যাদবপুর-কাণ্ডে পাঁচ এফআইআর, তবু নড়েচড়ে বসেনি পুলিশ

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২০ ০২:০৭
Share:

তাণ্ডবের পরে সেই ইউনিয়ন রুম। ফাইল চিত্র

মাসের পর মাস যায়, কিন্তু পাঁচ-পাঁচটি এফআইআর হাতে নিয়েও পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করে না! চার্জশিট? তা-ও জমা পড়েনি চার মাসে।

Advertisement

রবিবার রাতে দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে (জেএনইউ) হামলার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এ শহরের পুরনো মামলার খোঁজ করতে গিয়েই সোমবার সামনে এসেছে এই তথ্য। জানা গিয়েছে, গত বছরের সেপ্টেম্বরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়র যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া নিয়ে যে চরম হুলস্থুল পরিস্থিতি তৈরি হয়, এবং যার জেরে খোদ রাজ্যপালকে সেখানে ছুটে যেতে হয়, তা নিয়ে কোনও হেলদোলই দেখায়নি কলকাতা পুলিশ। এমনকি, ওই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঢুকে এবিভিপি-র লোকজন হামলা চালালেও চার মাস পরে গ্রেফতার করা তো দূর, জিজ্ঞাসাবাদের জন্যও কাউকে ডাকা হয়নি বলে যাদবপুর থানা সূত্রের খবর। যদিও ওই ঘটনার দু’দিনের মধ্যেই যাদবপুর থানায় দায়ের করা হয়েছিল মোট পাঁচটি এফআইআর।

গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল। ছিলেন বিজেপি নেত্রী ও ফ্যাশন ডিজাইনার অগ্নিমিত্রা পাল। বাবুলকে ঘিরে ধরে কালো পতাকা দেখানোর পাশাপাশি অগ্নিমিত্রাকে হেনস্থা করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। দীর্ঘক্ষণ তাঁকে সেখানে আটকে রাখা হয়েছিল বলে অভিযোগ করেন বাবুলও। তাঁকে উদ্ধার করতে এর পরে যাদবপুর ক্যাম্পাসে যান রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। রাজ্যপাল বাবুলকে বার করে নিয়ে যাওয়ার পরেই রাতে ওই ক্যাম্পাসে ঢুকে এবিভিপি-র লোকজন হামলা চালায় বলে অভিযোগ ওঠে। জেএনইউ-র মতো ওই ঘটনা নিয়েও দেশ জুড়ে ওঠে নিন্দার ঝড়।

Advertisement

পুলিশ সূত্রের খবর, ঘটনার দিন রাতেই একটি স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করে যাদবপুর থানা। পরের দিন দুপুরে অগ্নিমিত্রা পালের অভিযোগের ভিত্তিতে একটি এফআইআর দায়ের হয়। এর পরে আরও দু’টি এফআইআর করা হয় এসএফআই এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক জন পড়ুয়ার দায়ের করা নিগ্রহের অভিযোগের ভিত্তিতে। সেই রাতে আরও এক যুবক যাদবপুর থানায় গিয়ে তাঁকে মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ দায়ের করেন। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে রুজু হয় আরও একটি এফআইআর।

তা হলে ঘটনার পরে চার মাস কেটে গেলেও কাউকে গ্রেফতার করা হল না কেন? ওই থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত এক আধিকারিক এ দিন বলেন, ‘‘ঠিক কোন ঘটনা, মনে করতে পারছি না।’’ শেষে ঘটনার কথা মনে করানোর পরে তিনি বলেন, ‘‘ওই ঘটনায় আর কিছু হয়নি।’’ চার্জশিট? এ বার ওই পুলিশকর্মীর বক্তব্য, ‘‘নাহ! ওটা যেমন ছিল, তেমনই পড়ে আছে!’’ কিন্তু কেন? উত্তর নেই ওই পুলিশকর্মীর। উত্তর মেলেনি দক্ষিণ সাবার্বান ডিভিশনের ডিসি সুদীপ সরকারেরও। বারবার ফোন করা হলেও তিনি বলেন, ‘‘আইন-শৃঙ্খলার পরিস্থিতি নিয়ে এখন ব্যস্ত রয়েছি। পরে কথা হবে।’’

এই ডিসি-ই সেই সময়ে জানিয়েছিলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঢোকার বাধ্যবাধকতা বুঝে কাজ করতে হচ্ছে তাঁদের। ঠিক পথেই তদন্ত এগোচ্ছে। অভিযুক্তদের চিহ্নিত করে দ্রুত গ্রেফতার করা হবে। যাদবপুরের এসএফআই নেতা দেবরাজ দেবনাথ বলেন, ‘‘ও সব পুলিশি আশ্বাস সত্যি হয় না। দোষীদের ধরতে পুলিশের সদিচ্ছা যে নেই, তা নতুন করে বলে দিতে হয় না। উল্টে পুলিশ লাঠি চালায়।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement