নজরে: গত বছর আগুন লাগার পরে লালকোঠিতে বিপজ্জনক নোটিস লাগিয়েছে পুরসভা। ছবি: সুমন বল্লভ
তখনও দাউদাউ করে জ্বলছিল বাড়িটা। ষাটোর্ধ্ব ফয়জল আরিফ ভগ্নপ্রায় বাড়িটার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে গল্প শোনাচ্ছিলেন ছেলেবেলার। দোতলার ‘বার্মা টিক’-এর বারান্দায় কোথায় প্রথম সাইকেল চালানো শিখেছেন, কোথায় তাঁর ঠাকুরদা বসে গল্প শোনাতেন— এই সব। হঠাৎ ভিড়ের দিকে তাকিয়ে চেঁচাতে শুরু করেন, ‘‘আরিফ পরিবারের শান, এই বাড়ি আর মাথা তুলবে না!’’
গত বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি আগুন লাগার পর থেকে দেড় বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও সত্যিই মাথা তোলেনি বড়বাজারের ৩, আমড়াতলা লেনের ‘লালকোঠি’। আগুন লেগে ভেঙে পড়া ছাদ পুনর্নির্মাণ হয়নি। সংস্কার হয়নি পোড়া অংশের। তবে ওই বাড়ির ঠিক পিছনেই বাগড়ি মার্কেটে শনিবার রাতে অগ্নিকাণ্ডের পরে হঠাৎই যেন তৎপরতা বেড়ে গিয়েছে ‘লালকোঠি’ নিয়ে।
রবিবার বাগড়ি মার্কেটের পোড়া জিনিস এনে স্তূপ করে রাখা হচ্ছে সেখানেই। তার মধ্যেই বাড়ির সদর আটকে পাহারায় ব্যস্ত কয়েক জন। বলছেন, ‘‘এই বাড়ি পুরসভা বন্ধ রাখতে বলেছে। নোটিস বোর্ডও ঝোলানো হয়েছে।’’ যদিও কয়েক মুহূর্ত আগেই দেখা গিয়েছিল, ওই বাড়িতে এসেই বরাত দেওয়া পণ্যের জন্য তাগাদা দিচ্ছেন এক ব্যক্তি। প্রশ্ন করায় তিনি জানালেন, এখান থেকেই ব্যবসা করেন পুরনো ব্যবসায়ীরা। পুরসভার নির্দেশের পরেও ভগ্ন বাড়িতে ব্যবসা চালানোর রহস্য বলে ফেলে সম্ভবত এই পাহারার ব্যবস্থা।
গত বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি আগুন লাগার সময়ে তিনতলা বাড়িটির একে বারে উপরের তলে কয়েকটি পরিবার থাকত। বাকিটা ব্যবহার হত ব্যবসার কাজে। মহম্মদ মোর্তাজা নামে বাড়ির এক পাহারাদার জানালেন, প্রায় ১৩০ জন ব্যবসায়ী ছিলেন বাড়িটিতে। ওই অগ্নিকাণ্ডের পরে প্রত্যেকেরই ব্যবসা ধাক্কা খেয়েছে। পুরসভার নির্দেশে বিপজ্জনক নোটিস ঝোলানো হয়েছে বাড়িতে। তাতে লেখা, ‘এই বাড়ি কেউ বসবাস বা ব্যবসার কাজে ব্যবহার করলে তার দায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির।’ তার পরেও ভগ্ন বাড়িতে ব্যবসার কাজ চলে কী করে? উত্তর নেই কারও কাছে।
কাছেই বড়বাজার থানা। দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ আধিকারিক এ দিন ব্যস্ত বাগড়ি মার্কেট নিয়ে। তার মধ্যেই বললেন, ‘‘কে কখন কোথায় ঢুকে পড়ছে বলতে পারব না।’’ অগ্নিকাণ্ডের পরেও হুঁশ ফেরেনি, ভাঙা বাড়ির নীচে চাপা পড়ে বিপদ ঘটলে আটকাবে কে? এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘মালিক আর ভাড়াটেদের মতের মিল হচ্ছে না। বাড়ি সংস্কারও তাই আটকে রয়েছে। ব্যবসা না থাকলে প্রাণ এমনিও বাঁচবে না। তাই ভাঙা বাড়িতেই কাজ করে চলেছি।’’