—প্রতীকী চিত্র।
আগরপাড়ায় আট বছরের বালককে খুনের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি। তবে ঘটনার সঙ্গে ন্যূনতম যোগ থাকতে পারে, এমন দিকও খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। সেই সূত্রেই রবিবার দু’জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে পুলিশ।
চার দিন ধরে নিখোঁজ থাকার পরে গত শনিবার বাড়ি থেকে মেরেকেটে দেড়শো মিটার দূরে একটি পরিত্যক্ত কারখানার ভিতরের পুকুর থেকে উদ্ধার হয় ইন্তাজ হুসেনের দেহ। কে বা কারা, কী কারণে হাত-পা বেঁধে, মুখে কাপড় গুঁজে ওই বালককে খুন করে জলাশয়ে ফেলে দিয়েছিল, তা স্পষ্ট হচ্ছে না।
তবে কি কোনও ঘটনা ওই বালক দেখে ফেলায় তাকে আক্রোশের শিকার হতে হল? এমন প্রশ্নও ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের। ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের এক কর্তা বলেন, ‘‘যাতে তদন্তে কোনও রকম ফাঁক না থাকে, তাই সম্ভাব্য সব সূত্রই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দ্রুত অপরাধীদের ধরতে সব রকমের চেষ্টা চালানো হচ্ছে।’’
জানা যাচ্ছে, যে দু’জনকে পুলিশ আটক করেছে, তাদের এক জন ইন্তাজের দূর সম্পর্কের আত্মীয়। আর এক জন ওই বালকের বাবা নাসিমের পরিচিত। যিনি দিনের অধিকাংশ সময় ওই পরিত্যক্ত কারখানার ভিতরে নেশা করেন বলে তদন্তকারীরা জেনেছেন। ইন্তাজের সমবয়সি এক বন্ধুর সঙ্গেও পুলিশ কথা বলেছে। তাকে অবশ্য থানায় নিয়ে এসে কথাবার্তা বলার পরে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে পুলিশ। সূত্রের খবর, এই ঘটনার নেপথ্যে পারিবারিক কোনও শত্রুতা রয়েছে কি না, তা-ও দেখা হচ্ছে।
তবে, দেহ উদ্ধারের পরে ২৪ ঘণ্টা কেটে গেলেও পুলিশ কেন প্রকৃত দোষীকে এখনও গ্রেফতার করতে পারল না, তা নিয়ে রবিবারও ক্ষোভে ফেটে পড়েন ইন্তাজের পরিজন ও প্রতিবেশীরা। পানিহাটি পুরসভার সাত নম্বর ওয়ার্ডের মৌলানা সেলিম রোডের আগরপাড়া নিউ লাইনের যে বাড়িতে ইন্তাজের বাবা নাসিম সপরিবার ভাড়ায় এসেছিলেন, সেই বাড়ির সামনেও এ দিন সকাল থেকেই ছিল পড়শিদের ভিড়। বালকের আত্মীয়া রেশমা বিবি বলেন, ‘‘ছোট বাচ্চাটা কার কী ক্ষতি করেছিল যে, তাকে খুন করতে হল? পুলিশ প্রথম থেকেই যদি উদ্যোগী হত, তা হলে হয়তো এ দিন দেখতে হত না।’’
ইন্তাজের বাড়ির আশপাশে জটলা থেকে শুধু একটাই দাবি উঠেছে, দোষীকে অবিলম্বে ধরতে হবে। না হলে বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন স্থানীয়েরা। এ দিন কামারহাটির সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ইন্তাজের দেহের ময়না তদন্ত হয়। বিকেলে দেহ তুলে দেওয়া হয় পরিবারের হাতে।
বাড়িতে ছেলের মৃতদেহ পৌঁছনোর পর থেকে বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন তার মা। ছেলেকে ফিরে পাওয়ার আর্তিতে কান্নায় লুটিয়ে পড়ছিলেন। নাসিম বলেন, ‘‘এমন দিনও যে আমাদের দেখতে হবে, ভাবিনি। পুলিশের কাছে অনুরোধ, ছেলেটার খুনিকে অন্তত ধরুন।’’