n বাজি-গড়: পরিবেশবান্ধব বাজি কোনটা, তা নিয়েই এখন ধন্দে পুলিশ। ফাইল চিত্র
সাতসকালে ‘পশ্চিমবঙ্গ বাজি শিল্প উন্নয়ন সমিতি’র কর্মকর্তাকে ফোন লালবাজারের এক বড় কর্তার। উদ্বিগ্ন গলায় জানতে চাইলেন, কোনটা ‘গ্রিন ক্র্যাকার’ (পরিবেশবান্ধব সবুজ বাজি) আর কোনটা নয়, বুঝবেন কী করে? সদুত্তর তো পেলেনই না, উল্টে সমিতির কর্মকর্তার বক্তব্যে উদ্বেগ আরও বাড়ল।
নিজের অভিজ্ঞতা থেকে পুলিশকে ওই কর্মকর্তা জানান, দিনকয়েক আগেই কলকাতার ব্যবসায়ীদের কাছে আসা কয়েক বাক্স ‘পরিবেশবান্ধব’ বাজি নিয়ে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের দফতরে গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে বাজির গুণমান বুঝতে বাক্সগুলি স্ক্যান করে দেখা হয়। পর্ষদের ওই স্ক্যানারের নীচে ফেললেই কোনও বাজিতে কোন উপকরণ, কতটা মাত্রায় রয়েছে, তা ধরা পড়ে। কিন্তু সে দিন স্ক্যানারে কোনও তথ্যই ফুটে ওঠেনি। ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘‘তা হলেই বুঝুন, এমন ভুয়ো বাক্সে কী কী বাজি থাকতে পারে। আমরাই বাক্স দেখে পরিবেশবান্ধব কি না ধরতে পারি না, আপনারা কী ধরবেন? পুলিশ কি তা হলে এ বার স্ক্যানার হাতে ঘুরবে?’’
এই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে পুলিশ মহলেও। বাজি ঠেকাতে কোন পথে কী ভাবে এগোনো হবে, তা-ই বুঝে উঠতে পারছে না তারা। গত বছরের মতো বিস্ফোরক আইনে মামলা করে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ থাকবে কি না, বোঝা যাচ্ছে না তা-ও। গত বছর করোনা পরিস্থিতির কথা মনে করিয়ে সব রকম বাজির বিক্রি ও পোড়ানো নিষিদ্ধ করেছিল কলকাতা হাই কোর্ট। তার পরেই বিস্ফোরক আইনের ৯বি (১) (সি) ধারায় মামলা রুজু করতে শুরু করে পুলিশ। ওই ধারায় তিন বছরের কারাবাস ও মোটা অঙ্কের জরিমানার কথা বলা আছে। এর সঙ্গে যুক্ত করা হয় ভারতীয় দণ্ডবিধির একাধিক ধারাও। বিস্ফোরক আইনে মামলা রুজু করা অবশ্য নতুন নয়। অন্যান্য বার কালীপুজোর সময়ে দু’দিন নিষিদ্ধ শব্দবাজি ফাটালে ওই আইনে মামলা হত। কিন্তু গত বছর আদালত সব রকমের বাজি পোড়ানো এবং বিক্রি নিষিদ্ধ করায় কড়া হাতে সেই ধারা ব্যবহার করতে পেরেছিল পুলিশ। কিন্তু এ বার পরিবেশবান্ধব বাজি পোড়ানোয় দু’ঘণ্টা ছাড় থাকায় পুলিশের তরফে ওই ধারা ব্যবহার করা কতটা সহজ হবে, সেই প্রশ্ন রয়েছে।
অনেকেরই আশঙ্কা, এই সুযোগে শহরের যত্রতত্র নিষিদ্ধ বাজি পোড়ানো বাড়তে পারে। তাঁদের বক্তব্য, গত বছর ওই কড়া ধারা ব্যবহার করা
সত্ত্বেও পুলিশকে বাজি পোড়ানো বন্ধ করতে নাজেহাল হতে হয়েছিল। দিনভর সব শান্ত থাকলেও রাত যত বেড়েছে, ততই বাজির উপদ্রবের অভিযোগ এসেছে শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে। বাজি ফাটানোর জন্য কুখ্যাত এলাকাগুলির গলিঘুঁজি ও বাড়ির ছাদে কার্যত পৌঁছতেই পারেনি পুলিশ।
যুগ্ম কমিশনার পদমর্যাদার এক পুলিশকর্তা জানালেন, এ নিয়ে বৃহস্পতিবার লালবাজারে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছনো যায়নি। তবে হেয়ার স্ট্রিট ও বৌবাজার থানা এলাকায় সব চেয়ে বেশি বাজি বিক্রি হওয়ায় এ বার প্রথম থেকেই সেখানে কড়া নজরদারি শুরু হয়েছে। গত বছর বিধি উড়িয়ে বাজি পোড়ানোর সব চেয়ে বেশি অভিযোগ এসেছিল যাদবপুর, গরফা, কসবা, ভবানীপুর, উল্টোডাঙা, সিঁথি, জোড়াবাগান, কাশীপুর ও বেলেঘাটা থেকে। বাদ যায়নি লেক টাউন ও সল্টলেকের একাধিক এলাকাও। সল্টলেকে দীপাবলির সময়ে বাজির দাপট কালীপুজোকেও টেক্কা দেয় বলে অভিযোগ। এ বার তাই প্রথম থেকেই ওই সমস্ত এলাকা নিয়ে কঠোর হচ্ছে পুলিশ।
কিন্তু আদালত বাজি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ না করে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের নির্দেশ বহাল রাখলে এই সব পরিকল্পনা কাজে লাগবে তো? বহু উত্তরই নির্ভর করছে আজ, শুক্রবারের আদালতের রায়ের উপরে।