প্রোমোটারকে মারধর। ছবি: সিসিটিভি ফুটেজ থেকে প্রাপ্ত।
শুধু কাশীপুরেই সীমাবদ্ধ ছিল না প্রোমোটারের উপরে হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত অভিজিৎ মণ্ডল ওরফে রানার ‘সাম্রাজ্য’! কাশীপুর পেরিয়ে বরাহনগরেও ছড়িয়েছিল তাঁর দাপট। সেখানেও একাধিক ‘প্রভাবশালী’র নাম করে আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে হুমকি দেওয়া ও তোলাবাজি চালানো হত বলে অভিযোগ। ঝামেলা এড়াতে এত দিন কেউ থানা-পুলিশ না করলেও ‘বাহুবলী’ রানার গ্রেফতারির পরেই একে-একে মুখ খুলছেন তাঁরা।
আক্রান্ত প্রোমোটার অভিজিৎ সরকারের পরে রানার বিরুদ্ধে সোমবার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ করেছেন বরাহনগরের বাসিন্দা আর এক প্রোমোটার, দেবব্রত পাল। বছরকয়েক আগে রানা তাঁর দলবল নিয়ে চড়াও হয়ে আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে দেবব্রতকে হুমকি দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। দেবব্রতের কথায়, ‘‘বরাহনগর এলাকায় প্রোমোটিংয়ের একটি কাজকে কেন্দ্র করেই রানার সঙ্গে ঝামেলার সূত্রপাত। আমি বাড়ির মালিকের সঙ্গে কথা বলে প্রোমোটিংয়ের একটি কাজ শুরু করার তোড়জোড় করছিলাম। তখন রানা এসে সেই কাজ করতে চায়। আমি সরে যেতে রাজি না হওয়ায় আমাকে নানা ভাবে হুমকি দিতে থাকে। রীতিমতো আগ্নেয়াস্ত্র নিয়েও চড়াও হয়েছিল। আমাকে ধাক্কাধাক্কি করে এবং বন্দুক দেখিয়ে হুমকি দেয়।’’ বাড়াবাড়ি করলে ‘ফল ভাল হবে না’ বলেও হুমকি দেওয়া হয়েছিল বলে ওই প্রোমোটার দাবি করেছেন। তাঁর আরও অভিযোগ, ওই ঘটনার পরে থানায় অভিযোগ জানানোর কথা ভাবলেও তৃণমূলের স্থানীয় কয়েক জনের কথায় তাঁকে পিছিয়ে আসতে হয়েছিল। থানায় অভিযোগ জানালে রানা ‘অন্য রকম’ কিছু করতে পারেন বলে তৃণমূল নেতারা তাঁকে সাবধান করে দিয়েছিলেন। তাঁরাই তাঁকে পিছিয়ে আসার পরামর্শ দেন বলে দাবি করেছেন দেবব্রত।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার রাতে কাশীপুর থানা এলাকার রাজেন্দ্র রায়চৌধুরী লেনে প্রোমোটার অভিজিৎ সরকারকে মারধরের ঘটনায় নাম জড়ায় রানা ও তাঁর সঙ্গীদের। পাঁচ লক্ষ টাকা তোলা না দেওয়ায় রানা তাঁর দলবল নিয়ে রাতের অন্ধকারে অভিজিতের অফিসে চড়াও হন বলে অভিযোগ। ওই প্রোমোটার এবং তাঁর সঙ্গীদের বেধড়ক মারধর করা হয়। ভাঙচুর চালানো হয় অফিসেও। অভিজিতের অফিসের সিসি ক্যামেরায় হামলার ছবি ধরা পড়ে। ঘটনার তদন্তে নেমে মূল অভিযুক্ত অভিজিৎ মণ্ডল ওরফে রানা-সহ ছ’জনকে গ্রেফতার করা হয়। ধৃতদের বিরুদ্ধে তোলাবাজি, চুরি, মারধর, ভাঙচুর, হুমকির অভিযোগে মামলা দায়ের করে পুলিশ। ইতিমধ্যেই অভিযুক্তদের নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ।
কাশীপুরে প্রোমোটারের উপরে হামলার ঘটনার তদন্তে সোমবার ঘটনাস্থলে যায় কলকাতা পুলিশের ফরেন্সিক দল। সঙ্গে ছিলেন কাশীপুর থানার তদন্তকারী আধিকারিকেরা। ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা প্রোমোটারের অফিসের ভিতর থেকে নমুনা সংগ্রহ করেন। এ ছাড়া, তাঁরা সিসি ক্যামেরার ফুটেজও সংগ্রহ করেছেন বলে জানা গিয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে হামলায় জড়িত বাকি অভিযুক্তদের কয়েক জনকে চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। তাঁদের খোঁজেও তল্লাশি চালানো হবে। এক তদন্তকারী আধিকারিক বলেন, ‘‘প্রোমোটারের সঙ্গে অভিযুক্তদের পুরনো কোনও শত্রুতা ছিল কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। হামলায় আরও কেউ যুক্ত ছিল কিনা, তা-ও দেখা হচ্ছে। প্রয়োজনে তাঁদেরও গ্রেফতার করা হবে।’’