এভারেস্টের ভিড় দেখলে খুশি হতেন না হিলারি

এই সমস্যা সমাধানের উপায়? পিটার বলছেন, ‘‘আরোহীদের সাধারণ বোধবুদ্ধিই একমাত্র সমাধান। কোনও নিয়ম-কানুনের বেড়াজালে পাহাড়কে বেঁধে দেওয়া ঠিক নয়।’’

Advertisement

স্বাতী মল্লিক

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০১৯ ০৪:৪৪
Share:

অভিযাত্রী: অনুষ্ঠানে পিটার হিলারি। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র

শুধু পর্বতারোহণই নয়। অন্যদের অ্যাডভেঞ্চারের জন্য উৎসাহ দিতেও জুড়ি ছিল না স্যর এডমন্ড হিলারির। নেপালের শেরপাদের পাশে দাঁড়াতেও চেষ্টার খামতি ছিল না তাঁর। কিন্তু এ বছর এভারেস্টের পথে জন-জটের ছবি দেখলে বাবা রীতিমতো দুঃখ পেতেন বলে মনে করছেন তাঁর ছেলে পিটার হিলারি। ১৯৫৩ সালে তেনজিং নোরগের সঙ্গে জুটি বেঁধে প্রথম এভারেস্টের শীর্ষে পৌঁছনো হিলারির জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে শহরে এক অনুষ্ঠানে এসে পিটার বললেন, ‘‘বাবা মনে করতেন, পাঁচ-দশ বছর ধরে পাহাড়কে চিনে-জেনে, শিক্ষানবিশি পর্যায় থেকে নিজেকে যথেষ্ট ভাল ভাবে দক্ষ করে নিয়ে তবেই এভারেস্টের পথে পা বাড়ানো উচিত আরোহীদের। তাতে শেরপা বা অন্যদের উপরে ততটা ভরসাও করতে হবে না।’’

Advertisement

এই সমস্যা সমাধানের উপায়? পিটার বলছেন, ‘‘আরোহীদের সাধারণ বোধবুদ্ধিই একমাত্র সমাধান। কোনও নিয়ম-কানুনের বেড়াজালে পাহাড়কে বেঁধে দেওয়া ঠিক নয়।’’

২০০৮ সালে ৮৮ বছর বয়সে প্রথম এভারেস্টজয়ীর মৃত্যুর পরে পিটার এক বার বলেছিলেন, ‘‘হিলারি পরিবারে বড় হওয়াটাই ছিল একটা অ্যাডভেঞ্চার।’’ সেই কথার রেশ তুলেই বাবার জন্মশতবর্ষের অনুষ্ঠানে বাবার সঙ্গে কাটানো ছেলেবেলা, পাহাড়ে যাওয়া, নেপালে স্কুল তৈরির কাজে হাত লাগানোর স্মৃতিচারণ করলেন পিটার। এভারেস্ট-নায়কের স্মৃতিচারণ করেন তাঁর বন্ধু এবং ১৯৭৭ সালে ‘ওশান টু স্কাই’ অভিযানের সতীর্থ জেমস উইলসনও। ‘দ্য টেলিগ্রাফ’ এবং ‘দ্য হিমালয়ান’ আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানের মঞ্চে দাঁড়িয়ে বছর চৌষট্টির পিটার বললেন, ‘‘স্কুলে ছুটি পড়লে কোথায় পৌঁছে যাব, তা কেউই আগে আঁচ করতে পারতাম না। বাবার মাথায় সব সময়ে অ্যাডভেঞ্চার ঘুরত। উনি যখন তাঁর ঐতিহাসিক অভিযানের গল্প বলতেন, আমরা ছোটরা হাঁ করে শুনতাম।’’

Advertisement

বাবার গল্পে মন্ত্রমুগ্ধ পিটার নিজেও পাহাড়কেই মন দিয়েছিলেন। দু’বার এভারেস্টে সফল আরোহণ, ৮৪ দিন হেঁটে দক্ষিণ মেরু পৌঁছনো, নীল আর্মস্ট্রংয়ের সঙ্গে উত্তর মেরুতে ছোট বিমান অবতরণের মতো একাধিক রোমহর্ষক অভিযানে অংশ নিয়েছেন। জানাচ্ছেন, ১৯৯০ সালে এভারেস্টের শীর্ষে ওঠার সেই ‘ম্যাজিকাল’ সময়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন। প্রথম এভারেস্ট জয়ের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ২০০৩ সালের এভারেস্ট অভিযানে সামিট থেকে বাবাকে ফোনে করেন তিনি। মজা করে এডমন্ড প্রশ্ন করেন, ‘হিলারি স্টেপ কেমন আছে?’

কেমন মানুষ ছিলেন এভারেস্টজয়ী নায়ক? ‘‘লক্ষ্য স্থির করা, টিম তৈরি করা এবং সেই লক্ষ্যে পৌঁছনো, এটা বাবা খুব ভাল পারতেন’’— বলছেন পিটার। তাই শুধু এভারেস্টে সফল আরোহণ করেই থামেননি এডমন্ড। মন দিয়েছিলেন শেরপাদের উন্নয়নে। ‘হিমালয়ান ট্রাস্ট’ নামে সংস্থা তৈরি করে নেপালের খুম্বু এলাকায় স্কুল-হাসপাতাল তৈরি করেন। যে কাজ এখনও করে চলেছে তাঁর পরিবার। পিটারের কথায়, ‘‘বাবা দেখিয়েছিলেন, তাঁর হৃদয় অনেক বড়। সেটাই তাঁর সব চেয়ে বড় সাফল্য।’’ তাই ২০১৫ সালের নেপাল ভূমিকম্পের সময়ে গোরখশেপে দাঁড়িয়ে পিটার চাক্ষুষ করেছিলেন প্রকৃতির রুদ্র রূপ। অনুভব করেছিলেন, এই সময়ে শেরপাদের পাশে বেশি করে দাঁড়ানো প্রয়োজন। পিটারের কথায়, ‘‘বাবা বলতেন, লক্ষ্যপূরণ করার চেয়েও বড়, অন্যদের লক্ষ্যপূরণে সাহায্য করা।’’

আর ভবিষ্যতের লক্ষ্য? পিটার জানান, আগামী বছর দুই ছেলে, ২৭ বছরের জর্জ ও ২৩ বছরের আলেকজান্ডারকে নিয়ে ফের এভারেস্টের পথে পা বাড়াতে পারেন তিনি। পরিবারের তৃতীয় প্রজন্ম আবারও ফিরতে পারে এভারেস্টের চেনা পথে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement