ফুড-পাথে সাবধান গরমে

মাথার উপরে গনগনে সূর্য। গলগল করে ঘাম বেরোচ্ছে। অফিসপাড়ার ফুটপাথে বিরিয়ানির দোকানের সামনে লম্বা লাইন।আর ওই বিরিয়ানি পেটে চালান করেই লাইন সরবতের দোকানে।

Advertisement

মেহবুব কাদের চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০১৭ ০১:৩৬
Share:

পেটপুরে: রাস্তার এই খাবার দেদার খাওয়াই ডেকে আনছে বিপদ। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

মাথার উপরে গনগনে সূর্য। গলগল করে ঘাম বেরোচ্ছে। অফিসপাড়ার ফুটপাথে বিরিয়ানির দোকানের সামনে লম্বা লাইন।

Advertisement

আর ওই বিরিয়ানি পেটে চালান করেই লাইন সরবতের দোকানে। চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ ঘেঁষা ম্যাডান স্ট্রিটের মোড়ে কাঠের গাড়িতে আঢাকা বরফের চাঁইয়ে মাছি ভনভন করছে। কলসির জলে সেই বরফ মিশিয়ে সরবতের গ্লাস এগিয়ে রাজু মণ্ডলের অভয়বাণী! ‘‘এটা দামি বরফ! যে-সে মাল নয়!’’

চাঁদনি চকের গলিতে একটি খাবারের স্টল আবার এই গরমে কড়ায় ছাঁকা তেলে ভেজে গরমাগরম চানা-বাটুরা খাওয়ানোর পণ করেছে। ডেকার্স লেনের বিরিয়ানি বা বি বা দী বাগ পাড়ার চাউমিনের কদরও নেহাত কম নয়। ডেকার্স লেনে মাটন বিরিয়ানি সাবাড় করতে করতে জনৈক পুলিশকর্মী লাজুক হাসলেন, ‘‘আসলে ডিউটির ফাঁকে তাড়াতাড়ি খেতে, এ-ই ভাল!’’

Advertisement

গরমে অনেকেই আবার ডিমের ঝোল, মেটের কষা, মাছ-মাংসের হাতছানি উপেক্ষা করে দই-লস্যি বা চিঁড়ে দইয়েরও খোঁজে বেরিয়েছেন। জমাটি পসার। ভরদুপুরে বেন্টিঙ্ক স্ট্রিটের এমনই এক দোকানে লম্বা লাইন। মার্কেটিং সংস্থায় কর্মী পাটুলির সুকান্ত মণ্ডল গোগ্রাসে চিঁড়ে-দই খেয়েই ‘লাঞ্চ’ সারলেন। ‘‘রোদ মাথায় ঘোরাঘুরির কাজে শরীরের দিকটা মাথায় রাখতেই হবে। গোটা গরমেই এই খাবার খাই।’’

ফুটপাথের খাবার বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল ‘স্বাস্থ্য সচেতন’ বাঙালি অফিসযাত্রীদের জন্য লস্যি, সরবত, চিঁড়ে-দই বিক্রির হার এখন এক লাফে অন্তত শতকরা ৬০ ভাগ বেড়ে গিয়েছে। যদিও তাতে পেটের রোগ থেমে থাকছে না।

কারণ, বিরিয়ানি, চানা-বাটুরা, চাউমিন, মেটে চচ্চড়ি তো আছেই, ফুটপাথের অজ্ঞাতকুলশীল দই কিংবা ফলের রসকেও একেবারেই নম্বর দিচ্ছেন না ডাক্তারবাবু বা পুষ্টিবিশারদেরা। ডায়েটিশিয়ান রেশমি রায়চৌধুরীর ব্যাখ্যা, ‘‘ফলের রস গরমে পচে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। মশলা মিশিয়ে সেই গন্ধটা কোনও মতে চাপা দিয়ে যদি বিক্রি হয়, অনেকে ধরতেই পারবেন না। যা টের পাওয়ার পাবেন পরে।’’ কম ক্যালরির দই-চিঁড়ে দোষটা কী করল? ফুটপাথের পসরার দইয়ের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে ওঠা প্রশ্নই চিকিৎসকদের ভাবাচ্ছে। গরমে সরবত, দই-টই আপাত স্বস্তির বলে মনে হলেও তা বুঝে খাওয়া উচিত বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞেরা।

শহরের ‘ফুডপাথ’-এর বিচিত্র রসনা-আবেগ তবু দমবার লক্ষণ নেই। ফুটপাথের ডিমের ঝোল, মেটের কষা, মাছ-মাংস গোছের রান্না খাবার সহজপাচ্য কি না, প্রশ্ন থাকছেই। চিকিৎসক অরিজিৎ রায়চৌধুরীর কথায়, ‘‘গরমে কাহিল দশায় খাবার হজম হতে সময় লাগে। গুরুপাক খাবার না-খাওয়াই ভাল।’’ তা ছাড়া, কলকাতার ৩৬-৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে জীবাণুদের বাড়বাড়ন্তেরও অনুকূল পরিবেশ বলে মনে করেন অরিজিৎবাবু। পেটের গোলমাল থেকে জন্ডিস বাধানোর ভয় থাকেই।

সমস্যা নানা রকমের। রোলের মশলামাখা মাংস, লুচি-পরোটা-বাটুরার ময়দামাখা, পেঁয়াজি-বেগুনির বেসনগোলা অনেক ক্ষণ পড়ে থেকে পচে যেতে পারে। তাই সেগুলি বিপজ্জনক বলে মনে করেন রেশমি। অথচ গরম ভেজে দিলে চট করে ধরা পড়বে না। এই পচে যাওয়ার ভয় থাকলেও দইবড়া, দোসার মতো খাবার খানিক সহজপাচ্য বলে ডাক্তার-পুষ্টিবিশারদদের কাছে ‘বেনিফিট অব ডাউট’ পেলেও পেতে পারে। লোকে তাহলে খাবেটা কী? অরিজিৎবাবু বা রেশমির ভোট, আস্ত ফল সঙ্গে সঙ্গে কেটে খাওয়ার দিকে। তা ছাড়া মুড়ি-টুড়িও চলতে পারে। অবশ্য তাতে স্বাস্থ্য সুরক্ষিত হলেও পেট কতটা ভরবে, সে নিয়ে সংশয় রয়েছে অনেকেরই।

রসনা-বিলাসে অতএব খানিক বিরতি, সুস্থ থাকতে ‘স্ট্রিট ফুড’-এ সংযমেরই পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement