সোমবার জুনিয়র ডাক্তারদের ‘রাজভবন অভিযান’ কর্মসূচির কারণে ওই পথে ছিল পুলিশের কড়া প্রহরা। — নিজস্ব চিত্র।
ডাক্তারদের সংগঠনের ডাকা ‘দ্রোহের কার্নিভাল’-এ ছাড়পত্র (নো অবজেকশন সার্টিফিকেট) দিল না কলকাতা পুলিশ। এই প্রসঙ্গে মুখ্যসচিবের পাঠানোর মেলের উল্লেখও করল পুলিশ। তারা জানাল যে, কেন সিনিয়র ডাক্তারদের মঙ্গলবারের এই কর্মসূচি প্রত্যাহার করতে বলা হচ্ছে, তা ওই মেলে জানানো হয়েছিল। তাই এর পর ওই কর্মসূচির জন্য কোনও ভাবেই এনওসি দেওয়া যাবে না। আয়োজক সংগঠন ‘জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টর্স’-এর তরফে দাবি করা হয়েছে, তারা ওই কর্মসূচির কথা জানিয়ে পুলিশকে চিঠি দিয়েছে, অনুমতি চেয়ে নয়। তাই মঙ্গলবার কর্মসূচি তারা করবেই। সোমবার মুখ্যসচিবের সঙ্গে স্বাস্থ্যভবনে বৈঠক ছিল সিনিয়র ডাক্তারদের বিভিন্ন সংগঠনের। সেখানে মুখ্যসচিবের হাতে কর্মসূচির আমন্ত্রণপত্র তুলে দিয়েছেন বলে দাবি করেছেন সদস্যেরা।
মঙ্গলবার কলকাতার বড় পুজোগুলির প্রতিমা নিয়ে রেড রোডে রাজ্য সরকারের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হবে পুজো কার্নিভাল। ওই দিনই আরজি করের নির্যাতিতার বিচারের দাবিতে এবং অনশনরত জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতি সংহতি জানিয়ে রানি রাসমণি রোডে ‘দ্রোহের কার্নিভাল’-এর ডাক দিয়েছে ‘জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টর্স’। যে রেড রোডে পুজোর কার্নিভাল হবে, তার থেকে এই রানি রাসমণি রোডের দূরত্ব কয়েক মিটার। এই আবহে সোমবার মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ মেল করে ওই সংগঠনকে কর্মসূচি প্রত্যাহারের কথা জানান। এ বার সেই মেলের পরিপ্রেক্ষিতে চিকিৎসকদের সংগঠনকে কর্মসূচি পালনের অনুমতি দিল না কলকাতা পুলিশ। এই প্রসঙ্গে সংগঠনের যুগ্ম কনভেনার পুণ্যব্রত গুণ জানিয়ে দেন, পুলিশের থেকে কোনও অনুমতি চাওয়া হয়নি। কারণ, মিছিল, সভা করা তাঁদের অধিকার। পুণ্যব্রতের কথায়, ‘‘পুলিশ অনুমতি দেয়নি। আমরা তাদের কাছে অনুমতি চাইওনি। আমনা মনে করি, মিছিল, সভা করা আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকারের মধ্যে পড়ে। পুলিশের পক্ষে যাতে ব্যবস্থা করতে সুবিধা হয়, তাই কোনও কর্মসূচির আগে পুলিশকে ইন্টিমেট (অবগত) করি। সেই ইন্টিমেশন আমরা চার দিন আগে দিয়েছিলাম। তার পরেও উত্তর পাইনি। সোমবার পুলিশকে এই নিয়ে দ্বিতীয় মেল করি। তার কিছু ক্ষণ পর মুখ্যসচিবের পক্ষ থেকে একটি ইমেল আসে। সেখানে বলা হয়, আমার যাতে এই কর্মসূচি প্রত্যাহার করি। আমরা পাল্টা মেল করে জানাই, এটা আমাদের অধিকার। পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি মেনে তা হবে।’’
