প্রতীকী ছবি।
এক প্লেট খাবারের বরাত দিলে বিনামূল্যে মিলবে আরও এক প্লেট! উৎসবের মরসুমে খাবারের এ হেন ‘অফার’-এর ফাঁদে পড়েই সব চেয়ে বেশি প্রতারিত হয়েছেন কলকাতার বাসিন্দারা। কলকাতা পুলিশ সূত্রে তেমনটাই খবর। এর পরেই রয়েছে পুজোর ছুটিতে কোথাও বেড়াতে যাওয়ার জন্য টাকা দিয়ে প্রতারণা-চক্রের ফাঁদে পড়া এবং অনলাইনে পোশাক বা প্রসাধনী সামগ্রী কিনতে গিয়ে প্রতারিত হওয়া। এর সঙ্গে তালিকায় এ বার যুক্ত হয়েছে ভাল হোটেলে রেখে শহর ঘুরিয়ে দেখানোর নামে ভিন্ রাজ্যের বাসিন্দাদের ভুয়ো পুজোর পাস বিক্রির অভিযোগও।
কলকাতা পুলিশ সূত্রের খবর, গত এক মাসে তাদের এলাকাতেই প্রায় সাড়ে তিনশোর বেশি প্রতারণার অভিযোগ দায়ের হয়েছে। যার মধ্যে ১৮৩টিই সাইবার অপরাধের তালিকাভুক্ত। বিধাননগর এবং ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেট এলাকায় এমন অভিযোগের সংখ্যা যথাক্রমে ১৯৬ ও ১৭৮টি। মোট অভিযোগের প্রায় ৯৫ শতাংশই পুজোর ছাড়ের নাম করে প্রতারণা সংক্রান্ত বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। সব ক’টি অভিযোগ ধরলে খোয়া গিয়েছে প্রায় ৬৫ লক্ষ টাকা! যা গত কয়েক বছরে পুজোর ক’দিনে দায়ের হওয়া অভিযোগের থেকে বেশি। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, গত এক বছর ধরে সাইবার অপরাধ নিয়ে লাগাতার সচেতনতার কর্মসূচি চললেও তাতে আদৌ কি কোনও কাজ হচ্ছে?
বরাহনগর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন বিশ্বজিৎ বসাক নামে এক ব্যক্তি। তাঁর দাবি, ‘‘পুলিশ তো ফোনে আসা ওটিপি বা ব্যাঙ্ক সংক্রান্ত তথ্য কাউকে দিতে বারণ করে। তা না দিয়েও আমি প্রতারিত হয়েছি।’’ তাঁর দাবি, একটি খাবারের সংস্থার নাম করে তাঁকে ফোন করে জানানো হয়, এক প্লেট খাবারের বরাত দিলে বিনামূল্যে মিলবে আরও এক প্লেট। অফারটি পেতে ফোনে একটি অ্যাপ ডাউনলোড করতে বলা হয়। সেই অ্যাপ নামিয়ে তাতে নিজের নাম-পরিচয় লিখতেই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে ২৫ হাজার টাকা কেটে নেওয়া হয়। একই দাবি শোভাবাজারের অতীন ঘোষালের। অষ্টমীর রাতে পোলাও-মাংসের অফারের কথা জানাতে এক নামী খাবারের সংস্থার ফোন আসে তাঁর কাছে। বাড়ির সকলের জন্য অফারে সেই পোলাও-মাংসের বরাত দেন তিনি। খাবার তো আসেইনি, উল্টে সংস্থার পাঠানো অ্যাপ ডাউনলোড করে অফার নিতে গিয়ে খোয়া গিয়েছে ৯৮ হাজার টাকা। অতীনবাবু বললেন, ‘‘পাঁচ প্লেট পোলাও-মাংস ৫৫০ টাকায় পেতে গিয়ে ৯৮ হাজার টাকা খুইয়েছি। পুলিশ উদ্ধার করে দিতে পারবে কি না জানি না।’’
যাদবপুরের সৃঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের আবার দাবি, একটি খাবারের সংস্থা থেকে খাবার আনানোর ৩০ মিনিটের মধ্যে তাঁর কাছে ফোন আসে। বলা হয়, ওই খাবারই আরও দু’প্লেট বিনামূল্যে পাবেন। প্রথমে সে কথা জানাতে তারা ভুলে গিয়েছিল। একটি অ্যাপ ডাউনলোড করলেই অফার পাবেন বলা হয়। সেই পথে হেঁটে ১ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা খোয়া গিয়েছে তাঁর।
একই ভাবে পুজোর সময়ে একটি সংস্থার কাছ থেকে পুরুলিয়ায় ঘুরতে যাওয়ার জন্য কম টাকার অফার পেয়ে সেই পথে এগিয়ে ৬০ হাজার টাকা খোয়া গিয়েছে নরেন সেন নামে বেলেঘাটার এক বাসিন্দার। কাশীপুরের বাসিন্দা সুমিত সিংহ নামে এক ব্যক্তির আবার অভিযোগ, ৪০ হাজার টাকা নিয়ে তাঁকে ধরানো হয়েছে কাশ্মীরের ভুয়ো টিকিট এবং হোটেলের বিল! সব ক’টিই ঘটেছে অনলাইন লেনদেনের সময়ে। শ্যামপুকুরের শ্রীলেখা ঘোষের আবার দাবি, একটি সংস্থার কাছ থেকে পুজোর শাড়ির বরাত দিয়েছিলেন তিনি। ১৫ হাজার টাকার বরাত দিলে একটি নামী সংস্থার প্রসাধনী সামগ্রী বিনামূল্যে দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। তাঁর কথায়, ‘‘প্রসাধনী ছেড়ে দিন, শাড়িও আসেনি। উল্টে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে ৪৫ হাজার টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে।’’
এ বিষয়ে লালবাজারের এক পুলিশকর্তার মন্তব্য, ‘‘এই নতুন প্রতারণা-চক্র অভিনব সব পথ বার করছে। যে কোনও ধরনের অ্যাপ ডাউনলোড করার আগে ভাল করে খতিয়ে দেখে নিতে বলছি আমরা।’’