The Ganges

Chhath Puja: জলেই গেল বিধি, ছটে ছাড় পেল না গঙ্গা

বুধবারের মতো বৃহস্পতিবার সকালেও কড়া নজরদারির ঘেরাটোপে ছিল রবীন্দ্র সরোবর এবং সুভাষ সরোবর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০২১ ০৫:৩৭
Share:

উদ্দাম: ছটপুজো উপলক্ষে তারস্বরে ডিজে চালিয়ে চলছে নাচ। বুধবার রাতে, অরবিন্দ সরণিতে। নিজস্ব চিত্র

কলকাতায় নতুন করে করোনার সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা বাড়িয়েই শেষ হল আরও একটি উৎসব। অভিযোগ, রাতভর চলল দেদার বিধিভঙ্গ। বুঝিয়ে-সুঝিয়ে কাজ হাসিলের লক্ষ্যে কার্যত নীরব দর্শকের ভূমিকাই পালন করল পুলিশ। সেই সঙ্গে কলকাতার দু’টি সরোবরে দূষণের আশঙ্কায় ছটের পুণ্যার্থীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হলেও গঙ্গার ক্ষেত্রে এ বারও দেখা গেল ‘আলাদা নিয়ম’। যে নিয়মে গঙ্গায় অবাধে ফেলা হল তেল-সিঁদুর, ফুল-মালা। যা প্রশ্ন তুলে দিল, সরোবর বাঁচানোর মূল্য কি গঙ্গা দূষণ?

Advertisement

বুধবারের মতো বৃহস্পতিবার সকালেও কড়া নজরদারির ঘেরাটোপে ছিল রবীন্দ্র সরোবর এবং সুভাষ সরোবর। এক জন ডেপুটি কমিশনার এবং পাঁচ জন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনারের নেতৃত্বে প্রায় ৫০০ পুলিশকর্মী পালা করে ওই দুই ঘাটে পাহারা দিয়েছেন। সেখানে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটলেও পুরসভার ব্যবস্থা করা পৃথক ১৩৮টি জলাশয়ে সে ভাবে কোনও নিয়মই মানা হয়নি বলে অভিযোগ। দূরত্ব-বিধি মানার কোনও চেষ্টা তো ছিলই না, অধিকাংশের মুখও ছিল মাস্কহীন। ওই সব জলাশয়ের ধারে কোথাও রাত পর্যন্ত নাচ হয়েছে তাসা বাজিয়ে, কোথাও তারস্বরে বেজেছে বক্স। রাত থেকে বাজি ফাটার একাধিক অভিযোগও করেছেন শহরের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ। কলকাতা পুলিশের দাবি, এর মধ্যে ধরপাকড়ও চালানো হয়েছে বিস্তর। ১৫৩ জনকে গ্রেফতার করেছে তারা। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে ২৭.৭ কিলোগ্রাম নিষিদ্ধ বাজি। উদ্ধার হয়েছে ৪.২ লিটার মদ। তার পরেও এ দিন সকালে উৎসব শেষে সেই ভিড়কেই বক্স বাজিয়ে ঘুরতে দেখা গিয়েছে পাড়ায় পাড়ায়। উন্মাদনার মধ্যে চলেছে ঝুঁকির যাত্রাও। কোথাও লরিচালকের আসনের মাথার উপরে সওয়ার হয়েছেন অনেকে। কোথাও একটি মোটরবাইকে হেলমেট না পরেই উঠেছেন তিন-চার জন।

গঙ্গার ঘাটগুলিতেও দেখা গিয়েছে গা-ঘেঁষাঘেঁষি ভিড়। নিমতলা ঘাটে পুলিশের তরফে মাস্ক পরে থাকার ঘোষণা শুনে এক পুণ্যার্থী বললেন, ‘‘মাস্ক পরে কোনও স্নান হয় না। ছটের গঙ্গাস্নানই বা হবে কী করে?’’ ঘাটের কাছে হাজির এক মহিলা বললেন, ‘‘এক বার করোনা হয়ে গিয়েছে, প্রতিষেধকের দু’টি ডোজ়ও নিয়েছি। ফলে আর ভয় পাচ্ছি না। তা ছাড়া পুণ্য কাজে এলে রোগের ভয় থাকে না।’’

Advertisement

এর মধ্যেই চলেছে গঙ্গার জলে তেল-সিঁদুর, মালা বিসর্জন। যদিও ২০১৪-র জুন মাসে কেন্দ্রীয় সরকারের জলসম্পদ, নদী উন্নয়ন এবং গঙ্গা পুনরুজ্জীবন মন্ত্রক ‘নমামি গঙ্গে’ প্রকল্প ঘোষণা করে জানিয়েছিল, ২০ হাজার কোটি টাকার ওই প্রকল্পের মাধ্যমে গঙ্গার দূষণ রোধ, তার সংরক্ষণ ও পুনরুজ্জীবনের কাজ করা হবে। তার তিন বছর পরে ২০১৭ সালে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ একটি রিপোর্টে বলে, ছটপুজোর জন্য রবীন্দ্র সরোবরের পরিবেশের ক্ষতি হওয়ার কারণে সেখানে পুজো না করার জন্য পুণ্যার্থীদের সচেতন করা হোক। পরবর্তী কালে আদালতের নির্দেশে রবীন্দ্র সরোবরের পাশাপাশি সুভাষ সরোবরেও ছটপুজো বন্ধ হয়। কিন্তু রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ বলে দেয়, সরোবরের পরিবর্তে গঙ্গায় পুজো করতে পারবেন পুণ্যার্থীরা! এ বারও তা-ই হয়েছে। যা প্রশ্ন তুলে দিয়েছে, সরোবর বাঁচানোর মূল্য কি গঙ্গা দূষণ?

এ প্রসঙ্গে প্রশাসনের কেউ মন্তব্য না করলেও তাঁদের দাবি, জলের স্রোত না থাকায় রবীন্দ্র সরোবরে ছটপুজো হলে সেখানে দূষিত পদার্থ জমে থাকে। কিন্তু গঙ্গায় স্রোত থাকায় সেই সমস্যা হয় না। কিন্তু পরিবেশকর্মীদের বক্তব্য, বর্ষার পরবর্তী সময়ে গঙ্গায় জল কমতে শুরু করে। তখন জলে কলিফর্ম এবং ফিক্যাল কলিফর্ম ব্যাক্টিরিয়ার সংখ্যা বাড়তে থাকে। এই পরিস্থিতিতে গঙ্গায় ছটপুজো হলে কঠিন বর্জ্যের দূষণের আশঙ্কা থেকেই যায়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement