গঙ্গার দু’পারে সফল পুলিশ

ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজের জন্য শনিবার থেকে ব্রেবোর্ন রোড উড়ালপুল বন্ধ। শনি ও রবিবার বড়বাজার তল্লাটে যানজট না থাকলেও সোমবার শহর অচল হওয়ার আশঙ্কা ছিল। কিন্তু পুলিশের তৎপরতায় দুর্ভোগ হয়নি বললেই চলে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০১৭ ০২:৩৭
Share:

হুড়োহুড়ি: বন্ধ ব্রেবোর্ন রোড উড়ালপুল। গঙ্গা পেরোতে তাই ফেরিঘাটে ভিড়। সোমবার, হাওড়ায়। ছবি: প্রদীপ আদক

সোমবারটা চ্যালেঞ্জ ছিল গঙ্গার দু’পারেই! আর সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে পুরোপুরি সফল কলকাতা ও হাওড়ার পুলিশ।

Advertisement

ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজের জন্য শনিবার থেকে ব্রেবোর্ন রোড উড়ালপুল বন্ধ। শনি ও রবিবার বড়বাজার তল্লাটে যানজট না থাকলেও সোমবার শহর অচল হওয়ার আশঙ্কা ছিল। কিন্তু পুলিশের তৎপরতায় দুর্ভোগ হয়নি বললেই চলে।

সুড়ঙ্গ তৈরির জন্য শুক্রবার রাত থেকেই ওই উড়ালপুল বন্ধ করে দেওয়া হয়। হাওড়া ব্রিজ থেকে কলকাতায় ঢোকার প্রধান রাস্তা বন্ধ থাকা মানে প্রবল যানজট আর হয়রানির আশঙ্কা। কিন্তু গত তিন দিন বড়বাজারে সকলের মুখে একটাই কথা, ‘‘ইস! বড়বাজারে বছরের অন্যান্য দিনগুলিও যদি এ রকম থাকত!’’

Advertisement

হাওড়া-ঠাকুরপুকুর রুটের এক সরকারি বাসের চালক বলছিলেন, ‘‘সোমবার সকালে এক্সাইড মোড়ে যানজট থাকলেও ঠিক তার উল্টো ছবি ছিল স্ট্র্যান্ড রোডে। সপ্তাহের শুরুর দিন বড়বাজার যে এতটা সুনসান থাকবে, ভাবা যায় না।’’ এ দিন রাস্তা যানজটমুক্ত করতে যথেষ্ট সজাগ ছিল পুলিশ। প্রথমত, অনেক বেশি পুলিশকর্মী মোতায়েন রাখা হয়। দ্বিতীয়ত, হাওড়া ব্রিজ থেকে স্ট্র্যান্ড রোডে ঢোকার মুখে বাসের গতির উপরে কড়া নজর রেখেছিল পুলিশ। গাড়ি যাতে যত্রতত্র না দাঁড়ায়, তা-ও খেয়াল রাখে পুলিশ।

মেট্রোর কাজের জন্য ৬ জুলাই থেকে ৪২ নম্বর স্ট্র্যান্ড রোডের প্রায় ৮০টি দোকান বন্ধ। ওই ঠিকানার কুড়ি জন ব্যবসায়ী এ দিন হাওড়া ব্রিজ থেকে স্ট্র্যান্ড রোডে ঢোকার মুখে পুলিশের সঙ্গে একযোগে কাজ করছিলেন। এ রকমই এক ব্যবসায়ী শত্রুঘ্ন মাহাতোর কথায়, ‘‘কাজ শুরুর আগে হাওড়া ব্রিজ ট্র্যাফিক গার্ডের ওসি আমাদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। আমরা যথাসাধ্য সহযোগিতা করেছি। রাস্তা পরিষ্কার রাখতে পুলিশের সঙ্গে হাতও মিলিয়েছি।’’

কলকাতা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (১) বিনীতকুমার গোয়েল বলেন, ‘‘ব্রেবোর্ন রোড উড়ালপুল বন্ধ রাখার পরেও শহর যে ভাবে সচল রইল, তাতে আমরা হাওড়ার পুলিশ থেকে বড়বাজারের ব্যবসায়ী— সকলকেই ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’’

পুলিশের দাবি, তিন দিন শহর সচল রাখতে গত কয়েক মাস ধরে হাওড়া পুলিশের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক হয়েছে। রাস্তায় লিফলেট আকারে বিলি করা হয়েছিল রুট ম্যাপ। ওই লিফলেটেই পরিষ্কার বলা হয়েছিল, হাওড়া থেকে কলকাতামুখী গাড়ি কোন কোন রাস্তা ব্যবহার করতে পারবে। পাশাপাশি, রাস্তা দখল করে বেআইনি পার্কিং না থাকায় সোমবার বড়বাজারে গাড়ি নির্বিঘ্নেই চলেছে। ট্র্যাফিক পুলিশের এক কর্তার কথায়, ‘‘কাজের দিন বড়বাজারের রাস্তার প্রায় অর্ধেকটাই গাড়ির দখলে থাকে। কিন্তু গত তিন দিন এই তল্লাটে সব রাস্তাই পার্কিংমুক্ত ছিল। পাশাপাশি, হাওড়া ব্রিজের উপরে ধীর গতির যানবাহন বন্ধ ছিল। রাস্তার আশপাশে বসতে দেওয়া হয়নি হকারদেরও।’’ পুলিশের দাবি, সোমবার হাওড়া পুলিশ বেশি করে সতর্ক থাকায় দক্ষিণ কলকাতামুখী অধিকাংশ গাড়ি ও ট্যাক্সি বিদ্যাসাগর সেতু দিয়ে চলায় এ দিন বড়বাজার এলাকায় যান চলাচল ছিল স্বাভাবিক।

অন্য দিকে, মঙ্গলাহাটের জন্য সোমবার ট্র্যাফিক সামলানোটা ছিল হাওড়া সিটি পুলিশের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জে সফল হাওড়াও। সব থেকে বড় সমস্যা ছিল হাটের জন্য আসা বড় ট্রাক ও লরিকে আটকানোর পাশাপাশি রাস্তায় হাট বসতে না দেওয়া। এ দিন দু’টি কাজেই পুরোপুরি সফল হাওড়া। ফলে এ দিন হাওড়া স্টেশন থেকে যে সব যানবাহন ফোরশোর রোড দিয়ে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছিল, সেগুলি চলেছে মসৃণ ভাবে। পুলিশ আগেই বলেছিল, শনি থেকে সোমবার পর্যন্ত বঙ্কিম সেতুর আশপাশ দিয়ে শ্লথ গতির যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এ দিন তা করায় হাওড়া ময়দান চত্বরের যে জায়গায় ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজ চলছে, সেখানে যানজট হয়নি। পুলিশের আশঙ্কা ছিল হাওড়া ব্রিজে ওঠার মুখে যানজট নিয়ে। এ দিন তা-ও হয়নি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement