স্বাধীনতার মধ্যরাতে নারী স্বাধীনতার জন্য ‘মেয়েরা রাত দখল করো’ কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়েছিল প্রথমে শহরের তিন জায়গায়। অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস, যাদবপুর ৮বি বাসস্ট্যান্ড এবং কলেজ স্কোয়্যার। কিন্তু সেই ডাকে সাড়া দিয়েছিল কার্যত গোটা বাংলা। তার ফলে গোটা রাজ্যের ছবিটা পাল্টে গেল বুধবার মাঝরাতে।
আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে কর্তব্যরত এক চিকিৎসক পড়ুয়াকে ধর্ষণ এবং খুনের প্রতিবাদেই এই কর্মসূচি। কিন্তু এই প্রতিবাদ কর্মসূচি চলাকালীন মধ্যরাতে সেই আরজি করেই হামলা চালানো হয়।
বুধবার রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ আরজি করের দিকে তখন মেয়েদের রাত দখলের কর্মসূচির একটি মিছিল চলছিল। ঠিক সেই সময়েই একদল ব্যক্তি আরজি করের জরুরি বিভাগের বাইরে তাণ্ডব চালান।
তাঁদের কয়েক জনের হাতে রড এবং লাঠি ছিল বলে অভিযোগ। জরুরি বিভাগের বাইরের কোলাপসিবল গেট ভেঙে উপড়ে ফেলা হয়।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের গেট ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করেন তাঁরা। ভেঙে তছনছ করে ফেলা হয় গোটা জরুরি বিভাগ।
হামলাকারীদের প্রথম নিশানাই ছিল জরুরি বিভাগ। হাতের সামনে যা পেয়েছেন, তা-ই ভেঙেছেন হামলাকারীরা। কিন্তু জরুরি বিভাগের চার তলার যে সেমিনার হল থেকে ওই মহিলা চিকিৎসকের দেহ গত শুক্রবার উদ্ধার হয়েছিল, হামলাকারীরা সেখানে গিয়েছিলেন কি না, তা স্পষ্ট নয়।
জরুরি বিভাগের এইচসিসিইউ (হাইব্রিড ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট), সিসিইউ (ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট)-তেও ভাঙচুর চালানো হয়।
এমনকি, তছনছ করে দেওয়া হয় ওষুধের স্টোররুমও। ওষুধ, ইঞ্জেকশন-সহ বাকি সামগ্রী মাটিতে ফেলে দেওয়া হয়। ভাঙা হয় ওষুধ রাখার ফ্রিজও।
ভেঙে ফেলা হয় জরুরি বিভাগের একাধিক বোর্ড এবং অ্যাডমিশন কাউন্টারের কাচ। সমস্ত জরুরি ফাইলও মাটিতে ফেলে দেওয়া হয়।
ভিতরের পাশাপাশি হামলা চালানো হয় হাসপাতালের বাইরেও। ভাঙচুর করা হয় পুলিশের একাধিক গাড়ি।
আহত হন বেশ কয়েক জন পুলিশকর্মী।
ভাঙচুর চালানো হয় আরজি করের পুলিশ ফাঁড়িতেও। সেখানে রাখা সব জিনিসপত্র তছনছ করে দেওয়া হয়। পাশাপাশি, পুলিশের কিয়স্কেও ভাঙচুর চালানো হয়।
ঘটনাস্থলে সীমিত সংখ্যক পুলিশকর্মী থাকলেও তাঁরা প্রাথমিক ভাবে পরিস্থিতি আয়ত্তে আনতে পারেননি। পরে বিশাল পুলিশবাহিনী পৌঁছয়।
নামানো হয় র্যাফ। তারা কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটিয়ে ভিড়কে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। গোটা সময় জুড়ে চলে ইটবৃষ্টি।
হামলাকারীদের একাংশকে তাড়া করে এলাকাছাড়া করে পুলিশ। কিন্তু তার পরেও পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট ছোড়া হয়। পুলিশের তাড়া খেয়ে একদল লোককে হাসপাতালের পাশের খালপাড় ধরে গলিপথে দৌড়তে দেখা যায়।
হামলার ঘটনার খবর পাওয়া মাত্রই ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল। ঘটনাস্থল ঘুরে ‘ক্রুদ্ধ’ সিপি বলেন, ‘‘ডিসি নর্থ প্রতিবাদকারীদের রক্ষা করতে গিয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন। তিনি অজ্ঞান হয়ে গিয়েছেন। এখানে যা হয়েছে তা ভুল প্রচারের জন্য। কলকাতা পুলিশ এই বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত।’’