—প্রতীকী চিত্র।
আবাসনের নীচে ঘোরাঘুরি করছিলেন এক যুবক। বাসিন্দাদের সন্দেহ হওয়ায় তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে ওই যুবক দাবি করেন, আবাসনের দোতলার একটি ফ্ল্যাটে থাকা তাঁর সঙ্গী তরুণী কিছুতেই দরজা খুলছেন না। মোবাইল ফোন দিয়ে জানলার পাল্লা সরাতে গিয়ে সেটি ভিতরে পড়ে গিয়েছে। এ কথা শোনার পরে বাসিন্দারা গিয়ে সেই ফ্ল্যাটের জানলা দিয়ে দেখেন, ভিতরে সিলিং ফ্যান থেকে গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় ঝুলছেন ওই তরুণী! সোমবার সকালে এই ঘটনাটি ঘটেছে বেলঘরিয়ায়। পুলিশ এসে দরজা ভেঙে তরুণীর দেহ উদ্ধার করে। মৃতার নাম মৌমিতা ঘোষ (২৪)।
পুলিশ জানিয়েছে, আদতে শিলিগুড়ির বাসিন্দা হলেও বছর দেড়েক আগে থেকে বেলঘরিয়ার যতীন দাস নগরের ওই আবাসনের দোতলার একটি ফ্ল্যাটে ভাড়া ছিলেন মৌমিতা। সল্টলেকের একটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমবিএ পড়ছিলেন তিনি। স্থানীয়দের দাবি, ওই যুবককে মৌমিতার সঙ্গেই থাকতে দেখা যেত। বাড়ির মালিকের কাছে তাঁকে ভাই বলে পরিচয় দিয়েছিলেন মৌমিতা। যদিও এ দিন পুলিশ জেনেছে, ওই যুবক মৌমিতার বন্ধু ছিলেন। ঘটনার পরে তাঁকে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্তকারীরা। ঘটনাটি নিছক আত্মহত্যা, না কি এর নেপথ্যে অন্য কোনও কারণ আছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুলিশকর্তারা। তাঁরা জানিয়েছেন, ওই যুবকের কাছ থেকে নম্বর নিয়েই মৌমিতার বাবা-মাকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের এক কর্তা বলেন, ‘‘তরুণীর পরিবারের তরফে কোনও অভিযোগ জমা পড়েনি। সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ শিলিগুড়ির ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে মৌমিতাদের বাড়ি। সেখানে খবর পৌঁছতেই শোকের ছায়া নেমে আসে। মৃতার দেহ শিলিগুড়ি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেখানেই শেষকৃত্য হবে।
স্থানীয় সূত্রের খবর, রবিবারও মৌমিতাকে বাড়ির বাইরে দেখা গিয়েছে। নিমতার বাসিন্দা ওই যুবকও প্রায়ই সেখানে থাকতেন। এ দিন সকালে অন্য বাসিন্দাদের কাছে তিনি দাবি করেন, মৌমিতাকে ফোনে না পেয়ে তাঁর মায়ের কথা মতো ওই আবাসনে এসে বার বার
ডাকাডাকি করেন তিনি। কিন্তু মৌমিতা ফ্ল্যাটের দরজা খুলছিলেন না। তখনই মোবাইল দিয়ে জানলার পাল্লা সরাতে গিয়ে তা ভিতরে পড়ে যায়। এ দিন অন্য বাসিন্দাদের কাছ থেকে খবর পেয়ে কামারহাটি পুরসভার স্থানীয় পুরপ্রতিনিধি দেবযানী মুখোপাধ্যায় পুলিশে খবর দেন। পুলিশ এসে ঘরের ভিতর থেকে ফোনটি উদ্ধার করেছে।
অন্য একটি সূত্রে পুলিশ জেনেছে, রবিবার বেলঘরিয়াতেই বন্ধুদের সঙ্গে পিকনিকে গিয়েছিলেন মৌমিতা এবং ওই যুবক। সেখানে কিছু নিয়ে নিজেদের মধ্যে গন্ডগোল বাধে। তার পরেই এমন ঘটনা কেন, তা-ও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। সূত্রের খবর, পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে ওই যুবক দাবি করেছেন, বেলঘরিয়ার একটি জিমে তাঁর সঙ্গে মৌমিতার পরিচয়। তিন বছর আগে ওই তরুণীর দাদা আত্মহত্যা করেন। তার পর থেকে মৌমিতাও মানসিক অবসাদে ছিলেন। তার চিকিৎসাও চলছিল বলে যুবকের দাবি।