কেন কর্মসূচি প্রত্যাহার করতে বলা হচ্ছে, তা-ও জানানো হয়েছিল মুখ্যসচিব মনোজের মেলে। মুখ্যসচিব জানান, মঙ্গলবার রাজ্য সরকার আয়োজিত দুর্গা পুজোর কার্নিভাল এবং ‘দ্রোহের কার্নিভাল’ প্রায় একই সময়ে। পুজো কার্নিভাল একটি বড় অনুষ্ঠান। হাজার হাজার মানুষ সেই অনুষ্ঠানে যোগ দেন। বিদেশ থেকে বহু গণ্যমান্য ব্যক্তি এই সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সাক্ষী হতে আসেন। তাই সে সময় ‘দ্রোহের কার্নিভাল’-এর মতো কর্মসূচির কারণে দুর্গাপুজোর কার্নিভালে আসা মানুষদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে। এই বিষয়ে গত ১১ অক্টোবর কলকাতা হাই কোর্টের একটি নির্দেশ কথাও ইমেলে উল্লেখ করেছেন মুখ্যসচিব। দক্ষিণ কলকাতার ত্রিধারা সম্মিলনীর পুজো মণ্ডপে স্লোগান দেওয়ার অভিযোগে ধৃত ন’জনকে অন্তর্বর্তী জামিন দেয় কলকাতা হাই কোর্ট। তবে জামিন দেওয়ার সময় বিচারপতি শম্পা সরকার স্পষ্ট বলে দেন, রাজ্য সরকার আয়োজিত পুজোর কার্নিভালে কোনও রকম ব্যাঘাত সৃষ্টি করা যাবে না। মঙ্গলবার পুলিশ মুখ্যসচিবের এই মেলের কথা উল্লেখ করেই এনওসি দিতে অস্বীকার করে। এই প্রসঙ্গে পুণ্যব্রত বলেন, ‘‘মঙ্গলবার দুপুরে কলকাতা পুলিশে যুগ্ম কমিশনার একটি মেল করে জানান, মুখ্যসচিবের মেলের পরিপ্রেক্ষিতে আপনাদের এনওসি দেওয়া হচ্ছে না। ওটা ছাড়াই কর্মসূচি হবে।’’ তিনি জানিয়েছেন, ‘জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টর্স’ ছাড়া আরও বহু সংগঠন যোগ দেবেন মঙ্গলবারের কর্মসূচিতে।
মঙ্গলবার স্বাস্থ্যভবনে মুখ্যসচিবের সঙ্গে বৈঠক করতে গিয়ে তাঁর হাতেই এই কর্মসূচির আমন্ত্রণপত্র দিয়ে এসেছেন সংগঠনের সদস্যেরা। বৈঠকে মুখ্যসচিব ছাড়াও রাজ্য প্রশাসনের তরফে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রসচিব নন্দিনী চক্রবর্তী, রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তা। ঘটনাচক্রে, বৈঠকে অনুপস্থিত ছিলেন রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম। সেই বৈঠক ফলপ্রসূ হয়নি বলে দাবি সিনিয়র ডাক্তারদের। বৈঠক থেকে বেরিয়ে তাঁরা হতাশা প্রকাশ করেন। তবে বৈঠকে সব কিছু নেতিবাচক হয়েছে, এমনটা মানতে নারাজ মুখ্যসচিব। তিনি জানান, জুনিয়র ডাক্তারদের ১০টি দাবির মধ্যে সাতটির বিষয়ে অগ্রগতি হয়েছে। তবে বাকি তিনটি দাবি কবে পূরণ হবে, সেই ‘টাইমলাইন’ বা সময়সীমা দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন তিনি। এই বৈঠকের পরেই তাঁর হাতে দেওয়া হয়েছে ‘দ্রোহের কার্নিভাল’-এর আমন্ত্রণপত্র, যা প্রত্যাহার করার জন্য সোমবারই ডাক্তারদের মেল করেছিলেন তিনি।