—প্রতীকী ছবি
শহরের প্রবীণ নাগরিকদের বিপদে পাশে থাকার লক্ষ্যে ২০০৯ সালে চালু হয় কলকাতা পুলিশের ‘প্রণাম’ প্রকল্প। পুলিশ সূত্রে খবর, বর্তমানে ‘প্রণাম’-এর সদস্য প্রায় কুড়ি হাজার। প্রকল্পের পথ চলার শুরু থেকে প্রতি বছর কলকাতা পুলিশের তরফে পুজোর দিনে বয়স্কদের জন্য ‘ভিআইপি’ পাসের ব্যবস্থা করা হত। কিন্তু চলতি বছরে এখনও ভিআইপি পাস না পেয়ে বিপাকে প্রবীণ-প্রবীণারা।
শ্যামপুকুর থানা এলাকার হাতিবাগানে সস্ত্রীক থাকেন ছিয়াত্তর বছরের অমিত সেনগুপ্ত। শুরু থেকেই ‘প্রণাম’ প্রকল্পের সদস্য অবসরপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার অমিতবাবু বলছেন, ‘‘প্রতি বছর শ্যামপুকুর থানা থেকে ভিআইপি পাস পেতাম। এ বার এখনও পর্যন্ত পেলাম না!’’ তাঁর আক্ষেপ, ‘‘বাড়ির আশপাশে পাঁচটি বড় পুজো হচ্ছে। সাধ থাকলেও পাস না থাকায় মণ্ডপে ঢুকতে পারছি না।’’ ওই থানা এলাকার বাসিন্দা আর এক বৃদ্ধ দিলীপ মিত্রের অভিযোগ, ‘‘আমরা এমনিতেই নিঃসঙ্গতার শিকার। পুজোয় ঠাকুর দেখার আসায় পাসের অপেক্ষায় থাকি। সেটুকু আনন্দও সইল না।’’
কমিউনিটি পুলিশ শাখার তরফে এক জন পদস্থ পুলিশকর্তার তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয় এই ‘প্রণাম’। প্রকল্পে যুগ্ম সহযোগিতা করে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। কলকাতা পুলিশের আওতায় ৯টি ডিভিশন রয়েছে। প্রতিটিতে কমপক্ষে আট-ন’টি থানা রয়েছে। পুলিশ সূত্রে খবর, পাসের পরিবর্তে চলতি বছরে পুলিশের তরফে প্রবীণদের গাড়িতে ঘোরানোর ব্যবস্থাও নগণ্য। পুলিশ সূত্রের খবর, গাড়িতে করে মণ্ডপ ঘোরানোর জন্য প্রতি ডিভিশনে তিন-চারটি থানা এ বার বাছা হয়েছে। ‘প্রণাম’-এর এক সদস্যের কথায়, ‘‘থানার সংখ্যা কমানোর পাশাপাশি থানা পিছু সদস্যও কমানো হয়েছে। প্রতি থানা থেকে ১৫-২০ জন প্রবীণদের নিয়ে গাড়িতে ঘোরানো হচ্ছে।’’ পুলিশ সূত্রের খবর, শ্যামপুকুর থানায় ‘প্রণাম’-এর সদস্য ২৮৯ জন। এ বার পুজোয় বাসে করে ঘোরাতে শ্যামপুকুর থানাকে বাদ দেওয়ায় ২৮৯ জন প্রবীণ নাগরিকই প্রতিমা দর্শন থেকে বঞ্চিত হলেন। রবিবার ‘প্রণাম’ অফিসে ফোন করা হলে এক সদস্য বলেন, ‘‘গত কয়েক দিনে প্রচুর সদস্য ফোন করছেন। তাঁদের উত্তর দিতে গিয়ে খারাপও লাগছে।’’
মণ্ডপে ঢোকার জন্য ভিআইপি পাস শুধু বিলিই হয় না, আজকাল রীতিমতো বিক্রিও হয় চড়া দামে। তাই প্রশ্ন উঠছে, এই পরিস্থিতিতে এ বছর বয়স্কদের জন্য আরও কিছু পরিকল্পনা কি করা যেত না?
পাস না দেওয়া নিয়ে কমিউনিটি পুলিশ শাখার ওসি মানস ঝা বলেন, ‘‘পাসের ক্ষেত্রে প্রবীণদের সুবিধা দেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু এটা তাঁদের অধিকারের আওতায় পড়ে না।’’ প্রেসি়ডেন্সি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অমল মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘যে সুবিধা দীর্ঘদিন দিন ধরে পাওয়া যায়, সেটাই অধিকারের আওতায় পড়ে। প্রবীণদের দশ বছর ধরে পুজোর পাস দেওয়ার পরে হঠাৎ না দেওয়াটা অন্যায়।’’ মানসবাবুর ব্যাখ্যা, ‘‘কয়েক বছরে দেখা গিয়েছে, বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের দেওয়া পাস নিয়ে অন্যরা মণ্ডপে ঘুরছেন। পাস নিয়ে যাওয়া কোনও প্রবীণ আবার ভিড়ে হারিয়েও যান।’’ এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে অমিতবাবুর প্রশ্ন, ‘‘হাতেগোনা কয়েক জনের জন্য সবাই কেন বঞ্চিত হব?’’ কমিউনিটি পুলিশ শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশকর্তা সত্যজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এ বার প্রবীণদের প্রতিমা দেখানোর জন্য কার্ড ছাপানো হয়নি। ব্যস, এর বেশি কিছু বলব না।’’