বিহারের দুষ্কৃতী পাপ্পুর সঙ্গে গুলজ়ারের যোগাযোগ করিয়েছিলেন কি বিহারের সেই জেলফেরত অভিযুক্ত? গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
পাপ্পু গোষ্ঠীর পর কসবাকাণ্ডে আবার বিহার-যোগ দেখছেন তদন্তকারীরা। কলকাতা পুলিশের একটি সূত্র বলছে, ইকবাল বলে যে ব্যক্তি তাঁকে অস্ত্রের জোগান দিয়েছিলেন বলে দাবি করেছিলেন কসবাকাণ্ডে ধৃত আফরোজ় খান ওরফে গুলজ়ার, আদতে সেই ইকবালের কোনও অস্তিত্বই নেই। তবে তৃণমূল কাউন্সিলর সুশান্ত ঘোষকে খুনের চেষ্টার মামলায় অভিযুক্ত গুলজ়ারকে জেরা করে পুলিশ জানতে পেরেছে, বিহারের বেউড়ের জেলফেরত এক আসামির সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছিল তাঁর। তিনি দাবি করেছেন, ওই ব্যক্তির সঙ্গে মিলেই সুশান্তের উপর হামলার ছক কষেছিলেন গুলজ়ার। তদন্তকারীদের একাংশের দাবি, বিহারের ওই ব্যক্তি গুলজ়ারকে অস্ত্রের জোগান দিয়েছিলেন বলেও দাবি করেছেন তিনি।
পুলিশি জেরায় গুলজ়ার প্রথমে দাবি করেছিলেন, তাঁকে অস্ত্রের জোগান দিয়েছিলেন ইকবাল। হামলার পরিকল্পনাও তাঁর সঙ্গে মিলেই করেছিলেন তিনি। এই মামলায় ধৃত যুবরাজ সিংহ যদিও দাবি করেছিলেন, গুলজ়ারই তাঁদের কাছে নিজেকে ইকবাল বলে পরিচয় দিয়েছিলেন। এর পর থেকে এই ইকবালের অস্তিত্ব নিয়ে ধন্দ তৈরি হয়।
তদন্তকারীদের একাংশের দাবি, ইকবালের কোনও অস্তিত্বই নেই। জেরায় এ কথা গুলজ়ার স্বীকারও করে নিয়েছেন। আদতে জেলফেরত এক আসামির সঙ্গে পরিচয় হয় গুলজ়ারের। সুশান্ত ঘোষকে খুনের চেষ্টার ঘটনায় বিহারের দুষ্কৃতী পাপ্পু চৌধরির দলের যোগ পায় কলকাতা পুলিশ। সূত্রের খবর, এই ঘটনায় বিহারের বৈশালী থেকে যে দুষ্কৃতীদের আনা হয়েছিল, তারা সকলেই পাপ্পুর দলের লোক। তাদের মধ্যে এক জন, যুবরাজ গ্রেফতার হলেও বাকি তিন জন পলাতক। পুলিশের একটি সূত্র মনে করছে, ওই পাপ্পুর সঙ্গে গুলজ়ারের যোগাযোগ করিয়ে দিতে পারেন বেউড়ের জেলফেরত সেই ব্যক্তি। তাঁর কথা গুলজ়ার নিজেই জেরায় জানিয়েছেন। ওই ব্যক্তি পাপ্পু এবং গুলজ়ারের মধ্যে ‘মিডলম্যান’-এর কাজ করে থাকতে পারেন বলে মনে করছে তদন্তকারীদের একাংশ।
পুলিশ জেরায় এ-ও জানতে পেরেছে যে, বিহারের জেলফেরত সেই ব্যক্তির সঙ্গে সুশান্তের উপর হামলার পরিকল্পনা করেছিলেন গুলজ়ার। জেরায় তিনি দাবি করেছেন, সেই ব্যক্তিই অস্ত্র ও লোকের জোগান দেন। দুর্গাপুজোর কিছু দিন আগে বিহারের ওই ব্যক্তি কলকাতায় এসেছিলেন। কেন, তা খুঁজে দেখছেন তদন্তকারীরা। তাদের দাবি, ধরা পড়লে ভুয়ো এক জনের নাম নিয়ে পুলিশকে বিভ্রান্ত করার পরিকল্পনা করে রেখেছিলেন গুলজ়ার। সেই মতো ইকবালের নাম নিয়েছিলেন তিনি।
পুলিশ সূত্রে খবর, জেরায় গুলজ়ার দাবি করেছেন, তিনি পাপ্পুকে চেনেন। কসবাকাণ্ডে ধৃত যুবরাজ এই পাপ্পুর দলের লোক। বৈশালী থেকে আসা পাপ্পুর দলের বাকি তিন জনের খোঁজ মেলেনি। পুলিশ সূত্রে খবর, ওই তিন জনের বিরুদ্ধে বিহারের বিভিন্ন থানায় ৪০টিরও বেশি মামলা রয়েছে।
সুশান্তকে মারতে স্কুটারে করে দু’জন দুষ্কৃতী তাঁর বাড়ির সামনে গিয়েছিলেন। স্কুটারের পিছন থেকে এক জন নেমে পিস্তল তুলে ধরেন কাউন্সিলরকে লক্ষ্য করে। পিস্তল কাজ না করায় হামলার চেষ্টা ব্যর্থ হয়। পরে পালানোর সময় যুবরাজকে ধরে ফেলেন স্থানীয়েরা। তবে স্কুটার নিয়ে পালান অন্য এক জন। ঘটনার চার দিন পর সেই স্কুটারের খোঁজ মিলেছে। পুলিশ সূত্রে খবর। স্কুটার করে যিনি পালিয়েছিলেন, তাঁকে স্কুটার রেখে প্রথমে বন্ডেল গেটের দিকে এবং পরে বালিগঞ্জের দিকে যেতে দেখে যায়। ওই ব্যক্তির খোঁজ চলছে।