে তালা মুড়ে ভাঙত যাতে আওয়াজ না হয়।” শুধু সৌমেন নয়, গ্রেফতার করা হয়েছে তার স্ত্রী সঙ্গীতাকেও। পুলিশের দাবি দু’জনেই চুরির সঙ্গে যুক্ত। তবে ওই দম্পতিকে জেরা করে পুলিশের চোখ ছানাবড়া!ওদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ১৩১ টি নানা মডেলের ল্যাপটপ। পুলিশের দাবি, প্রায় তিন বছর ধরে এই ল্যাপটপ চুরির কাজ করছে ওই দম্পতি।
ধৃত দম্পতি সৌমেন এবং তার স্ত্রী সঙ্গীতা।
পুলিশ সূত্রে খবর, জেরায় সঙ্গীতা জানিয়েছে প্রায় তিন বছর আগে এক ফেরিওয়ালা সৌমেনকে বলেছিল পুরনো ল্যাপটপ বেচলে ভাল দাম দেবে। সেই লোভেই শুরু হয় ল্যাপটপ চুরি। পর পর চুরি করে ধরা না পড়ায় লোভ বাড়ে তাদের। তদন্তকারীদের সৌমেন জানিয়েছে, সে ল্যাপটপ ছাড়া অন্য কিছু চুরি করত না। কারণ, ল্যাপটপে ঝুঁকি কম। মেসের বাসিন্দা বা পেয়িং গেস্ট টার্গেট করত কারণ, তাঁরা বেশিদিন থাকেন না। থানা পুলিশের ঝামেলা এড়িয়ে চলতে চান তাঁরা।
আরও পড়ুন: লকারে চেক, সেই চেকেই চিকিৎসকের অ্যাকাউন্ট থেকে গায়েব ২০ লাখ
কিন্তু শেষ পর্যন্ত পুলিশের জালে ধরা পড়ে দম্পতি। পুলিশের সন্দেহ এদের জেরা করে আরও চোরাই ল্যাপটপের হদিশ পাওয়া যাবে। অন্যদিকে, ওই ১৩১টি চোরাই ল্যাপটপ নিয়ে বেজায় বিপদে পুলিশ। কারণ কার ল্যাপটপ তা নিয়ে কোনও তথ্য নেই পুলিশের কাছে। সবরী রাজকুমার বলেন,“ আমরা পরিকল্পনা করেছি ল্যাপটপের ছবি এবং নম্বর সোশ্যাল মিডিয়াতে দেব। উপযুক্ত প্রমান বা নথি পেলে আমরা সেই ল্যাপটপ ফেরত দেব।”
ছবি: নিজস্ব চিত্র।