ব্যবস্থা: পুণ্যার্থীদের সুরক্ষার জন্য ব্যারিকেড দিয়ে ঘেরা হয়েছে বাজেকদমতলা ঘাট।
পরীক্ষা একাধিক। এক দিকে যেমন দুই সরোবর রক্ষা করতে হবে, তেমনই নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করতে হবে ছটের জন্য তৈরি বিকল্প ঘাট ও জলাশয়গুলিতে। পুজোর সামগ্রী দ্রুত সরিয়ে ফেলে দূষণ রোধ যেমন করতে হবে, তেমনই আটকাতে হবে উৎসব পালন করতে গিয়ে ট্র্যাফিক-বিধি ভাঙার প্রবণতাকে। এর সঙ্গেই বেপরোয়া উৎসব পালনের নামে দেদার নিষিদ্ধ বাজি ফাটানো যেমন ঠেকাতে হবে, তেমনই পাড়ায় পাড়ায় রাতভর সাউন্ড বক্স বা মাইকের দাপটও বন্ধ করতে হবে!
কিন্তু রবিবার দুপুর থেকে সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ছটপুজো ঘিরে এত সব পরীক্ষায় কি পাশ করবে পুলিশ-প্রশাসন? প্রস্তুতির খতিয়ান তুলে ধরে কড়া হাতে সামাল দেওয়ার দাবি করা হলেও অনেকেই সংশয়ী, এই ধরনের উৎসবে পুলিশ-প্রশাসনের বুঝিয়ে ‘কার্যোদ্ধারের’ প্রবণতা নিয়ে। গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা মনে করিয়ে তাঁদের দাবি, গত বছর দুই সরোবরকে বাঁচানো গেলেও বাজি এবং সাউন্ড বক্সের শব্দ জব্দ করতে রীতিমতো হিমশিম খেয়েছিল পুলিশ। ছটপুজোর সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত যত বেড়েছিল, ততই মাত্রাছাড়া হয়ে উঠেছিল শব্দের তাণ্ডব। বিকল্প ঘাট এবং জলাশয়গুলিতেও তেমন নজরদারি সে বার চোখে পড়েনি বলে অভিযোগ। কলকাতা পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা যদিও শনিবার জানিয়েছেন, এ দিন সন্ধ্যা থেকেই শহরের দখল নেবে ছটে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত বাহিনী। রবিবার, ছটের সন্ধ্যার আগেই পথে নামা এমন পুলিশকর্মীর সংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় পাঁচ হাজার। দুই সরোবরের জন্য আলাদা করে দেড় হাজার পুলিশকর্মী থাকছেন। সরোবরের কয়েকটি গেট নিয়ে একটি করে জ়োন চিহ্নিত করে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে ডেপুটি কমিশনার পদমর্যাদার এক-এক জন পুলিশ আধিকারিককে। এ ছাড়াও সম্পূর্ণ ভাবে ঘিরে দেওয়া হচ্ছে দুই সরোবর।
শনিবার সুভাষ সরোবর চত্বরে গিয়ে দেখা গেল, প্রায় বেলেঘাটা থানার কাছ থেকে বাঁশের ব্যারিকেড দিয়ে ঘিরে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। একই ভাবে বাঁশ রাখা হয়েছে নারকেলডাঙা মেন রোডের দিক থেকে সুভাষ সরোবরে ঢোকার রাস্তাতেও। ওই সরোবরের কাজের সঙ্গে যুক্ত সত্যেন রায় নামে এক ব্যক্তি বললেন, ‘‘কলকাতার ডার্বি রয়েছে। সল্টলেক স্টেডিয়ামের খেলা শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা হচ্ছে। তার পরেই বাঁশের কাঠামোর মাঝে গার্ডরেল দিয়ে পুলিশ রাস্তা বন্ধ করে দেবে। রবিবার বেলা ১২টা থেকে বেশি রকম কড়াকড়ি হবে। ওই দিন দুপুর থেকেই মূলত ছটেরলোকজন জলাশয়ের কাছে যাবেন। তার পরে সোমবার ভোরে সূর্য প্রণাম করতে ফের জলের কাছে যাওয়ার কথা।’’ তিনি জানান, মূল পাঁচটি গেট ছাড়াও সরোবরের কয়েকটি ভাঙা রেলিংয়ের অংশও ঢেকে দেওয়া হচ্ছে টিন দিয়ে।
একই চিত্র রবীন্দ্র সরোবরেও। এই জাতীয় সরোবর ঘিরে অতীতে একাধিক গন্ডগোল হয়েছে। ছটের পুণ্যার্থীদের বিরুদ্ধে গেট ভেঙে ঢোকার চেষ্টারও অভিযোগ উঠেছে। সেই কারণে এ দিন দেখা গেল, রবীন্দ্র সরোবরের ১২টি গেটের প্রতিটি ইতিমধ্যেই টিন এবং বাঁশ দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে। সেখানে কর্মরত রবি বারিক নামে এক ব্যক্তি বললেন, ‘‘আজ সন্ধ্যা সাতটা থেকেই রবীন্দ্র সরোবর বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। কেএমডিএ-র কয়েকশো নিরাপত্তাকর্মী ও পুলিশ ছাড়া কারও প্রবেশ নিষেধ।’’ কেএমডিএ-র এক কর্তা জানান, এই সরোবরের বিকল্প হিসাবেই টালিগঞ্জ, গল্ফ গার্ডেন, যোধপুর পার্ক, কসবা, পাটুলি, নোনাডাঙা-সহ বেশ কয়েকটি জায়গায় বিকল্প জলাশয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিকল্প ব্যবস্থা রয়েছে বালিগঞ্জ এবং রাসবিহারীর কয়েকটি জায়গাতেও।
কিন্তু এমনই একটি বিকল্প জলাশয়ে গিয়ে দেখা গেল, শনিবার রাত পর্যন্তও সেখানে প্রস্তুতির তেমন কোনও ব্যাপার নেই। ঘাটের কাছে কয়েকটি বাঁশ ফেলে রেখেই তখনও পর্যন্ত কাজ সারা হয়েছে। শুধুমাত্র দইঘাট এবং তক্তাঘাটে প্রতি বছর মুখ্যমন্ত্রী যান বলে সেখানে মঞ্চ বাঁধার কাজ চলছে। সেই কাজে ব্যস্ত এক ব্যক্তির মন্তব্য, ‘‘ব্যবস্থা রেখেও তেমন লাভ নেই। রবিবার দুপুর থেকেই তাসা, সাউন্ড বক্স নিয়ে সব আসতে শুরু করবেন। তখন কারও পক্ষেই কিছু সামাল দেওয়া সম্ভব নয়।’’
সুভাষ সরোবরের কাছে কাদাপাড়া সেবক নগরে আবার দেখা গেল, ইট, বালি, সিমেন্ট দিয়ে বিকল্প জলাশয় তৈরির কাজ চলছে। সেখানে উৎসবের জন্য মঞ্চ বাঁধা হয়ে গিয়েছে। তাতেই তোলা হচ্ছে বিশাল মাপের বেশ কয়েকটি সাউন্ড বক্স। প্রচণ্ড আওয়াজ হবে তো? স্থানীয় এক যুবক বললেন, ‘‘গত দু’বছর তো কিছুই হয়নি। এ বারও হবে না? আরও ১২টা এ রকম বক্স আসছে।’’